বিবর্তন কাকে বলে? বিবর্তন বা Evolution নিয়ে আলোচনা করার আগে মিউটেশন নিয়ে ধারনা থাকা লাগবে। মিউটেশন বলতে বোঝায় যখন একটা DNA Replication হয় তখন নতুন তৈরি DNA এর কিছু কোড (অর্থাৎ নাইট্রোজেন ক্ষারের সিকুয়েন্স) আগের DNA এর কোডের সাথে পুরোপুরিভাবে মিলে না। নতুন DNA এর এই কোডের সিকুয়েন্স ভুল করাটাই হচ্ছে মিউটেশন।
মুরগির মাধ্যমে বুঝবো বিবর্তন কাকে বলে!
এখন আসি বিবর্তনে। পুরো বিবর্তনের ঘটনাকে খুব সহজভাবে বিবেচনা করবো একটা মুরগিকে দিয়ে। ধরো তোমার এলাকায় মাত্র একটা মুরগি আছে যার গায়ের রং লাল। এই লাল মুরগিটা একসময় তিনটা ডিম দিলো। ডিম ফুটে তিনটা বাচ্চা হলো। এক্ষেত্রে মা মুরগিটা তার DNA বাচ্চাদের শরীরে সাপ্লাই করছে। তাই তার তিনটা বাচ্চার বৈশিষ্ট্য হবে তার মতই, অর্থাৎ গায়ের রং লাল হবে।
কিন্তু নতুন তৈরিকৃত DNA সবসময় ঠিকমত কোডিং করতে পারে না। সে কোড ভুল করে, ফলে মিউটেশন ঘটে। ধরা যাক তিনটে বাচ্চার মধ্যে একটা বাচ্চার DNA ভুল কোডিং করলো! একটা বাচ্চার DNA তে মিউটেশন হয়ে গেলো! তখন বাচ্চাটার গায়ের রং লাল না হয়ে সাদা হয়ে গেলো।
বিবর্তনের কৌশল
আমাদের হাতে এখন মা আর বাচ্চা সহ তিনটা লাল মুরগি আর একটা সাদা মুরগি আছে। আবার ধরো তোমার এলাকায় কিছু দুষ্ট শিয়াল আছে যারা লাল মুরগিকে দেখলে ধরে নিয়ে যায় খাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা সাদা মুরগিকে ফার্মের মুরগি ভেবে খায় না। একদিন একটা শিয়াল মা মুরগিটাকে নিয়ে খেয়ে ফেললো। ওদিকে বাচ্চা তিনটা বড় হচ্ছে।
আরো কিছুদিন পর বাচ্চা গুলো মোটামুটি বড় হয়ে গেলো। একদিন আরেকটা শিয়াল এসে আরেকটা লাল রং এর বাচ্চাকে ধরে নিয়ে গেলো খাওয়ার জন্য। ফাইনালি বেঁচে রইলো একটা সাদা আর একটা লাল রং এর মুরগি।
আরো কিছুদিন পর বাচ্চাগুলো বড় হয়ে গেলো, সাদা মুরগিটা ডিমে পাড়া শুরু করলো। কিন্তু শিয়ালের শিকার বন্ধ থাকলো না, সে বাকি যে লাল মুরগিটা ছিলো তাকেও ধরে নিয়ে গেলও।
সাদা মুরগিটা এখন মা হয়েছে। সে তিনটা বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। সবগুলোর রং তার মতই সাদা। কিন্তু তাদেরকে এখন শিয়াল শিকার করে না। কারন শিয়াল শুধুমাত্র লাল মুরগি শিকার করতো।
আমাদের এই ঘটনাতে লাল মুরগি এলাকা থেকে বিদায় নিয়েছে এবং সাদা মুরগি এখন সেই এলাকায় রাজত্ব করছে। এই পরিবর্তনটাই হচ্ছে বিবর্তন। সাদা মুরগিটার প্রকৃতিতে টিকে থাকার ঘটনাটা হচ্ছে Natural Selection বা প্রাকৃতিক নির্বাচন। বিজ্ঞানী চার্লস রবার্ট ডারউইন এই মতবাদের আবিষ্কারক।
এখানে শিয়ালটা আমাদের প্রকৃতি, সাদা মুরগিটা হচ্ছে বিবর্তিত প্রাণি। বিবর্তনে পূর্বপুরুষের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন আমাদের লাল মা মুরগির বৈশিষ্ট্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন ঘটে বংশধরদের। আমাদের Nature বা প্রকৃতি কোনো জীবের বংশধরদের মধ্যকার খারাপ বৈশিষ্ট্যকে মেরে ফেলে এবং ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোকে টিকিয়ে রাখে।
জিরাফের মাধ্যমে বিবর্তনের উদাহরণ
ধরো একটা বনে দুই ধরনের গাছ আছে। লম্বা গাছ এবং খাটো গাছ। আবার সেই বনে তিন ধরনের জিরাফ আছে। লম্বা গলা, মাঝারি গলা এবং ছোটো গলার জিরাফ। লম্বা গলার জিরাফদের সংখ্যা অনেক কম এবং খাটো ও মাঝারি গলাদের সংখ্যা অনেক বেশি।
যেসব জিরাফের গলা খাটো এবং মাঝারি আকারের তারা লম্বা গাছ খেতে পারে না। তারা খাটো গাছ খায়। যেহেতু সেই বনে খাটো এবং মাঝারি গলার জিরাফ বেশি সেজন্য বনের ছোট গাছগুলো খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। ফলে একটা সময় পর সেই বনে আর কোনো ছোট গাছ থাকবে না। তখন ছোট গলা এবং মাঝারি গলার জিরাফদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা শুরু হবে খাবার নিয়ে। ফলে তাদের মধ্যে মারামারি হবে এবং কিছু জিরাফ তখন মারা যাবে। তাহলে evolution সিস্টেমে খাদ্যের একটা প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে।
যখন বনের সমস্থ ছোট গাছ গুলো শেষ হয়ে যাবে তখন ছোট গলা ও মাঝারি গলার জিরাফরা ধীরে ধীরে মারা যাবে। কিন্তু বনে তখন লম্বা গলার জিরাফরা থাকতে পারবে। কারন তাদের সংখ্যা কম ছিলো। যখন অল্প সংখ্যক লম্বা গলার জিরাফ টিকে থাকবে তখন তারা বংশবিস্তার শুরু করবে, কারন তাদের খাবার লম্বা গাছ তখনো বনে টিকে আছে। এভাবে একটা সময় পর সেই বনে সব জিরাফ হবে লম্বা গলার এবং খাদ্যের অভাবে খাটো ও মাঝারি গলার জিরাফ সেই বন থেকে বিলীন হয়ে যাবে। আশা করি এই উদাহরণ গুলো থেকে বোঝা গিয়েছে বিবর্তন কাকে বলে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-