কোনো একটি তল অন্য একটি তলের উপর দিয়ে চলার ঠিক আগে যে বাধা দেওয়ার মত বল প্রদর্শন করে তা হল স্থিতির ঘর্ষণ বল। একটি তল অন্য একটি তলের উপর দিয়ে চলার সময় যে বাঁধাদানকারী বল কাজ করে তা হল গতির ঘর্ষণ। স্থিতির ঘর্ষণ বল গতির ঘর্ষণ বল অপেক্ষা কিছুটা বেশি হয়। দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে যদি একের উপর দিয়ে অপরটি চলতে চেষ্টা করে অথবা চলতে থাকে তাহলে বস্তুদ্বয়ের স্পর্শ তলে এ গতির বিরুদ্ধে একটা বাঁধার উৎপত্তি হয়, এ বাধাকে ঘর্ষণ বলে। আর এ বাঁধার ফলে যে বল উৎপন্ন হয় তাকে ঘর্ষণ বল বলে।
ঘর্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘর্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ঘর্ষণ না থাকলে আমরা হাঁটতে পারতাম না, পিছলে যেতাম। কাঠে পেরেক বা স্ক্রু আটকে থাকতো না, সম্ভব হতো না দড়িতে কোনো গিট দেওয়া। কোনো কিছু আমরা ধরে রাখতে পারতাম না। ফলে সহজেই বুঝা যায় ঘর্ষণ না থাকলে আমাদের কতটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হতো।
ঘর্ষণের জন্য আমাদেরকে অসুবিধাও কম পোহাতে হয় না। যন্ত্র চলার সময় গতিশীল অংশগুলোর মধ্যে ঘর্ষণ ক্রিয়া করার ফলে ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তাছাড়া যান্ত্রিক দক্ষতাও বেশ কমে যায় আবার ঘর্ষণের ফলে অনাবশ্যক তাপ উৎপাদনের জন্য যন্ত্রের ক্ষতি হয়।
এইসব অসুবিধা দূর করার জন্য যন্ত্রপাতির স্পর্শ তলগুলোর মাঝে পিচ্ছিলকারী তেল বা গ্রাফাইট ব্যবহার করে পিচ্ছিল রাখা হয়।
ঘর্ষণের প্রকারভেদ
ঘর্ষণ মূলত দুই প্রকার-
- স্থিতি ঘর্ষণ বা স্থির ঘর্ষণ (Static friction) এবং
- চল ঘর্ষণ বা গতীয় ঘর্ষণ (Kinetic friction)
স্থিতি ঘর্ষণ বা স্থির ঘর্ষণ (Static Friction)
পরস্পরের স্পর্শে বা সংস্পর্শে থেকে একটি বস্তু যতক্ষণ অপরটির উপর স্থির থাকে, ততক্ষণ তাদের মিলন তলে যে ঘর্ষণ ক্রিয়া করে, তাকে স্থিতি ঘর্ষণ বা স্থির ঘর্ষণ বলে। এর মান শূন্য থেকে একটি নির্দিষ্ট মান পর্যন্ত হতে পারে। একে Fs দ্বারা সূচিত করা হয়।
চল ঘর্ষণ বা গতীয় ঘর্ষণ (Kinetic Friction)
পরস্পরের স্পর্শে বা সংস্পর্শে থেকে একটি বস্তু অপরটির উপর দিয়ে চলাচল করার সময় যে ঘৰ্ষণের সৃষ্টি হয়, তাকে চল ঘর্ষণ বা গতীয় ঘর্ষণ বলে। চল ঘর্ষণ বা গতীয় ঘর্ষণ সহগ স্থিতি ঘর্ষণের চেয়ে কম।
চল ঘর্ষণকে আবার তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে-
- আবর্ত ঘর্ষণ (Rolling friction)
- বিসর্প ঘর্ষণ (Sliding friction) এবং
- প্রবাহী ঘর্ষণ (Fluid friction)
আবর্ত ঘর্ষণ (Rolling Friction)
যখন কোন বস্তু অপর কোন তলের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলে, তখন যে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় তাকে আবর্ত ঘৰ্ষণ বলে। উদাহরণ- ফুটবল, মার্বেল গুটি, লন-রােলার ইত্যাদি মাটির উপর দিয়ে চলার সময় এই ধরনের ঘর্ষণ সৃষ্টি হয়।
বিসর্প ঘর্ষণ (Sliding friction)
পরস্পরের স্পর্শে বা সংস্পর্শে অবস্থিত দুইটি বস্তুর একটি যখন অপরটির উপর ঘর্ষণ করিয়া চলে বা চলার চেষ্টা করে তখন বস্তুদ্বয়ের মিলনতলের স্পর্শক বরাবর যে বিরুদ্ধ বলের সৃষ্টি হয় তাকে বিসর্প ঘর্ষণ বলে।
প্রবাহী ঘর্ষণ (Fluid friction)
যদি কোন তরল বা বায়বীয় পদার্থের গতিপথে একটি স্থির বস্তু থাকে কিংবা কোন গতিশীল বস্ত তরল বা বায়বীয় পদার্থের ভেতর দিয়ে যেতে চায় তখন যে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়, তাকে প্রবাহী ঘর্ষণ বলে। স্থির তলের উপর দিয়ে তরল বা বায়বীয় পদার্থ প্রবাহিত হবার সময়, নদীতে নৌকা চলার সময় পানি ও নৌকার মধ্যে এ ধরনের ঘর্ষণ সৃষ্টি হয়।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আধানের নিত্যতা এবং কোয়ান্টায়ন (Conservation and Quantization of Charge)
- আয়নিক বন্ধন (Ionic bond)
- ইলেকট্রনের তাড়ন বেগ (Drift Velocity of Electron)
- গতিশক্তি (Kinetic Energy)
- তড়িতের প্রকারভেদ (Types of Electricity)
- নিক্ষিপ্ত বস্তু / প্রাস / প্রক্ষেপক (Projectile Particle)
- পদার্থবিজ্ঞানে ক্ষমতা (Power in Physics)
- পদার্থের পরিবর্তন (Changes in Matter)
- বলের ধারণা (Concept of Force)
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : সাময়িক বায়ু (Types of Airflow : Temporary Winds)
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া (Different types of Actions and Reactions)
- মেনোপজ বলতে কী বুঝায়?
- সমুদ্রস্রোত (Sea Tide)
- সরল দোলক (Simple Pendulum)
- সরল দোলক তৈরি (Building of Simple Pendulum)