রসায়ন পরীক্ষাগারে কাজ করার আগে কিছু জিনিস আমাদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই জিনিসগুলো হলো-
অ্যাপ্রন (Apron)
ল্যাবরেটরিতে কাজ শুরু করার আগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অ্যাপ্রন বা ল্যাব কোট পরিধান করতে হবে। ল্যাবরেটরিতে সাধারণত সুতি কাপড়ের হাফ-হাতা সাদা অ্যাপ্রন ব্যবহার করা হয়। ফলে কোনো রাসায়নিক পদার্থ অথবা বুনসেন বার্নারের শিখা শরীরের সংস্পর্শে আসে না। এছাড়া ল্যাব কোট সাদা কাপড়ের হয় যাতে এটি তাপশক্তি বিকিরণ করতে পারে।
ল্যাব কোট বা অ্যাপ্রনের প্রয়োজনীয়তা গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
- ল্যাবরেটরিতে কাজ শুরু করার আগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং ঠিকমত অ্যাপ্রন পরিধান করতে হবে।
- অ্যাপ্রন রাসায়নিক দ্রব্য থেকে কলেজের ইউনিফর্মকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
- অ্যাপ্রন রাসায়নিক পদার্থের স্পর্শ থেকে শরীরের ত্বক রক্ষা করতে এবং ঝুঁকিমুক্ত হয়ে পরীক্ষাগারে কাজ করতে সহায়তা করে।
নিরাপদ চশমা (Safety Glass)
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার সময়ে যাতে কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ অথবা বিষাক্ত ধোঁয়া চোখের মধ্যে না আসে তার জন্য নিরাপদ চশমা অথবা গগলস ব্যবহার করতে হয়।
মাস্ক (Mask)
পরীক্ষাগারে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিক্ষায় CO₂, SO₂, NO₂, H₂S ইত্যাদি ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হয় যার প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যাথা বা চোখের ক্ষতি হতে পারে। তাই এসব ক্ষতিকর গ্যাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের মাস্ক পরতে হবে।
জুতা ও ক্যাপ (Shoes and Cap)
নিরাপদে কাজ করার সুবিধার্থে স্যান্ডলের পরিবর্তে পায়ে জুতা পরতে হবে এবং লম্বা চুল বেঁধে মাথায় ক্যাপ পরতে হবে।
হ্যান্ড গ্লাভস (Hand Gloves)
পরীক্ষাগারে কাজ করার সময়ে রাসায়নিক পদার্থের বোতল থেকে এসিড, ক্ষার এবং অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে কাজ করতে হয়। অসাবধান হয়ে কাজ করলে অনেক সময়ে রাসায়নিক দ্রব্যাদি হাতের সংস্পর্শে আসলে চামড়ার এবং হাতের ক্ষতি হতে পারে। সেজন্য পরিবেশবান্ধব হ্যান্ড গ্লাভস পরে কাজ করতে হবে।
এখন আমরা বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ড গ্লাভস এবং তাদের ব্যবহার নিয়ে জানবো।
- জিটেক্স গ্লাভস (Zetex Gloves): জ্বলন্ত বস্তু নিয়ে কাজ করার সময়ে জিটেক্স বা সিনথেটিক গ্লাভস ব্যবহার করা হয়।
- লাটেক্স গ্লাভস (Latex Gloves): চামড়ার ক্ষয় ও জ্বালাতনকারী রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করার সময়ে PVC (Poly Vinyl Chloride) দিয়ে তৈরি লাটেক্স গ্লাভস ব্যবহাঁর করা হয়। এই গ্লাভস অধিক দাহ্য এবং পচনশীল হয় না।
- ভিনাইল গ্লাভস (Vinyl Gloves): মৃদু ক্ষতিকর পদার্থ নিয়ে কাজ করার সময়ে ভিনাইল গ্লাভস ব্যবহার করা হয়। এই গ্লাভসও অধিক দাহ্য এবং পচনশীল হয় না।
- নিওপ্রিন গ্লাভস (Neoprene Gloves): মৃদু ক্ষতিকর পদার্থ, তেল জাতীয় পদার্থ এবং জৈব দ্রাবক পদার্থ নিয়ে কাজ করার সময়ে পলিক্লোরোপিন দিয়ে তৈরি নিওপ্রিন গ্লাভস ব্যবহার করা হয়।
ল্যাবরেটরির নিরাপত্তা নির্দেশনা
- ল্যাবরেটরিতে যদি কোনো যন্ত্রপাতি ভেঙে যায় তবে সেই ভাঙ্গা কাঁচগুলোকে একটা নির্দিষ্ট ধারকে সংগ্রহ করতে হবে।ধারকটি শুধুমাত্র ভাঙ্গা কাজ সংগ্রহ করার জন্যই ব্যবহার করতে হবে।
