একমুখী বিক্রিয়া
যে সকল রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়া মাধ্যমে উপস্থিত বিক্রিয়ক অণুগুলো নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে বা সংঘর্ষ করে সম্পূর্ণ রূপে উৎপাদে পরিণত হয় তাকে একমুখী বিক্রিয়া বলে। অর্থাৎ এই ধরনের বিক্রিয়াতে সম্পূর্ণ বিক্রিয়ক উৎপাদে পরিণত হয়ে যায়। সেজন্য এই ধরনের বিক্রিয়া উপস্থাপনের সময় তীর চিহ্ন (→) ব্যবহার করা হয়।
যেমন- মিথেনের দহনে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং পানি তৈরি হয়, যেখানে মিথেন এবং অক্সিজেন এরা পুরোপুরিভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং পানিতে পরিণত হয়। তাই এটি একটি একমুখী বিক্রিয়া।
CH4 (g) + 2O2 (g) → CO2 (g) + H2O (l)
একমুখী বিক্রিয়ার কিছু শর্ত আছে, সেগুলো হলো-
- বিক্রিয়া যে পাত্রে ঘটানো হবে সে পাত্রের ঢাকনা অবশ্যই খোলা রাখতে হবে, এর কারণ হচ্ছে যদি কোনো বিক্রিয়া চলাকালীন সময় গ্যাস উৎপন্ন হয় তবে সেই গ্যাস পাত্র থেকে সহজেই উড়ে চলে যেতে পারবে। ফলে বিক্রিয়াটি আর পেছনের দিকে চলে যাবে না।
- বিক্রিয়ার স্থলে উৎপাদ সমুহকে অধঃক্ষিপ্ত হতে হবে। অর্থাৎ কোনো উৎপাদ যদি অধঃক্ষিপ্ত হয় তবে বিক্রিয়ক স্থল থেকে তাদেরকে সহজেই সরিয়ে ফেলা যাবে। ফলে সেই বিক্রিয়াটি আর পেছনের দিকে ফিরে যাবে না।
উভমুখী বিক্রিয়া
যেসব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়া মাধ্যমে উপস্থিত বিক্রিয়ক অণুসমূহ নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে বা সংঘর্ষ করে উৎপাদ উৎপন্ন করে আবার উৎপাদ গুলো পুনরায় নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে বিক্রিয়ক অণু উৎপন্ন করে, তবে সেই সমস্ত বিক্রিয়াকে উভমুখী বিক্রিয়া বলে।
অর্থাৎ এই ধরনের বিক্রিয়া গুলোতে একই সাথে বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদ উৎপন্ন হয় এবং উৎপাদ থেকে বিক্রিয়ক উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে সম্মুখমুখী বিক্রিয়া বলে এবং উৎপাদকে বিক্রিয়ক উৎপন্ন হওয়ার ঘটনাকে পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়া বলে। কাজেই উভমুখী বিক্রিয়াকে একমুখী বিক্রিয়া এবং পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়া ঘটে। উভমুখী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ ধরনের একটা চিহ্ন (⇌) ব্যবহার করি, যেটাকে উভমুখী বিক্রিয়ার সাইন বলা হয়।
যেমন- ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে যদি কোন বদ্ধ পাত্রে রেখে তাপ দেওয়া হয় তবে সেটি ক্যালসিয়াম অক্সাইড এবং কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করবে। যেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইড একটি গ্যাস। বদ্ধ অবস্থায় থাকার ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড কোথাও উড়ে যেতে পারবে না, সেজন্য এটি ক্যালসিয়াম অক্সাইড এর সাথে বিক্রিয়া করে পুনরায় এদের বিক্রিয়ক ক্যালসিয়াম কার্বনেট তৈরি করতে পারবে।
CaCO3 (s) ⇌ CaO (s) + CO2 (g) [বদ্ধ পাত্রে]
উভমুখী বিক্রিয়ার শর্ত
- আবদ্ধ পাত্রে বিক্রিয়া ঘটাতে হবে, যাতে বিক্রিয়া ঘটলে সেই উৎপাদ পুনরায় বিক্রিয়া করতে পারে।
- বিক্রিয়াতে অধঃক্ষেপ পড়া যাবে না। যদি অধঃক্ষেপ পড়ে তবে সেই বিক্রিয়াটি একমুখী বিক্রিয়া হয়ে যাবে।
উভমুখী বিক্রিয়া থেকে একমুখী বিক্রিয়া রূপান্তর
আমরা কয়েকভাবে উভমুখী বিক্রিয়াকে একমুখী বিক্রিয়াতে রূপান্তর করতে পারি।
