গ্যাসের গতিতত্ত্ব (Kinetic Theory of Gases)

বিভিন্ন গ্যাসের রাসায়নিক ধর্ম ও আণবিক সংকেত সম্পূর্ণ ভিন্ন, আবার কিছু কিছু ভৌত ধর্ম (যেমন স্ফুটনাঙ্ক, বর্ণ প্রভৃতি) ভিন্ন। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে সব গ্যাস কয়েকটি ক্ষেত্রে একইরূপ আচরণ করে। যেমন সব গ্যাসই বয়েল সূত্র, চার্লস সূত্র, অ্যাভোগাড্রো সূত্র প্রভৃতি মেনে চলে। সুতরাং বোঝা যায় যে, গ্যাসীয় অবস্থায় সব পদার্থ কিছু বিশেষ ধরনের আচরণ করে, যার ফলশ্রুতিতে এ সব সূত্র মেনে চলে।

গ্যাসসমূহের সাধারণ ভৌত ধর্মসমূহ ব্যাখ্যার জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত করেন। তন্মধ্যে যে ধারণাসমূহ গৃহীত হয়েছে, তাদের সমষ্টিগত রূপকে গ্যাসের গতিতত্ত্ব বলা হয়। উল্লেখ্য যে, গ্যাসের সাধারণ ধর্মাবলি ব্যাখ্যায় যে স্বীকার্যসমূহ প্রস্তাবিত হয়েছিল, তা অণুর ধারণার পূর্বেই করা হয়েছিল। 

 

গ্যাসের গতিতত্ত্বের স্বীকার্যসমূহ

১. গ্যাসের ক্ষুদ্রতম কণা : যেকোনো গ্যাস এর অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণিকার সমন্বয়ে গঠিত। যেকোন গ্যাসের কণিকাসমূহের ভর পরস্পর সমান। বর্তমানে অ্যাভোগাড্রোর সূত্র অনুসারে এবং আধুনিক রসায়নের ধারণা অনুযায়ী এ কণিকাসমূহকে অণু (molecule) বলা হয়।

২. গ্যাসের অণুসমূহের আয়তন : অণুসমূহের মোট আয়তন গ্যাসাধারের আয়তনের তুলনায় অতি নগণ্য।

৩. অণুসমূহের মধ্যে আকর্ষণ : অণুসমূহের নিজের মধ্যে এবং অণু ও গ্যাসাধারের দেওয়ালের মধ্যে কোন আকর্ষণ বা বিকর্ষণ নেই।

৪. অণুসমূহের গতির প্রকৃতি : গ্যাসের অণুসমূহ সব সময় খুব দ্রুতগতিতে সরলরৈখিক পথে ইতস্ততভাবে সব দিকে ছুটাছুটি করে। ফলে অণুসমূহের পরস্পরের সাথে ‘আণবিক সংঘর্ষ’ এবং গ্যাসাধারের দেওয়ালের সাথে অবিরাম সংঘর্ষ ঘটে। এ সংঘর্ষের ফলে অণুসমূহের গতির দিক পরিবর্তিত হয়। গ্যাসের অণুসমূহের প্রচণ্ড গতির উপর অভিকর্ষ শক্তির কোন প্রভাব নেই। দুটো আণবিক সংঘর্ষের মধ্যবর্তী সরলরৈখিক গতিপথের দূরত্বসমূহের গড়মানকে গ্যাস অণুর গড় মুক্ত পথ বলা হয়।

৫. অণুসমূহের মধ্যে সংঘর্ষের প্রকৃতি : অণুসমূহ গোলাকার, কঠিন ও সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক (perfectly elastic)। যেহেতু অণুসমূহ স্থিতিস্থাপক, সেহেতু যখন তাদের পরস্পরের সাথে বা দেওয়ালের সাথে সংঘর্ষ ঘটে, তখন তাদের গতিশক্তি অভ্যন্তরীণ বা অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয় না। অর্থাৎ অণুসমূহের সংঘর্ষ সমূহও সম্পূর্ণরূপে স্থিতিস্থাপক। অণুসমূহের মধ্যে শুধু সংঘর্ষের জন্য যে সময় ব্যয় হয় তা দুটো সংঘর্ষের মধ্যবর্তী সময়ের তুলনায় অনেক কম।

৬. গ্যাসের চাপ সৃষ্টি :  গ্যাসাধারের দেওয়ালের উপর গ্যাসের অণুসমূহের অবিরাম সংঘর্ষের ফলেই গ্যাসের চাপের সৃষ্টি হয়।

৭. অণুসমূহের মোট গতিশক্তি : অণুসমূহের মোট গতিশক্তি তথা প্রতিটি অণুর গড় গতিশক্তি গ্যাসের পরম তাপমাত্রার সমানুপাতিক।

গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে তাত্ত্বিকভাবে দেখানো যায় যে, যদি কোন আদর্শ গ্যাসের আয়তন V, এর চাপ P, প্রতিটি গ্যাস অণুর ভর m, নমুনায় গ্যাস অণুর সংখ্যা N এবং গ্যাস অণুসমূহের বর্গমূল-গড়-বর্গ গতিবেগ c হয়, তবে—

PV = (1/3) mNc²

এ সমীকরণকে আদর্শ গ্যাসের গতীয় সমীকরণ (Kinetic equation of ideal gases) বলা হয়। বিজ্ঞানী ক্লসিয়াস (R.J. Clausius) আদর্শ গ্যাসের গতীয় সমীকরণটি প্রতিষ্ঠা করেন।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool