ইলেকট্রন মতবাদ অনুসারে প্রত্যেক পদার্থই অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। এদের নাম পরমাণু (Atom)। কোনো নির্দিষ্ট পদার্থের সব পরমাণু গুলো একই ধরনের, কিন্তু বিভিন্ন পদার্থের পরমাণু বিভিন্ন ধরনের হয়। হাইড্রোজেন ছাড়া প্রত্যেকটি পদার্থের পরমাণু তিনটি কণিকার সমবায়ে গঠিত। এই কণিকা তিনটির নাম ইলেকট্রন (Electron) প্রোটন (Proton) এবং নিউটন (Neutron)।
প্রত্যেক পরমাণুর কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট ভর থাকে, এর নাম পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস (Nucleus)। নিউক্লিয়াস প্রোটন এবং নিউট্রন কণা দ্বারা গঠিত। প্রত্যেক প্রোটন ধনাত্নক চার্জ বহন করে। নিউট্রন তড়িৎ নিরপেক্ষ অর্থাৎ এর কোনো চার্জ নেই। সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে যেমন গ্রহগুলো ঘোরে, তেমনি নিউক্লিয়াসের চারদিকে বিভিন্ন দূরত্বে নির্দিষ্ট কক্ষে (orbit) ইলেকটন অবস্থান করে এবং ঘুরে।
মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক ইলেকট্রন ঋণাত্নক চার্জ বহন করে। একটি ইলেকট্রন বা প্রোটনের চার্জই ন্যূনতম চার্জের হিসাব। একটি ইলেকট্রন বা প্রোটনের চার্জের পরিমাণ = -1.602 × 10-19 C। কোনো চার্জিত বস্তুতে চার্জের পরিমাণ সর্বদাই একটি ইলেকট্রন বা প্রোটনের চার্জের পূর্ণ গুণিতক হয়। বিভিন্ন মৌলের পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা বিভিন্ন থাকে।
কোনো পরমাণুতে প্রোটন এবং ইলেকট্রনের সংখ্যা সমান। যেহেতু এদের পরস্পরের চার্জ সমান এবং বিপরীতধর্মী, অতএব স্বাভাবিক অবস্থায় পরমাণু তড়িৎ নিরপেক্ষ (electrically neutral)। হাইড্রোজেনের পরমাণুতে 1টি প্রোটন (p+) এবং দুটি ইলেকট্রন (e-) থাকে। সোডিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে 11টি প্রোটন এবং 12টি নিউটন থাকে। এর বিভিন্ন কক্ষে 11টি ইলেকট্রন ঘুরে। প্রোটন এবং ইলেকট্রন এক্ষেত্রে তড়িৎ বল দ্বারা আকৃষ্ট হয়।
নিউক্লিয়াসের বাইরে পরমাণুর যেকোনো কক্ষে সর্বাধিক 2n2 টি ইলেকট্রন থাকে। যেমন, সোডিয়াম পরমাণুর প্রথম কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা = 2 × 12 = 2 টা। দ্বিতীয় কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা = 2 × 2 = 8 টা ইত্যাদি। ভেতরের কক্ষগুলো ইলেকট্রন দ্বারা সম্পৃক্ত হবার পর অবশিষ্ট ইলেকট্রন দূরবর্তী কক্ষে পরিভ্রমণ করে। এ সমস্ত ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল খুবই কম বলে তারা মোটামুটিভাবে নিউক্লিয়াসের বন্ধন হতে মুক্ত। এ সমস্ত ইলেকট্রনকে মুক্ত ইলেকট্রন (Free electrons) বলে। ধাতব পদার্থে প্রচুর পরিমাণ মুক্ত ইলেকট্রন থাকার ফলে এগুলো তড়িৎ সুপরিবাহী।
কোনো নিষ্ক্রিয় পরমাণু হতে ইলেকট্রন নির্গত হলে পরমাণু ধনাত্নক চার্জযুক্ত হয়। এ অবস্থাকে বলা হয় ধনাত্মক তড়িতাহিত হওয়া এবং পরমাণুতে ইলেকট্রন যুক্ত হলে ঋণাত্নক চার্জযুক্ত হয় এ অবস্থাকে বলা হয় ঋণাত্মক তড়িতাহিত হওয়া। যেমন সোডিয়াম একটি ইলেকট্রন দান করে Na+ আয়ন এবং ক্লোরিন ঐ ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cl– আয়ন বানায়। এভাবে NaCl (সোডিয়াম ক্লোরাইড) অণু গঠন হয়।
