তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র

যে যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুতে চার্জের অস্তিত্ব, প্রকৃতি এবং পরিমাণ জানা যায়, তাকে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র বলে। শুধু তাই নয়, এই যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন পদার্থের তড়িৎ পরিবাহিতার তুলনামূলক পরীক্ষাও করা যায়।

তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র দুই প্রকার-

১. শোলাবল তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র (Pith-Ball Electroscope) এবং

২. স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র (Gold-Leaf Electro Electroscope)

এখানে আমরা স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের গঠন এবং কার্যপদ্ধতি নিয়ে জানবো।

 

স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র

এই যন্ত্রটি শোলাবল তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র অপেক্ষা অধিক সূক্ষ্ম এবং সুবেদী। এই যন্ত্রের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি করা হয়।

এই যন্ত্রে পিতলের তৈরি একটি দণ্ড থাকে। এ দন্ডের নিচের প্রান্তে সোনার পাতলা পাত লাগানো থাকে। পাত দুটি সোনার না হয়ে অ্যালুমিনিয়াম বা অন্য ধাতুরও হতে পারে।

দন্ডের এক প্রান্তে স্ক্রু যুক্ত একটি ধাতব চাকতি (Disc) থাকে৷ পাতসহ দন্ডের নিচের প্রান্তে একটি কাচ পাত্র-এর মধ্যে স্থাপন করে পাত্রের মুখ একটি অপরিবাহী ছিপি দিয়ে বন্ধ করা হয়। ছিপির ছিদ্র দিয়ে দন্ডটি বাইরে বেরিয়ে আসে। কাচ পাত্র সোনার পাত দুটিকে ধুলাবালি হতে রক্ষা করে। সোনার পাত দুটির বিপরীত দিকে টিনের পাত কাচ পাত্রের গায়ে খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। সোনার পাত মাটি বা পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত এবং এটি যন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভেতরের বাতাসকে শুষ্ক রাখার জন্য পাত্রের মধ্যে অপর একটি জায়গায় কিছু পরিমাণ পানি নিরোধক বস্তু (Dehydrating agent) যেমন H2SO4 বা CaCl2 রাখা হয়। কারণ বায়ু আর্দ্র হলে তড়িৎ সেই বায়ুতে চলে যায়, ফলে জায়গাটা Discharge হয়ে যায়। পরীক্ষাকালে যন্ত্রের তলদেশ ভূমির সাথে সংযুক্ত করা হয়।

 

ব্যবহার

চার্জের অস্তিত্ব নির্ণয় : কোনো বস্তুকে একটি অন্তরক যুক্ত হাতলের সাহায্যে ধরে অচার্জিত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতির নিকট ধরে রাখবো, কিংবা স্পর্শ করাবো। যদি তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের সোনার পাত দুটি সরে যায় তবে বুঝতে হবে যে, বস্তুটিতে চার্জ আছে। আর যদি পাত দুটি ফাঁক না হয়, তবে বুঝতে হবে যে, চার্জ নেই। অতএব চার্জের অস্তিত্ব এভাবে প্রমাণ করা যায়।

চার্জের প্রকৃতি নির্ণয় : একটি চার্জিত স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র নিবো। এটি ধনাত্নক চার্জে বা ঋনাত্নক চার্জে চার্জিত হতে পারে। এবার পরীক্ষাধীন বস্তুকে একটি অন্তরক যুক্ত হাতলের সাহায্যে ধরে দূর হতে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতির নিকট আনবো। যদি সোনার পাত দুটির ফাঁক বেড়ে যায়, তবে বুঝতে হবে বস্তুটি এবং তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রটি এক জাতীয় চার্জে চার্জিত। আর পাত দুটির ফাঁক যদি কমে যায় তবে বুঝতে হবে যে, বস্তুটি ও তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রটি বিপরীতধর্মী চার্জে চার্জিত। অতএব এর মাধ্যমে চার্জের প্রকৃতি বের করা যায়।

চার্জের পরিমাণ নির্ণয় : একটি অচার্জিত স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র নিবো। এবার পরীক্ষাধীন বস্তুটি অন্তরক যুক্ত হাতলের সাহায্যে ধরে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতির নিকট আনবো। সোনার পাত দুটির ফাঁক বেশি হলে বুঝতে হবে যে, বস্তুতে চার্জ বেশি আছে। আর ফাঁক কম হলে বুঝতে হবে যে, বস্তুতে চার্জের পরিমাণ কম। যদি চার্জের পরিমাণ Q হয় এবং পাত দুটির ফাঁক θ হয়, তবে Q ~ θ.

বিভিন্ন পদার্থের তড়িৎ পরিবাহিতার তুলনা : কোনো সুপরিবাহী বস্তুকে একটি চার্জিত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতিতে স্পর্শ করালাম। এতে যন্ত্রের সোনার পাত দুটির ফাঁক খুব দ্রুত কমে যাবে। কিন্তু অর্ধপরিবাহী বস্তুকে চার্জিত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতিতে স্পর্শ করালে পাত দুটির ফাঁক আস্তে আস্তে কমবে। আবার অপরিবাহী কোনো বস্তু দ্বারা তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের পাত দুটোকে স্পর্শ করালে সোনার পাত দুটির ফাঁকের কোনো পরিবর্তন হবে না। কাজেই সোনার পাতের ফাঁক কিভাবে কমছে কি কমছে না, তা লক্ষ করে মোটামুটিভাবে বিভিন্ন পদার্থের তড়িৎ পরিবাহীতার একটি তুলনামূলক ধারণা পাওয়া যায়।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool