আইসোটোপ কি?
কোনো বিশেষ মৌলিক পদার্থের সব পরমাণুর নিউক্লিয়াসে সমান সংখ্যক প্রোটন থাকে। তবে মৌলিক পদার্থটির রাসায়নিক ধর্মকে অপরিবর্তিত রেখে নিউক্লিয়াসের নিউট্রন কণার সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে। পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সংখ্যাকে বলে ‘পারমাণবিক সংখ্যা’। অন্যদিকে প্রোটন ও নিউট্রনের সর্বমোট সংখ্যাকে বলে ‘ভর-সংখ্যা’। কোনো পদার্থের রাসায়নিক ধর্মনির্ভর করে তার ‘পারমাণবিক সংখ্যার’ ওপর। অপরদিকে পদার্থের ভৌত ধর্মনির্ভর করতে তার ‘ভর সংখ্যার’ ওপর।
একই মৌলিক পদার্থের পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা যদি সমান থাকে, কিন্তু ভর সংখ্যা আলাদা হয়- তাহলে সেই পরমাণুগুলোকে আইসোটোপ বলে।
উদাহরণ- হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ আছে যথা- প্রোটিয়াম, ডিউটারিয়াম ও ট্রাইটিয়াম। প্রোটিয়ামের আছে একটি প্রোটন, ডিউটারিয়ামের আছে একটি প্রোটন ও একটি নিউট্রন, আর ট্রাইটিয়ামের আছে একটি প্রোটন ও দুটি নিউট্রন।
আইসোটোপগুলি আসলে একটি বিশেষ রাসায়নিক উপাদান যা বিভিন্ন নিউট্রন সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। একটি প্রদত্ত উপাদান তার সমস্ত আইসোটোপ প্রতিটি পরমাণুর মধ্যে একই সংখ্যক প্রোটন আছে। শব্দটি সমান্তরাল গ্রিক শব্দ isos, (সমান) এবং topos (স্থান) থেকে গঠিত, যার অর্থ “একই স্থান”; অর্থাৎ নামের পিছনে অর্থ হল একটি একক উপাদান বিভিন্ন আইসোটোপ পর্যায় সারণিতে একই অবস্থান দখল করে।
আইসোটোপের ধর্ম
একই মৌলিক পদার্থের বিভিন্ন আইসোটোপের রাসায়নিক ধর্ম একই। তবে তাদের ভৌত ধর্ম আলাদা আলাদা।
- প্রায় অধিকাংশ মৌলিক পদার্থগুলোই হলো তাদের নিজস্ব আইসোটোপের মিশ্রণ। অক্সিজেন ও ক্লোরিনের প্রত্যেকের দুটি করে আইসোটোপ আছে।
- কোনো কোনো মৌলিক পদার্থের আইসোটোপ তেজস্ক্রিয়। অর্থাৎ তারা নিজ থেকে অদৃশ্য আলো বিকিরণ করে অন্য মৌলিক পদার্থে রূপান্তরিত হতে পারে।
- ‘মাস-স্পেক্লোগ্রাফ’ বা ভর বর্ণালী চিত্র গ্রাহক যন্ত্রের সাহায্যে কোনো মৌলিক পদার্থের আইসোটোপগুলো আলাদা করা যায়। *তেজস্ক্রিয় বা রেডিও আইসোটোপ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় কণা বেগবর্ধক যন্ত্র।
আইসোটোপের ব্যবহার
-
রেডিও আইসোটোপ আমাদের খুব উপকারী। কোবাল্ট-৬০ আইসোটোপটি ব্যবহার করা হয় শরীরের ক্যান্সার সম্ভাবনাযুক্ত অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধিকে পুড়িয়ে ফেলতে।
-
কার্বন-১৪ ব্যবহৃত হয় মৃত প্রাণী বা উদ্ভিদের বয়স হিসাব করতে। এই প্রক্রিয়ায় বয়সের হিসাব কষাকে বলে ‘তেজস্ক্রিয় তারিখ নিরূপণ’। *আয়োডিনের আইসোটোপ ব্যবহৃত হয় গলগণ্ড রোগের চিকিৎসায়।
-
কৃত্রিম রেডিও আইসোটোপকে রাসায়নিক বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতেও ব্যবহার করা হয়। প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহে বিভিন্ন যৌগের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে নির্ণায়ক হিসেবেও এর ব্যবহার হয়।
-
আইসোটোপের সাহায্যে আজ অনেক রকম রোগ নির্ণয়ও করা হয়ে থাকে।
-
কৃষিক্ষেত্রে পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ রশ্মি ব্যবহার করা হয়।
-
তেজস্ক্রিয় রশ্মিতে ব্যাকটেরিয়া মারা যায় তাই খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ রশ্মি ব্যাবহার করা হয়।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

Sadia Munmun Tumpa
I am just a girl chasing her dreams, owning all the colors of life, giving you a big smile though dealing with silly problems.
Related posts:
- অণু ও পরমাণু (Molecules and Atoms)
- অ্যাভোগাড্রোর সূত্র (Avogadro’s Law)
- আইসোটোপের পারমাণবিক ভর (Atomic Mass of Isotope)
- আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা
- কোয়ার্ক, গ্লুয়ন এবং কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমা (Quark, Gluon & Quark-Gluon Plasma)
- ডালটনের পারমাণবিক মতবাদ (Dalton’s Atomic Theory)
- তড়িৎ সংক্রান্ত ইলেকট্রন মতবাদ (Electron theory Relating Electricity)
- তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার (Uses of Radioactive Isotopes)
- ধ্বনিতত্ত্ব
- পরমাণুতে প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন সংখ্যার সম্পর্ক (Relation of number of Protons, Electrons and Neutrons in an Atom)
- পরমাণুর গঠন (Structure of Atom)
- পরমাণুর মূল কণিকা
- পারমাণবিক ভর ও আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর (Atomic Mass and Relative Atomic Mass)
- মৌলিক ও লব্ধ রাশি (Fundamental and Derived Quantities)
- মৌলিক বল ও তাদের প্রকারভেদ (Basic Forces & their Types)