গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র গুলো অনেক বিখ্যাত। কোনো কিছুকে উপর থেকে ছেড়ে দিলে অভিকর্ষের প্রভাবে ভূমিতে পৌঁছায়। একই উচ্চতা থেকে একই সময় একটি ভারী ও একটি হালকা বন্ধু ছেড়ে দিলে এগুলো একই সময়ে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাবে কি? বাস্তবে এক টুকরা পাথর ও এক টুকরা কাগজ একই উচ্চতা থেকে ছেড়ে দিলে দেখা যায় যে, পাথরটি কাগজের আগেই মাটিতে পৌঁছায়। বাতাসের বাঁধার জন্য এরূপ হয়। যেহেতু বস্তুর ওপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের ওপর নির্ভর করে না, তাই কাগজ ও পাথরের ওপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ ত্বরণ একই। বাতাসের বাঁধা না থাকলে এগুলো অবশ্যই একই সময়ে মাটিতে পৌঁছাত।
গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র
পড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে গ্যালিলিও তিনটি সূত্র বের করেন। এগুলোকে গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র বলে। এ সূত্রগুলো একমাত্র স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বস্তু পড়ার সময় স্থির অবস্থান থেকে পড়বে, এর কোনো আদি বেগ থাকবে না। বস্তু বিনা বাঁধায় মুক্তভাবে পড়বে অর্থাৎ এর ওপর অভিকর্ষজ বল ছাড়া অন্য কোনো বল ক্রিয়া করবে না। যেমন বাতাসের বাঁধা এর ওপর কাজ করবে না।
সুত্রগুলো হচ্ছে-
প্রথম সূত্র : স্থির অবস্থান এবং একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত সকল বস্তু সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করে।
দ্বিতীয় সূত্র : স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে (t) প্রাপ্ত বেগ (v) ঐ সময়ের সমানুপাতিক অর্থাৎ, v ∝ t
তৃতীয় সূত্র : স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব (h) অতিক্রম করে তা ঐ সময়ের (t) বর্গের সমানুপাতিক অর্থাৎ, h ∝ t2
গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র গুলোর ব্যাখ্যা
প্রথম সূত্র : এ সূত্রানুসারে স্থির অবস্থান থেকে কোনো বস্তু ছেড়ে দিলে তা যদি বিনা বাধায় মাটিতে পড়ে তাহলে মাটিতে পড়তে যে সময় লাগে তা বস্তুর ভর, আকৃতি বা আয়তনের ওপর নির্ভর করে না। বিভিন্ন ভরের, আকারের ও আয়তনের বস্তুকে যদি একই উচ্চতা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এগুলো যদি বিনাবাঁধায় মুক্তভাবে পড়তে থাকে তাহলে সবগুলোই একই সময়ে মাটিতে পৌঁছাবে।
দ্বিতীয় সূত্র : দ্বিতীয় সূত্র থেকে পাওয়া যায় t সেকেন্ড শেষে বস্তুর বেগ v ∝ t
অর্থাৎ, কোনো বস্তুকে যদি স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়তে দেওয়া হয় তবে প্রথম সেকেন্ড পরে যদি এটি v বেগ অর্জন করে তবে দ্বিতীয় সেকেন্ড পরে এটি 2v বেগ অর্জন করবে। সুতরাং t1, t2, t3…..সেকেন্ড পরে যদি বস্তুর বেগ যথাক্রমে V1, V2, V3….. ইত্যাদি হয় তবে এ সূত্রানুসারে,
v1/t1 = v2/t2 = v3/t3 =……….= ধ্রুবক
তৃতীয় সূত্র : তৃতীয় সূত্র থেকে পাওয়া যায় t সেকেন্ডে বস্তুর অতিক্রান্ত দূরত্ব h ∝ t2
অর্থাৎ কোনো বস্তুকে যদি স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাঁধায় পড়তে দেওয়া হয় তবে এক সেকেন্ডে এটি h দূরত্ব অতিক্রম করে তবে দুই সেকেন্ডে এটি h x 22 বা 4h দূরত্ব, তিন সেকেন্ডে এটি h x 32 বা 9h দূরত্ব অতিক্রম করবে। সুতরাং t1, t2, t3…… সেকেন্ডে যদি বস্তুর অতিক্রান্ত দূরত্ব যথাক্রমে h1, h2, h3….. ইত্যাদি হয় তবে
h1/t12 = h2/t22 = h3/t32=………=ধ্রুবক।
পড়ন্ত বস্তুর গতির সমীকরণ
গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র অনুসারে কোনো পড়ন্ত বস্তুর আদি বেগ যদি u হয়, t সেকেন্ড পরে বেগ v হয় এবং সে সময় যদি বস্তুটি h দূরত্ব নেমে আসে তবে গতির সমীকরণগুলো হবে :
v = u + gt
h = ut + (1/2) gt2
v2 = u2 + 2gh
বস্তু যদি স্থির অবস্থান থেকে পড়ে তাহলে u = 0 এবং স্থির থেকে পড়ন্ত বস্তুর গতির সমীকরণগুলো হবে :
v = gt
h = (1/2) gt2
v2 = 2gh
নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতির সমীকরণ
গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র অনুসারে কোনো বস্তুকে যদি খাড়া উপরের দিকে u আদি বেগে নিক্ষেপ করা হয় তাহলে g ঋণাত্নক হবে। তখন গতির সমীকরণগুলো হবে :
v = u-gt
h = ut – 2 gt2
v2 = u2 – 2gh
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অভিকর্ষজ ত্বরণ (Gravitational Acceleration)
- ওহমের সূত্র (Ohm’s Law)
- কার্শফের ভোল্টেজ সূত্র
- গতির সমীকরণ
- গতিশক্তি (Kinetic Energy)
- চার্লসের সূত্র
- তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র
- তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র
- তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম সূত্র
- ত্বরণ কাকে বলে
- নিউটনের তৃতীয় সূত্র
- নিউটনের সূত্র
- ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
- সরলদোলকের সমীকরণ
- সরলদোলকের সূত্র সমূহ