তুমি যেকোনো জিনিস পরিমাপ করতে যাও না কেন, সেটিকে পুরোপুরি 100% সঠিক ভাবে পরিমাপ করতে পারবে না। খুব সামান্য পরিমাণ হলেও সেখানে ত্রুটি থাকবে। যেমন তুমি যদি তোমার উচ্চতা একটা ফিতার সাহায্যে 5 ফুট 7 ইঞ্চি মাপো, তবে তোমার সত্যিকারের উচ্চতা আসলে তা হবে না। তার চেয়ে খুব সামান্য পরিমাণ কম-বেশি হবে। কেননা পৃথিবীতে কোনো পরিমাপক যন্ত্র পুরোপুরি বিশুদ্ধভাবে তৈরি করা যায় না। তাই যে কোনো ভৌত রাশির পরিমাপ প্রকৃতিগতভাবে শুদ্ধ পাওয়া যায় না। কিছু না কিছু ভুল থাকে যাকে ত্রুটি বলে। তাই পরিমাপের ক্ষেত্রে ত্রুটিকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হয়।
পদার্থ বিজ্ঞানে ত্রুটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-
- যান্ত্রিক ত্রুটি (Instrumental Error)
- পর্যবেক্ষণমূলক ত্রুটি (Observational Error)
- এলোমেলো ত্রুটি
- পুনরাবৃত্তিক ত্রুটি
যান্ত্রিক ত্রুটি
যান্ত্রিক ত্রুটি বলতে কোনো পরিমাপক যন্ত্রের সমস্যাকে বোঝায়। অর্থাৎ কোনো পরিমাপক যন্ত্রের যদি সমস্যা থাকে তবে সেটি কোনো ভৌত রাশিকে বিশুদ্ধভাবে মাপতে পারে না। যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবার দুটি ভাগ থাকে, যেমন- শূন্য ত্রুটি (Zero Error) এবং পিছট ত্রুটি (Backlash Error)।
শূন্য ত্রুটি
যখন কোনো পরিমাপক যন্ত্রের সাথে যুক্ত প্রধান স্কেলের শূন্য দাগ এবং ভার্নিয়ার স্কেল বা বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ না মিলে তখন সেই ত্রুটিকে শূন্য ত্রুটি বলে। আমরা স্ক্রু গজ, স্লাইড ক্যালিপার্স ইত্যাদি পরিমাপক যন্ত্রের সাথে ভার্নিয়ার স্কেল বা বৃত্তাকার স্কেলকে যুক্ত করে থাকি। এই দুই ধরনের স্কেলের মধ্যেই শূন্য দাগ থাকে। যদি এই দুটি শূন্য দাগ না মেলে তবে তাদের ত্রুটিকে শূন্য ত্রুটি বলা হয়।
শূন্য ত্রুটি আবার দুই ধরনের হয়- ধনাত্মক ত্রুটি (Positive Error) এবং ঋণাত্মক ত্রুটি (Negative Error)।
ভার্নিয়ার স্কেল বা বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ যদি প্রধান স্কেলের বাম দিকে বা আগে থাকে তবে সেই ত্রুটিকে ধনাত্মক ত্রুটি বলে। আবার যদি ভার্নিয়ার স্কেল বা বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ যদি প্রধান স্কেলের ডান দিকে বা পরে থাকে তবে সেই ত্রুটিতে ঋণাত্মক ত্রুটি বলে।
আমরা একটা ভার্নিয়ার স্কেলের জন্য ত্রুটিহীন অবস্থা, ধনাত্নক ত্রুটি এবং ঋণাত্মক ত্রুটি দেখি-
এবার আমরা একটা স্ক্রু গজের জন্য ত্রুটিহীন অবস্থা, ধনাত্নক ত্রুটি এবং ঋণাত্মক ত্রুটি দেখি-
পিছট ত্রুটি
কিছু পরিমাপক যন্ত্রের মধ্যে নাট-বল্টু-স্ক্রু এগুলো রয়েছে। অনেক দিন এসব পরিমাপক যন্ত্রকে ব্যবহারের ফলে নাট-বল্টু-স্ক্রু এর খাঁজ গুলো ক্ষয় হতে থাকে। ফলে স্ক্রুকে উভয় দিকে ঘুরালে সমান পরিমাণ জায়গায় সে যেতে পারে না। এই ধরনের ত্রুটিকে পিছট ত্রুটি বলে। তবে এসব যন্ত্র থেকে রিডিং বা পাট নেওয়ার সময় যন্ত্রকে একই দিকে ঘুরালে এই ত্রুটি দূর হয়। যেমন স্ক্রু গজের মধ্যে একটা স্ক্রু থাকে যেটিকে আবর্তন করে বৃত্তাকার স্কেল ঘুরতে পারে। এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে পিছট ত্রুটি দেখা যায়-
পর্যবেক্ষণমূলক ত্রুটি
এই ধরনের ত্রুটি গুলো ঘটে যেসকল ব্যক্তিরা বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ করে তার জন্য। এই ত্রুটির মধ্যেও একটা ভাগ হচ্ছে লম্বন ত্রুটি বা Parallax Error।
লম্বন ত্রুটি
আমরা কোন ব্যুরেট বা টেস্ট টিউব এর মধ্যে থাকা তরল পদার্থের আয়তনের যদি রিডিং নিতে চাই তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে তাকালে বিভিন্ন রিডিং দেখতে পাবো। কিন্তু যদি আমরা লম্বভাবে সেই তরলের দিকে বাইরে থেকে তাকাই তবে সঠিক রিডিং পাবো। অর্থাৎ লক্ষ্যবস্তু এবং স্কেলের সাথে যদি পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি লম্বভাবে না থেকে আড়াআড়িভাবে থাকে তবে এই ধরনের ত্রুটিকে লম্বন ত্রুটি বলে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- ঘর্ষণ বল কাকে বলে
- তাপমাত্রার বিভিন্ন স্কেলের মধ্যে সম্পর্ক
- পরম তাপমাত্রা স্কেল
- পরমশূন্য তাপমাত্রা কাকে বলে
- পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বা আপেক্ষিক ভেদ্যতা
- পরিবাহিতা, আপেক্ষিক পরিবাহিতা ও অতিপরিবাহিতা
- পরিমাপের যন্ত্রপাতি
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া
- ভরবেগের নিত্যতা সূত্রের উদাহরণ
- ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
- ভার্নিয়ার স্কেল
- সমবিভব তল
- সমান্তরাল পাত ধারক
- স্লাইড ক্যালিপার্স
- হুইটস্টোন ব্রীজ