খোলা পাত্র ব্যবহার করে
একটা খোলা পাত্রে উভমুখী বিক্রিয়া সংগঠন করা হলে যদি কোনো বিক্রিয়কের উৎপাদ সমূহের মধ্যে কোনো একটি উৎপাদ যদি গ্যাসীয় হয় তবে সেসব বিক্রিয়া খোলা ঘটালে বিক্রিয়াটি একমুখী বিক্রিয়া রূপান্তর হবে।
যেমন ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে তাপ সহ উত্তপ্ত করলে সেটি ক্যালসিয়াম অক্সাইড এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করে, যেটিকে বদ্ধ পাত্রে ঘটালে উভমুখী বিক্রিয়া হিসেবে কাজ করবে।
CaCO3 (s) ⇌ CaO (s) + CO2 (g) [বদ্ধ পাত্রে]
কিন্তু পাত্রের ঢাকনা যদি খোলা রাখা হয় তবে কার্বন ডাই-অক্সাইড একটা গ্যাস বলে এটি উড়ে চলে যাবে বিক্রিয়াস্থল থেকে। ফলে এই বিক্রিয়াটি তখন আর পেছনের দিকে যেতে পারবে না, অর্থাৎ এই বিক্রিয়াতে আর ক্যালসিয়াম কার্বনেট বিক্রিয়ক তৈরি হবে না। কাজেই এটি একমুখী বিক্রিয়া হিসেবে কাজ করবে তখন। যেখানে ক্যালসিয়াম কার্বনেট অবিরতভাবে ক্যালসিয়াম অক্সাইড এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করতে থাকবে।
CaCO3 (s) → CaO (s) + CO2 (g) ↑ [খোলা পাত্রে]
বিক্রিয়া অধঃক্ষেপণ
কোনো উভমুখী বিক্রিয়ায় উৎপন্ন উৎপাদ সমূহের যেকোনো উৎপাদ বিক্রিয়াস্থল থেকে অধঃক্ষিপ্ত করে উভমুখী বিক্রিয়াকে একমুখী বিক্রিয়া রূপান্তর করা যায়। যেমন- সোডিয়াম ক্লোরাইড এর সাথে সিলভার নাইট্রেট দ্রবণ যুক্ত করলে সোডিয়াম নাইট্রেট এবং সিলভার ক্লোরাইড উৎপাদ হিসেবে তৈরি হয়, যেখানে সিলভার ক্লোরাইড এর অধঃক্ষেপণ পড়ে বলে এই পুরো বিক্রিয়াটি উভমুখী বিক্রিয়া না হয়ে একমুখী বিক্রিয়া হিসেবে কাজ করে
NaCl (aq) + AgNO3 (aq) → NaNO3 + AgCl (s) ↓
উৎপাদ অপসারণ
বিক্রিয়ায় উৎপন্ন কোনো উৎপাদকে যদি বিক্রিয়াস্থল থেকে আলাদা করে ফেলা যায় তবে সেটি অন্য উৎপাদের সাথে বিক্রিয়া করার সুযোগ পায় না, ফলে সেই বিক্রিয়াটিতে বিক্রিয়ক থেকে কেবল উৎপাদ তৈরি হতে থাকবে, কিন্তু উৎপাদ সরিয়ে ফেলার ফলে সেটি আর বিক্রিয়কে পরিণত হতে পারবে না। এভাবেও উভমুখী বিক্রিয়াকে একমুখী করা যায়।
জুল থমসন প্রভাব
জুল থমসন প্রভাবের মাধ্যমে উৎপাদ অপসারণ করে উভমুখী বিক্রিয়াতে পরিনত করা যায়। একমুখী বিক্রিয়াতে হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া উৎপাদনের সময় জুল থমসন প্রভাব কাজে লাগিয়ে অ্যামোনিয়াকে অপসারণ করে বিক্রিয়াকে একমুখী করা হয়।
রাসায়নিক উপাদানের মাধ্যমে অপসারণ
বিভিন্ন উপাদানের সংযোগের মাধ্যমে বিক্রিয়াস্থল থেকে উৎপাদ অপসারণ করে উভমুখী বিক্রিয়াকে একমুখী বিক্রিয়াতে রূপান্তর করা যায়। যেমন- এস্টার এবং পানির বিক্রিয়াতে কার্বক্সিলিক এসিড এবং অ্যালকোহল তৈরি হয় যেটি একটি উভমুখী বিক্রিয়া।
RCOOR + H2O ⇌ RCOOH + ROH
কিন্তু এই বিক্রিয়াতে যদি সামান্য পরিমাণ সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড যুক্ত করা হয় তবে সেটি উৎপাদের কার্বক্সিলিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণ এবং পানি তৈরি করবে।
RCOOH + NaOH = RCOONa + H2O
এভাবে এই বিক্রিয়ার উৎপাদ থেকে কার্বক্সিলিক এসিড সরিয়ে ফেলা যায়, ফলে বিক্রিয়াটি একমুখী হয়ে যাবে তখন।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

Emtiaz Khan
A person who believes in simplicity. He encourages the people for smart education. He loves to write, design, teaching & research about unknown information.