ঘর্ষণজনিত তড়িৎ (Electricity due to Friction)
স্বাভাবিক অবস্থায় একটি পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকায় পরমাণুটি তড়িৎ নিরপেক্ষ থাকে। কয়েকটি নিষ্ক্রিয় পরমাণু (যেমন, হিলিয়াম নিয়ন, আর্গন ইত্যাদি) ছাড়া সকল পরমাণুরই বাইরের কক্ষপথে প্রয়োজনের তুলনায় কম ইলেকট্রন থাকে। ফলে এদের ইলেকট্রনের প্রতি আসক্তি (affinity) থাকে। এই আসক্তির পরিমাণ সকল বস্তুতে এক নয়; কারও বেশি, কারও কম। তাই দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণ করলে যার আসক্তি বেশি সে বস্তু অপর বস্তু হতে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক চার্জে আহিত হয় এবং যে বস্তু হতে ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেটি ইলেকট্রন হারিয়ে ধনাত্মক চার্জে আহিত হয়।
কাচ দণ্ডকে রেশমী কাপড় দ্বারা ঘর্ষণ করলে রেশমের ইলেকট্রন আসক্তি কাচের চেয়ে বেশি হওয়ায় এটি কাচদণ্ড হতে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক চার্জে এবং কাচদণ্ড ইলেকট্রন হারিয়ে ধনাত্মক চার্জে আহিত হয়।
আবার ইবোনাইট দণ্ডকে ফ্লানেল কাপড় দ্বারা ঘর্ষণ করলে ফ্লানেল কাপড়ের ইলেকট্রন আসক্তি ইবোনাইটের চেয়ে কম হওয়ায় এটি হতে ইলেকট্রন ইবোনাইট গ্রহণ করে ঋণাত্মক চার্জে এবং ফ্লানেল কাপড় ইলেকট্রন হারিয়ে ধনাত্মক চার্জে আহিত হয়। এটিই ঘর্ষণজনিত তড়িতের ব্যাখ্যা।
‘‘তোমরা পরস্পরের অনুপস্থিতিতে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণা করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (আল-কুরআন, সূরা : হুজরাত)
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আয়নিক বন্ধন (Ionic bond)
- ইলেকট্রন বিন্যাসের নীতি (Rules of Electronic Configuration)
- ইলেকট্রনের তাড়ন বেগ (Drift Velocity of Electron)
- ডালটনের পারমাণবিক মতবাদ (Dalton’s Atomic Theory)
- তড়িতের উৎপত্তি (Origin of Electricity)
- তড়িতের প্রকারভেদ (Types of Electricity)
- তড়িৎ আবেশ (Electrostatic Induction)
- তড়িৎ ক্ষেত্র (Electric Field)
- তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য (Electric Field Intensity)
- তড়িৎ প্রাবল্য ও তড়িৎ বিভবের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between Electric Intensity and Electric Potential)
- তড়িৎ বলরেখা (Electric Lines of Force)
- তড়িৎ বা বিদ্যুৎ প্রবাহ (Flow of Current or Electricity)
- তড়িৎ বিভব (Electric Potential)
- থমসন পরমাণু মডেল (Thomson Atomic Model)
- পরমাণুতে প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন সংখ্যার সম্পর্ক (Relation of number of Protons, Electrons and Neutrons in an Atom)