তড়িৎ আবেশ

কোনো একটি পদার্থকে তিনটি উপায়ে চার্জিত করা যায়-

  • ঘর্ষণ দ্বারা (By friction),
  • পরিবহণ দ্বারা (By conduction) এবং
  • আবেশ দ্বারা (By induction)

একটি কাচ দন্ডকে রেশমী কাপড় দ্বারা ঘর্ষণ করলে চার্জ উৎপন্ন হয়। এর নাম ঘর্ষ তড়িৎ। কাজেই ঘর্ষণ প্রক্রিয়ায় বস্তুতে চার্জ বা তড়িৎ উৎপন্ন করলে ঐ তড়িৎকে ঘর্ষ তড়িৎ বলে। আবার একটি চার্জিত পরিবাহী একটি অচার্জিত পরিবাহীকে স্পর্শ করলে চার্জিত পরিবাহীর চার্জের কিছু অংশ অচার্জিত পরিবাহীতে চলে যায়। এটি হচ্ছে পরিবহণ দ্বারা চার্জিত করার প্রক্রিয়া। এভাবে স্পর্শের দ্বারা সৃষ্ট চার্জকে পরিবাহিত চার্জ (conducted charge) বলে। এখানে প্রভাবী বস্তুকে আবেশী বস্তু (Inducing body) এবং এর চার্জকে আবেশী চার্জ (Inducing charge) বলে। আর প্রভাবিত বস্তুকে আবিষ্ট বস্তু (Induced body) এবং এর চার্জকে আবিষ্ট চার্জ Induced charge) বলে। আবেশী বস্তুটিকে সরিয়ে নিলে আবিষ্ট বস্তুটি চার্জশূন্য হয়ে পড়ে। এ প্রক্রিয়াকে তড়িৎ আবেশ বলে।

কোনো একটি চার্জিত বস্তুকে একটি অচার্জিত পরিবাহীর নিকটে এনে চার্জিত বস্তুর প্রভাবে অচার্জিত পরিবাহীকে অস্থায়ীভাবে চার্জিত করার পদ্ধতিকে তড়িৎ আবেশ বলে। বিজ্ঞানী স্টিফেন গ্রে তড়িৎ আবেশ আবিষ্কার করেন।

একটা পরীক্ষার মাধ্যমে তড়িৎ আবেশ ব্যাখ্যা করবো এখন আমরা।

একটি ইবোনাইট দণ্ড নিবো। একে ফ্লানেল কাপড় দ্বারা ঘর্ষণ করে এর মধ্যে চার্জ স্থাপন করবো। এবার দন্ডকে অচার্জিত স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতির নিকট ধরলে দেখা যাবে যে স্বর্ণপাত দুটি ফাঁক হয়ে গেছে।

এই পরীক্ষা হতে প্রমাণিত হয় যে, কাচ দন্ডের চার্জের প্রভাবে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রটি চার্জিত বা তড়িগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু কাচ দণ্ডটি সরিয়ে নিলে স্বর্ণপাত দুটির ফাঁকা বন্ধ হয়ে যাবে। এটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কেবল চার্জিত বস্তুর উপস্থিতিতেই অচার্জিত বস্তুতে চার্জের সৃষ্টি হয়। এটিই তড়িৎ আবেশ।

বিখ্যাত বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে তাঁর প্রসিদ্ধ বরফ পাত্র (Ice pail) পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ করেন যে (বিশেষ ক্ষেত্রে) আবেশী এবং আবিষ্ট চার্জের পরিমাণ সমান ও বিপরীত।

 

তড়িৎ আবেশের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Electrostatic Induction)

  • আবিষ্ট পদার্থের যে প্রান্ত আবেশী বস্তুর নিকটবর্তী, ঐ প্রান্তে আবেশী চার্জের বিপরীতধর্মী এবং অপরপ্রান্তে বা দূরের প্রান্তে সমধর্মী চার্জ উৎপন্ন হয়।
  • আবিষ্ট পদার্থের মধ্যাংশ চার্জহীন থাকে।
  • আবিষ্ট পদার্থের দুই প্রান্তে সম পরিমাণ বিপরীতধর্মী চার্জ উৎপন্ন হয়।
  • আবেশী চার্জ সরিয়ে ফেললে আবিষ্ট চার্জ নষ্ট হয়ে যায়।
  • নিকটবর্তী প্রান্তে বদ্ধ চার্জ এবং দূরবর্তী গ্রান্তে মুক্ত চার্জ উৎপন্ন হয়।
  • আবিষ্ট চার্জের পরিমাণ আবিষ্ট বস্তু ও আবেশী চার্জের মধ্যবর্তী দূরত্বের উপর নির্ভর করে।
  • দূরত্ব বাড়লে আবিষ্ট চার্জের পরিমাণ কমে যায়।

আবিষ্ট চার্জ কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

  • আবেশী চার্জের পরিমাণ,
  • আবিষ্ট বস্তুর ক্ষেত্রফল ও প্রকৃতি,
  • আবেশী বস্তু হতে আবিষ্ট বস্তুর দূরত্ব,
  • আবেশী ও আবিষ্ট বস্তুর মধ্যবর্তী মাধ্যম,
  • অপর কোনো পরিবাহীর সান্নিধ্য এবং
  • আবিষ্ট বস্তু ভূ-সংযুক্ত, না ভূ-সংযুক্ত না সেটার উপর নির্ভর করে।

বদ্ধ আধান ও মুক্ত আধান (Closed Charge and Free Charge)

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে আবেশী চার্জের প্রভাবে আবিষ্ট চার্জ তৈরি হয়। আবিষ্ট পদার্থের যে প্রান্ত আবেশী বস্তুর নিকটবর্তী, ঐ প্রান্তে আবেশী চার্জের বিপরীতধর্মী চার্জ তৈরি হয়। আবেশী চার্জের আকর্ষণের কারণে আবিষ্ট চার্জগুলো স্থান ত্যাগ করতে পারে না বলে এগুলো বন্ধ চার্জ। তাই-

আবেশের কারণে কোনো আবিষ্ট বস্তুর নিকট প্রান্তে তৈরি হওয়া আবিষ্ট চার্জকে বন্ধ চার্জ বলে।

আবিষ্ট পদার্থের যে প্রান্ত আবেশী বস্তু থেকে দূরে থাকে, সে প্রান্তে আবেশী চার্জের সমধর্মী চার্জ উৎপন্ন হয়। এ দূরের প্রান্তকে স্পর্শ করলে বা মাটির সাথে যুক্ত করলে আবেশী চার্জের বিকর্ষণে আবিষ্ট চার্জ সেই জায়গা ছেড়ে মাটিতে চলে যায়। এগুলো মুক্ত চার্জ। তাই-

আবেশের জন্য কোনো আবিষ্ট বস্তুর দূরের প্রান্তের আবিষ্ট চার্জকে মুক্ত চার্জ বলে।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool