ভৌগোলিক দিক দিয়ে বিচার করলে পৃথিবীর সমগ্র ভূমিরূপকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো- (১) পর্বত, (২) মালভূমি এবং (৩) সমভূমি।
পর্বত (Mountains)
সমুদ্রতল থেকে অন্তত ১০০০ মিটারের বেশি উঁচু ও খাড়া ঢাল বিশিষ্ট শিলাস্তূপকে পর্বত বলে। সাধারণত ৬০০ থেকে ১০০০ মিটার উঁচু স্বল্প বিস্তৃত শিলাস্তূপকে পাহাড় বলে। পর্বতের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার মিটার উঁচু হতে পারে। পর্বতের ভূপ্রকৃতি বন্ধুর, ঢাল খুব খাড়া এবং সাধারণত চূড়াবিশিষ্ট হয়। কোনো কোনো পর্বত বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে। যেমন- পূর্ব আফ্রিকার কিলিমানজারো। আবার কিছু পর্বত অনেকগুলো পৃথক শৃঙ্গসহ ব্যাপক এলাকা জুড়ে অবস্থান করে। যেমন- হিমালয় পর্বতমালা।
পর্বতের প্রকারভেদ (Classification of Mountains)
উৎপত্তিগত বৈশিষ্ট্য ও গঠনপ্রকৃতির ভিত্তিতে পর্বত প্রধানত চার প্রকার-
- ভঙ্গিল পর্বত (Fold Mountains)
- আগ্নেয় পর্বত (Volcanic Mountains)
- চ্যুতি-স্তুপ পর্বত (Fault Block Mountains)
- ল্যাকোলিথ পর্বত (Laccoliths Mountains)
ভঙ্গিল পর্বত : ভঙ্গ বা ভাঁজ থেকে ভঙ্গিল শব্দটির উৎপত্তি। কোমল পাললিক শিলায় ভাঁজ পড়ে যে পর্বত গঠিত হয়েছে তাকে ভঙ্গিল পর্বত বলে। এশিয়ার হিমালয়, ইউরোপের আল্পস, উত্তর আমেরিকার রকি, দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বত ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ। ভঙ্গিল পর্বতের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভাজ। সমুদ্র তলদেশের বিস্তারিত অবনমিত স্থানে দীর্ঘকাল ধরে বিপুল পরিমাণ পলি এসে জমা হয়। এর চাপে অবনমিত স্থান আরও নিচে নেমে যায়। পরবর্তী পর্যায়ে ভূ-আলোড়ন বা ভূমিকম্পের ফলে এবং পার্শ্ববর্তী সুদৃঢ় ভূমিখন্ডের প্রবল পার্শ্বচাপের কারণে ঊর্ধ্বভাজ ও নিম্নভাজের সৃষ্টি হয়। বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এ সমস্ত ঊর্ধ্ব ও অধঃর্ভাজ সংবলিত ভূমিরূপ মিলেই ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়।
আগ্নেয় পর্বত : আগ্নেয়গিরি থেকে উদগিরিত পদার্থ সঞ্চিত ও জমাট বেঁধে আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টি হয়। একে সঞ্চিত পর্বতও বলে। এই পর্বত সাধারণত মোচাকৃতির (Conical) হয়ে থাকে। আগ্নেয় পর্বতের উদাহরণ হলো ইতালির ভিসুভিয়াস, কেনিয়ার কিলিমানজারো, জাপানের ফুজিয়ামা এবং ফিলিপাইনের পিনাটুবো পর্বত।
চ্যুতি-স্তুপ পর্বত : ভূআলোড়নের সময় ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে প্রসারণ এবং সংকোচনের সৃষ্টি হয়। এই প্রসারণ এবং সংকোচনের জন্য ভূত্বকে উপত্যকা ফাটলের সৃষ্টি হয়। কালক্রমে এ ফাটল বরাবর ভূতৃক আস্তে আস্তে স্থানচ্যুত হয়। ভূগোলের ভাষায় একে চ্যুতি বলে। ভূত্বকের এ স্থানচ্যুতি কোথাও উপরের দিকে হয়, আবার কোথাও নিচের দিকে হয়। চ্যুতির ফলে উঁচু হওয়া অংশকে স্তুপ পর্বত বলে। ভারতের বিন্ধ্যা ও সাতপুরা পর্বত, জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট, পাকিস্তানের লবণ পর্বত স্তূপ পর্বতের উদাহরণ।
ল্যাকোলিথ পর্বত : পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে গলিত শিলা বা ম্যাগমা বিভিন্ন গ্যাসের দ্বারা স্থানান্তরিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো কোনো সময় বাধা পেয়ে এগুলো ভূপৃষ্ঠের উপরে না এসে ভূত্বকের নিচে একস্থানে জমাট বাঁধে। ঊর্ধ্বমুখী চাপের কারণে মোটা হয়ে ভূত্বকের অংশবিশেষ গম্বুজ আকার ধারণ করে। এভাবে সৃষ্ট পর্বতকে ল্যাকেলিথ পর্বত বলে। ঢাল সামান্য খাড়া স্বপ্ন অঞ্চলব্যাপী বিস্তৃত। এ পর্বতের কোনো শৃঙ্গ থাকে না। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি পর্বত এর উদাহরণ।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অণু ও পরমাণু
- জোয়ার ও ভাটা
- পদার্থের পরিবর্তন
- পৃথিবীর বাহ্যিক গঠন : মালভূমি
- বর্ণালী কি
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : সাময়িক বায়ু
- বায়ুমণ্ডলীয় স্তর
- বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ
- ভাইরাস কি
- ভাইরাসের গঠন
- ভাইরাসের প্রকারভেদ
- ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি
- সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ
- সমুদ্রস্রোত (Sea Tide)
- হিমপ্রাচীর ও সামুদ্রিক দুর্যোগ