জৈব যৌগের আধিক্যতা নিয়ে জানতে হলে কার্বন পরমাণুর যোজ্যতা সম্পর্কে আগে জানা লাগবে।
আমরা প্রথমে কার্বনের ইলেকট্রন বিন্যাস দেখি-
C (6) = 1s2 2s2 2p2
or, C (6) = 1s2 2s2 2px1 2py1 2pz0
এখানে দেখা যাচ্ছে, কার্বন পরমাণুর শেষ কক্ষপথে থাকা p উপশক্তিস্তরে ২টা ইলেকট্রন আছে এবং 2pz উপস্তরে কোনো ইলেকট্রন নাই।
যখন কার্বন পরমাণু বিক্রিয়াতে অংশ নেয় কিংবা তাকে যখন তাপ/চাপ দিয়ে উত্তেজিত করা হয়, তখন কার্বন পরমাণুর 2s2 উপশক্তিস্তর থেকে একটা ইলেকট্রন 2pz উপশক্তিস্তরে চলে আসে। ফলে কার্বনের শেষ কক্ষপথে প্রতিটা উপশক্তিস্তরে একটা করে ইলেকট্রন থাকে, তখন কার্বনের ইলেকট্রন বিন্যাস হবে-
C (6) = 1s2 2s2 2px1 2py1 2pz1
তাই কার্বন এই চারটা unpaired বা অযুগ্ন / জোড়াহীন ইলেকট্রনকে কাজে লাগিয়ে চারটা সমযোজী বন্ধন তৈরি করতে পারে অন্য কোনো মৌলের পরমাণুর সাথে। এজন্য কার্বনের যোজনী হচ্ছে ৪। যেমন CH4 বা মিথেনের ক্ষেত্রে কার্বন ৪টা হাইড্রোজেনের সাথে সমযোজী বন্ধন তৈরি করে। এভাবে প্রতিটা জৈব যৌগের গঠনে কার্বনের যোজনী থাকে ৪।
অধিক সংখ্যক জৈব যৌগের উৎপত্তির কারণ
মূলত ৪টা কারণে পৃথিবীতে প্রচুর সংখ্যক জৈব যৌগ পাওয়া যায়। এগুলো হলো-
a) কার্বনের ক্যাটিনেশন ধর্ম : অনেকগুলো কার্বন পাশাপাশি যুক্ত হয়ে বিশাল একটা কার্বন চেইন তৈরি করে, একে কার্বনের ক্যাটিনেশন ধর্ম বলে। তাই এই ধর্মের মাধ্যমে অনেকগুলো কার্বন পরমাণু নিজেদের ইচ্ছেমত ছোট-বড় অনেকগুলো যৌগ বানাতে পারে। কিন্তু অন্যান্য মৌল এই ধরনের ধর্ম দেখায় না। নিচের ছবিতে দেখো, কার্বন তার ক্যাটিনেশন ধর্ম ব্যবহার করে শাখাযুক্ত শিকল (Branched Chain), সরলরৈখিক শিকল (Linear Chain) এবং চাক্রিক শিকল (Ring Chain) তৈরি করতে পারে-
b) সমাণুতা : একই আণবিক সংকেত কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন গাঠনিক সংকেত ও ত্রিমাত্রিক অবস্থান বিশিষ্ট যৌগকে একে অপরের সমাণু বলে। সমাণু তৈরি হবার এই সিস্টেমকে সমাণুতা বলে। কার্বন এই ধরনের ধর্ম দেখায়, যেমন- C4H10 আণবিক সংকেত যুক্ত যৌগের দুটো ভিন্ন গাঠনিক সংকেত আছে, এদের গঠন ছবিতে দেখো-
এরা দুটোই হচ্ছে ভিন্ন আলাদা আলাদা যৌগ, যদিও তাদের আণবিক সংকেত একই৷ প্রথম যৌগটির নাম সাধারণ বা Normal বিউটেন (n-বিউটেন), দ্বিতীয় যৌগটির নাম আইসো বিউটেন। যদি কার্বন সংখ্যা আরো বেশি থাকতো, তবে একই আণবিক সংকেতের জন্য আরো অনেকগুলো গাঠনিক সংকেত বা ভিন্ন ভিন্ন যৌগ পাওয়া যেতো। তাই, সমাণুতা ধর্ম আছে বলে কার্বনের যৌগের সংখ্যা বেশি।
c) কার্বনের দ্বি-বন্ধন / ত্রি-বন্ধন গঠন : দুটো কার্বন নিজেদের মাঝে দুইটা বন্ধন বা তিনটা বন্ধন তৈরি করতে পারে। ফলে আরো অনেক নতুন নতুন যৌগ তৈরি হয় বলে যৌগের সংখ্যা বাড়ে। মনে রাখতে হবে, দ্বি-বন্ধন বা ত্রি-বন্ধন যুক্ত কার্বনের যৌগকে অসম্পৃক্ত জৈব যৌগ বলে।
C – C : একক বন্ধন (সম্পৃক্ত যৌগ তৈরি করে)
C = C : দ্বি-বন্ধন (অসম্পৃক্ত যৌগ তৈরি করে)
C ≡ C : ত্রি-বন্ধন (অসম্পৃক্ত যৌগ তৈরি করে)
d) কার্বনের তড়িৎ ঋণাত্নকতা : পর্যায় সারণিতে কার্বনের অবস্থান বেশ রহস্যময় জায়গায়। কারন এর তড়িৎঋণাত্নকতা ২.৫, একদম মাঝামাঝি মানের। তাই কার্বন অনেক বেশি তড়িৎ ঋণাত্নক মৌল যেমন ফ্লোরিন, ক্লোরিনের সাথেও বন্ধন তৈরি করে, অনেক কম তড়িৎ ঋণাত্নক মৌল যেমন ফ্রান্সিয়ামের সাথেও বন্ধন তৈরি করে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- এটম ইকোনমি (Atom Economy)
- কার্বো অ্যানায়ন (Carbonation)
- কার্যকরী মূলক (Functional Group)
- কার্যকারী মূলকের ডিগ্রী (Degree of Functional Group)
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব (Kinetic Theory of Gases)
- জৈব যৌগের গাঠনিক সমাণুতা (Structural Isomerism of Organic Compounds)
- জৈব যৌগের প্রকারভেদ (Classification of Organic Chemistry)
- জৈব যৌগের সূচনা (Principle of Organic Chemistry)
- জৈব রসায়নের ইতিহাস (History of Organic Chemistry)
- জৈবযৌগের সমাণুতা (Isomerism of Organic Compound)
- ত্রিমাত্রিক / স্টেরিও সমাণুতা (Operational / Stereo Isomerism)
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া (Different types of Actions and Reactions)
- যৌগের আণবিক সংকেত হতে শতকরা সংযুতি গণনা (Calculate the Percentage Compound from the Molecular Symbol of the Compound)
- সমগোত্রীয় শ্রেণী (Homologous Series)
- হাইড্রোকার্বনের আণবিক সংকেত নির্ণয় (Determination of Molecular Formula of Hydrocarbons)