চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণ শক্তি এবং পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ শক্তির কারণে সমুদ্রের পানি নির্দিষ্ট সময় পর পর এক জায়গায় বেড়ে ওঠে, আবার অন্য জায়গায় নেমে যায়। সমুদ্র এবং উপকূলবর্তী নদীর জলরাশি প্রতিদিনই কোনো একটি সময়ে ঐ জলরাশি ধীরে ধীরে ফুলে উঠছে এবং কিছুক্ষণ পরে আবার তা ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। জলরাশির এরকম নিয়মিত স্ফীতি বা ফুলে ওঠাকে জোয়ার বা নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে।
এ মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি বস্তুকণাই একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এ মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাকে মহাকর্ষ বলে। সমুদ্রের একই জায়গায় প্রতিদিন দুইবার জোয়ার ও দু’বার ভাটা হয়। উপকূলে কোন একটি স্থানে পর পর দুটি জোয়ার বা পর পর দুটি ভাটার মধ্যে ব্যবধান হলো ১২ ঘণ্টা।
জোয়ার-ভাটা কারণ
জোয়ার-ভাটার প্রধান কারণ চাঁদের আকর্ষণ। প্রধানত দুটি কারণে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। এগুলো হলো-
- চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব এবং
- পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্ৰাতিগ শক্তি।
চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব : মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী মহাকাশে বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র প্রভৃতি প্রতিটি জ্যোতিষ্ক পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তাই এর প্রভাবে সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। কিন্তু পৃথিবীর উপর সূর্য অপেক্ষা চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি হয়। কারণ সূর্যের ভর অপেক্ষা চাঁদের ভর অনেক কম হলেও চাঁদ সূর্য অপেক্ষা পৃথিবীর অনেক নিকটে অবস্থিত। তাই সমুদ্রের জল তরল বলে চাঁদের আকর্ষণেই প্রধানত সমুদ্রের জল ফুলে ওঠে ও জোয়ার হয়। সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার তত জোড়ালো হয় না। চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থিত হলে চাঁদ ও সূর্য উভয়ের আকর্ষণে জোয়ার অত্যন্ত প্রবল হয়।
পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ শক্তি : পৃথিবী নিজ মেরুরেখার চারদিকে অনবরত আবর্তন করে বলে কেন্দ্রাতিগ শক্তি বা বিকর্ষণ শক্তির সৃষ্টি হয়। এই কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে পৃথিবীর প্রতিটি অনুই মহাকর্ষ শক্তির বিপরীত দিকে বিকর্ষিত হয় বা ছিটকে যায়। তাই পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে যেখানে মহাশক্তির প্রভাবে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তার বিপরীত দিকে সমুদ্রের জল বিক্ষিপ্ত হয়েও জোয়ারের সৃষ্টি করে।
জোয়ার-ভাটার ওপর সূর্য ও চাঁদের আকর্ষণ : সূর্য চন্দ্র অপেক্ষা ২ কোটি ৬০ লক্ষ গুণ বড় হলেও পৃথিবী সূর্য হতে গড়ে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কিন্তু পৃথিবী থেকে চন্দ্রের গড় দূরত্ব মাত্র ৩৮.৪ লক্ষ কিলোমিটার। এ কারণেই পৃথিবীর ওপর সূর্যের আকর্ষণ শক্তি চন্দ্র অপেক্ষা অনেক কম। ফলে জোয়ার-ভাটার ব্যাপারে সূর্য অপেক্ষা চন্দ্রের প্রভাব বেশি। হিসাব করে দেখা গেছে যে, জোয়ার উৎপাদনে সূর্যের ক্ষমতা চন্দ্রের ৪/৯ (নয় ভাগের চার ভাগ) ভাগ।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
Related posts:
- অভিকর্ষ কেন্দ্র
- আন্তঃআণবিক শক্তি কাকে বলে
- আহ্নিক গতি কাকে বলে
- কার্বোহাইড্রেট
- তড়িচ্চালক বল (Electromotive Force)
- নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : সাময়িক বায়ু
- বায়ুমন্ডলের স্তর
- ভর ও ওজন (Mass & Weight)
- মৌলিক বল কাকে বলে
- শক্তি ও শক্তির বিভিন্ন রূপ
- সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ
- সমুদ্রস্রোত (Sea Tide)
- সৌরজগৎ কাকে বলে
- হিমপ্রাচীর ও সামুদ্রিক দুর্যোগ