বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন (Sir Isaac Newton) তাঁর “ফিলোসোফিয়া ন্যাচারালিস ম্যাথমেটিক” নামক অমর গ্রন্থে বস্তুর গতি বেগ ও তরের মধ্যে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন। তার নাম অনুসারে সূত্রগুলোকে নিউটনের গতিসূত্র বলে। এ সূত্রগুলোর সাহায্যে গতিবিদ্যা সুদৃঢ় বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সূত্রগুলো জানার আগে জড়তা ও বল নিয়ে জানতে হবে।
কোনো স্থির বস্তুর স্থির থাকতে চাওয়ার প্রবণতা ও গতিশীল বস্তুর গতি ধরে রাখার প্রবণতাকে জড়তা বলে।
বস্তু স্থির থাকতে চাইলে সেই জড়তাকে স্থিতি জড়তা বলে, আবার বস্তু গতিশীল থাকতে চাইলে সেই জড়তাকে গতি জড়তা বা Inertia বলে।
জড়তা বস্তুর একটি মৌলিক ধর্ম। জড়তা দুই প্রকার-
- স্থিতি জড়তা (Inertia of rest) এবং
- গতি জড়তা (Inertia of motion)
স্থিতি জড়তা : স্থির বস্তু সব সময় স্থির থাকতেই চায়। এর নাম স্থিতি জড়তা। স্থিতি জড়তা বস্তুর ভরের সমানুপাতিক। ভর বাড়লে স্থিতি জড়তা বাড়ে।
স্থিতি জড়তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত
যদি একটা গ্লাসের উপর একটা কার্ডবোড রাখো এবং সেই কাডবোর্ডের উপর একটা কয়েন রাখো তবে কার্ডবোডটিকে ধাক্কা মারলে কয়েনটি কার্ডবোডের সাথে সামনের দিকে না গিয়ে গ্লাসের ভেতরে পড়ে যাবে। কারন কয়েনটি স্থির হয়ে ছিলো এবং এটির মধ্যে স্থির জড়তা কাজ করছিলো।
এখানে কার্ডবোডের জড়তার পরিমান কম বলে আমরা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পেরেছি। কিন্তু কয়েনের জড়তা বেশি বলে সেটা কার্ডবোডের সাথে সাথে সরে যায়নি। তাই বলা যায়, সব বস্তুতে জড়তার পরিমান সমান থাকে না। কোনো কোনো বস্তুর জড়তার পরিমান বেশি, কোনো কোনো বস্তুর জড়তার পরিমান কম।
হঠাৎ গাড়ি চলতে শুরু করলে আরোহীর শরীরের নিচের ভাগ গাড়ির গতিপ্রাপ্ত হয় এবং গাড়ির সাথে এগিয়ে চলে। কিন্তু শরীরের উপরের ভাগ স্থিতি জড়তার জন্যে স্থির থাকে। ফলে আরোহী পেছনের দিকে হেলে পড়ে।
ধূলিময় পোশাক লাঠি দিয়ে আঘাত করলে পোশাক সরে যায়। কিন্তু ধূলিকণা স্থিতি জড়তার জন্য নিচে পড়ে যায়।
ক্যারাম বোর্ডের একটি গুটির উপর আর একটি গুটি থাকলে নিচের গুটিকে স্ট্রাইকার দিয়ে জোরে আঘাত করলে নিচের গুটিটি সরে যায়। কিন্তু উপরের গুটিটি স্থিতি জড়তার জন্যে স্থির থাকে। নিচের গুটিটি সরে যাবার কারণে উপরের গুটিটি সেই স্থান অধিকার করে।
ঘোড়া হঠাৎ দৌড়াতে শুরু করলে আরোহীর শরীরের নিচের অংশ ঘোড়ার পিঠের সাথে যুক্ত থাকায় গতিপ্রাপ্ত হয় এবং এগিয়ে চলে। কিন্তু শরীরের ওপরের অংশ স্থিতি জড়তার জন্যে স্থির থাকে। ফলে আরোহী পেছনের দিকে হেলে পড়ে।
গতি জড়তা : গতিশীল বস্তু যে ধর্মের জন্য একই সরলরেখায় গতিশীল থাকতে চায় তাকে গতি জড়তা বলে।
গতি জড়তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত
চলন্ত গাড়ি হঠাৎ থেমে গেলে আরোহীর শরীরের নিম্নভাগ স্থিতি অবস্থায় থাকে। কিন্তু শরীরের উপরিভাগ গতি জড়তার জন্যে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ফলে আরোহী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অভিজ্ঞ আরোহী এই গতি সামলাবার জন্যে পেছনের দিকে হেলে চলন্ত গাড়ি হতে নেমে থাকে।
চলন্ত গাড়িতে কোনো আরোহী একটি রবারের বল সোজা উপরের দিকে ছুড়লে তা গতি জড়তার জন্যে গাড়ির সাথে সাথে চলতে থাকে এবং কিছুক্ষণ পর আরোহীর হাতে ফিরে আসে। আরোহী ও বল উভয়েই গাড়ির গতি পায়। সুতরাং আরোহী ও বল একই দূরত্বে এগিয়ে যায় এবং বলটি আরোহীর হাতে ফিরে আসে।
যখন সার্কাসে গতিশীল ঘোড়ার পিঠ হতে খেলোয়াড় উপর দিকে লাফ দেয় তখন সে গতি জড়তার জন্য পুনরায় ঘোড়ার পিঠে ফিরে আসে।
আমরা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় লাফ দিবার আগে কিছুদূর পেছন হতে দৌড়ে শরীরকে গতি জড়তার প্রভাবে রেখে সামনের দিকে বেশি পরিমান অগ্রসর হবার চেষ্টা করি।
জড়তা কম-বেশি হয় বস্তুর ভরের উপর ভিত্তি করে। যার ভর যত বেশি তার জড়তাও তত বেশি।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অর্ধপরিবাহী কাকে বলে
- আপেক্ষিক রোধ কাকে বলে
- আহ্নিক গতি কাকে বলে
- কোষ প্রাচীর কাকে বলে
- গতিশক্তি (Kinetic Energy)
- ঘাত বল কাকে বলে
- জড়তার ভ্রামক
- তাপমাত্রা কাকে বলে
- ত্বরণ কাকে বলে
- নিউটনের তৃতীয় সূত্র
- পরমশূন্য তাপমাত্রা কাকে বলে
- ভরবেগ কাকে বলে
- ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
- রেস্ট্রিকশন এনজাইম কাকে বলে
- লব্ধি ভেক্টর কাকে বলে