জৈব রসায়নের ইতিহাস

কার্বনের যৌগসমূহকে জৈব যৌগ বলা হয় এবং রসায়নের যে শাখায় কার্বনের যৌগ সম্পর্কিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করা হয়, তাকে জৈব রসায়ন বলা হয়। অবশ্য কার্বনের অক্সাইডসমূহ এবং তাদের জাতক, যেমন ধাতু কার্বনেট ও কার্বনিলসমূহকে এবং ধাতু সায়ানাইড, সায়ানেট, থায়োসায়ানেট প্রভৃতি কিছু যৌগকে অজৈব রসায়নে আলোচনা করা হয়। কার্বন পরমাণুবিহীন প্রায় সকল যৌগ অজৈব যৌগ। জৈব যৌগে অবশ্যই কার্বন থাকে, এছাড়া এক বা একাধিক অন্য মৌল বিদ্যমান, তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্রম অনুসারে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ক্লোরিন প্রভৃতি।

 

‘জৈব’ শব্দের উৎস

প্রাণশক্তি মতবাদ ও আধুনিক মতবাদ : চিনি, তেল, ঘি, মাখন, শর্করা, প্রোটিন প্রভৃতি যে সকল পদার্থ উদ্ভিদ বা প্রাণিজগৎ, অর্থাৎ জীবজগৎ হতে পাওয়া যায়, তাদেরকে পূর্বে জৈব যৌগ বলা হত। বালু, খনিজ প্রভৃতি নির্জীব পদার্থ হতে যে সকল যৌগ পাওয়া যায়, তাদেরকে অজৈব যৌগ বলা হত। ১৮২৮ সলের পূর্বে জৈব যৌগসমূহকে পরীক্ষাগারে তৈরি করা যেত না, এ কারণে সকলের ধারণা ছিল যে, জৈব যৌগসমূহ এক রহস্যময় শক্তির প্রভাবে শুধু প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহে সৃষ্টি হয়। এ রহস্যময় শক্তিকে ‘প্রাণশক্তি’ (vital force) বলা হত। সুইডিশ বিজ্ঞানী বার্জেলিয়াস এ মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু বিজ্ঞানী ফ্রিডরিখ ভোলার (Friedrich Wohler) (জার্মান ভাষায় W-এর উচ্চারণ বাংলা ‘ভ’–এর ন্যায়) অজৈব যৌগ অ্যামোনিয়াম সায়ানেটকে উত্তপ্ত করে জৈব যৌগ ইউরিয়া প্রস্তুত করেন।

NH4CNO (অ্যামোনিয়াম সায়ানেট) = H2N-CO-NH2 (ইউরিয়া)

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে জৈব যৌগ উৎপাদনে প্রাণশক্তির কোনো প্রভাব নেই। এদিকে ফরাসি রসায়নবিদ ল্যাভয়সিয়ের পরীক্ষা হতে প্রমাণিত হয় যে সকল জৈব যৌগে কার্বন বিদ্যমান; এছাড়া অন্যান্য মৌলও আছে। জৈব ও অজৈব যৌগের মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য না থাকলেও জৈব যৌগের অস্বাভাবিক উচ্চ সংখ্যার কারণে এদেরকে নিয়ে পৃথক শাখা গড়ে ওঠে।

 

জৈব যৌগের প্রাচুর্যের কারণ

কার্বন পরমাণুর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এটি একই মৌলের পরমাণুর সাথে বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী ও সুস্থিত বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে। একই মৌলের পরমাণুসমূহের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের শিকল গঠনের ধর্মকে ক্যাটেনেশন বলা হয়। একমাত্র সালফার ও সিলিকন সামান্য পরিমাণে এ ধর্ম দেখালেও কার্বনই সত্যিকারভাবে এই ধর্ম প্রদর্শন করে। এছাড়া কার্বন পরমাণুর যোজনী 4। সুতরাং এটি নিজেদের মধ্যে একক, দ্বি ও ত্রি-বন্ধন গঠন করার পরেও অন্যান্য মৌলের পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়। এছাড়া জৈব যৌগে সমাণুতা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়; অর্থাৎ একই আণবিক সংকেত কিন্তু ভিন্ন আণবিক গঠন বিশিষ্ট একাধিক যৌগের উপস্থিতি দেখা যায়। এ সকল কারণে জৈব যৌগের সংখ্যা খুব বেশি।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool