মহাশূন্য যাত্রার ইতিহাস

আকাশের অসংখ্য উজ্জ্বল বস্তু মানুষকে যুগে যুগে অভিভূত করেছে, মানুষ তাদের চিনতে চেষ্টা করেছে, চেষ্টা করেছে জয় করতে। পৃথিবীর মানুষের আকাশ জয়ের এই অদম্য বাসনা থেকেই সম্ভব হয়েছে মানুষের মহাশূন্য যাত্রা। মহাশূন্যে আছে নক্ষত্র, গ্রহ, গ্যাস, ধূলিকণা, উল্কা, ধুমকেতু, গ্রহাণুপুঞ্জ, কৃষ্ণগহ্বর ও বিকিরণ। মহাশূন্য যাত্রার পূর্বে বা চন্দ্রাভিযানের বহু পূর্বে মানুষ কল্পনায় চাঁদে গিয়েছে, তার অনেক দৃষ্টান্ত আমরা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে পাই। মানুষের বহু আকাঙ্খিত ও বহু প্রতীক্ষিত এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় মহাশূন্য অভিযান ও চাঁদে অবতরণের মাধ্যমে।

মানুষের মহাশূন্য যাত্রার ইতিহাস খুব পুরোনো নয়, একেবারেই নতুন। তোমরা জেনে অবাক হবে যে, মহাশূন্যযাত্রার প্রথম পদক্ষেপটির সূচনা হয়েছে ১৯৫৭ সালে ৪ অক্টোবর। এ যাত্রার সূচনা করে তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়ন, মহাশূন্যে স্পুটনিক–1 (Sputnik-1) নামক কৃত্রিম উপগ্রহ (Satellite) উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। স্পুটনিক শব্দের অর্থ Fellow travelers বা ভ্রমণসঙ্গী।

পৃথিবীর উপগ্রহ হল চাঁদ। এটি পৃথিবীর স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক উপগ্রহ (natural satellite)। ‘স্যাটেলাইট’ বলতে অবশ্য এখন কৃত্রিম উপগ্রহকেই বোঝায়। উপগ্রহ পৃথিবীকে ঘিরে যে পথে আবর্তিত হয় তার নাম কক্ষপথ। স্পুটনিককে I-কে পাঠানো হয় আন্তর্জাতিক ভূগোলবর্ষে। উদ্দেশ্য ছিল ভৌগোলিক অনুসন্ধান বা গবেষণা। এর কয়েক মাস পর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ‘এক্সপ্লোরার’ নামক একটি মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ করে। এটি ছিল খুবই ক্ষুদ্র, মাত্র কয়েক কিলোগ্রাম ভরবিশিষ্ট।

স্পুটনিক-I উৎক্ষেপণের কয়েক সপ্তাহ পর তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়ন স্পুটনিক-II মহাশূন্যে প্রেরণ করে। স্পুটনিক–II এর যাত্রী ছিল ‘লাইকা’ (Laika) নামের একটি কুকুর। লাইকার ওপর পরীক্ষণের তথ্য মহাশূন্যে মানুষ প্রেরণে উৎসাহিত করে। পৃথিবীর প্রথম মহাশূন্যচারী মানুষ হলেন, সোভিয়েট ইউনিয়নের ইউরি গ্যাগারিন (Yuri Gagarin)। স্পুটনিক উৎক্ষেপণের প্রায় চার বৎসর পর গ্যাগারিনকে মহাশূন্যে পাঠানো হয়। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল ইউরি গ্যাগারিন পৃথিবীকে পরিক্রমণ করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালেন শেপার্ড (Alan shepard) ১৯৬১ সালের ৫ মে মহাশূন্যে গমন করেন। এরপর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়ন অনেক মহাশূন্যযান পাঠায়। নিচের সারণিতে মহাশূন্যযাত্রার ইতিহাস তুলে ধরা হল-

মহাকাশচারী

এরপর অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। মহাশূন্য বিজ্ঞানে আশির দশকে উল্লেখযোগ্য যেসব কাজ হয় তার মধ্যে রয়েছে, মহাশূন্যে স্থায়ী স্পেস স্টেশন স্থাপন ও স্পেস শাটল নির্মাণ। স্পেস শাটল বহুবার মহাশূন্যচারীদের নিয়ে মহাশূন্যে যায় ও ফিরে আসে। স্পেস শাটলের প্রধান সুবিধা হল এটি বার বার ব্যবহার করা যায়। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান চ্যালেঞ্জার কয়েক বার মহাশূন্য যায় ও ফিরে আসে এবং কানাডা, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের যোগাযোগ উপগ্রহ স্থাপনে সাফল্য অর্জন করে।

১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে মার্কিন মহাশূন্যযান ডিসকভারী কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের ২টি উপগ্রহ মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করে। এ ছাড়াও মহাশূন্যে প্রেরিত হয় মনুষ্যবিহীন মহাশূন্যযান মেরিনার (14.11.1971), ভাইকিং (20.08.1975) ও ভয়েজার (20.08.1977)। ভয়েজার বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটোর কক্ষে প্রেরিত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি মহাশূন্যযান। ১৯৯২ সালে একদল আমেরিকান মহাশূন্যচারী মহাশূন্য উপগ্রহ মেরামত করতে সক্ষম হন এবং কক্ষচ্যূত উপগ্রহকে তার মূল কক্ষপথে ফিরিয়ে আনেন।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/c/CrushSchool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool

1 Comment

  1. Very good post. I absolutely appreciate this website. Stick with it!

Comments are closed