- কাঁচের তৈরি যেকোনো পাত্রকে উত্তপ্ত করার আগে পাত্রটির গায়ে কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে।
- উত্তপ্ত কোনো কাঁচের পাত্রকে সাথে সাথে ঠান্ডা করা যাবে না, এতে সেই পাত্রটি ভেঙে যেতে পারে। সেজন্য উত্তপ্ত গ্লাসের তৈরি পাত্রকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করতে হবে।
- রাসায়নিক যৌগ যেসব পাত্রে রাখা হয় প্রতিটা পাত্রের গায়ে লেবেল লাগিয়ে দিতে হবে যাতে সহজেই সে সব রাসায়নিক পদার্থগুলো কে চেনা যায়। একই সাথে এসব রাসায়নিক দ্রব্যের ঘনমাত্রা কত সেটাও লেবেলে লিখে দিতে হবে।
- উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপে যদি কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো হয় তবে কাঁচের তৈরি যন্ত্রপাতির স্টপার ঢিলা রাখতে হবে যাতে বিক্রিয়ায় উৎপন্ন উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপ কোন বিস্ফোরণ ঘটাতে না পারে।
- কোনো রাসায়নিক যন্ত্রপাতিতে তাপ দেওয়ার সময় সেটি গরম হয় ফেটে যেতে পারে তাই ভেঙ্গে যাওয়া কাঁচের টুকরা যাতে আমাদের চোখে ক্ষতি না করে সেজন্য চোখে নিরাপদ চশমা ব্যবহার করতে হবে।
- কোনো এক্সপেরিমেন্ট শেষ হয়ে গেলে কাঁচের যন্ত্রপাতিগুলো ভালোমতো পরিষ্কার করে নিতে হবে, তা না হলে পরবর্তীতে ওই সব যন্ত্রপাতি দিয়ে যদি এক্সপেরিমেন্ট করা হয় তবে সেটির রেজাল্ট ভুল আসতে পারে।
ল্যাবরেটরির দুর্ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসা
ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব না। তাই দুর্ঘটনার প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োজন। আমরা এবার জানবো ল্যাবরেটরি তে কি কি ধরনের দুর্ঘটনার ফলে কোন কোন প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়।
আগুনে পুড়লে
যদি এসিড কিংবা আগুন এর ফলে আমাদের শরীরের কোনো অংশ পুড়ে যায় তবে সেই জায়গাটিতে প্রচুর পরিমাণ পানি ঢালতে হবে। পানি ঢালার পর সেই জায়গাটিতে বার্নল ক্রিম লাগিয়ে দিতে হবে।
আগুন লাগলে
ল্যাবরেটরিতে আগুন লাগলে সাথে সাথে আগুনের উৎস বা আগুনের লাইনকে বন্ধ করে দিতে হবে। তারপর আগুন নেভানোর জন্য অগ্নিনির্বাপক ব্যবহার করতে হবে।
শরীরে এসিড লাগলে
যদি কোনো কারণে আমাদের শরীরে এসিড লেগে যায় তবে পানি দিয়ে সে জায়গাটি ভালোমতো ধুতে হবে। তারপর সোডিয়াম বাই কার্বনেট (Na2CO3) এর পাতলা আবরণ দিয়ে সেই জায়গাটিকে পরিষ্কার করতে হবে। পরবর্তীতে আমাদের অবশ্যই হসপিটালে যেতে হবে।
শরীরে ক্ষার লাগলে
শরীরের কোনো অংশে ক্ষার লাগলে সেই জায়গাটিকে পানি দিয়ে ভালোমতো পরিষ্কার করতে হবে। তারপর সেই জায়গাটিকে বোরিক এসিডের দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ক্রাশ স্কুলের Youtube চ্যানেলের জয়েন করুন-
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- Potentiometer কে Rheostat হিসেবে ব্যবহার
- আইসোটোপ (Isotope)
- আদর্শ গ্যাস সমীকরণের বিভিন্ন রূপ ও ব্যবহার (Different forms of Ideal Gas Equation & It’s Usage)
- ইলেকট্রন বিন্যাসের নীতি (Rules of Electronic Configuration)
- কম্পিউটার তৈরিতে প্রধানত কোন ধাতু ব্যবহার করা হয়?
- জৈব যৌগের সূচনা (Principle of Organic Chemistry)
- তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার (Uses of Radioactive Isotopes)
- দেহে পানির ঘাটতি হলে কী অসুবিধা দেখা দেয়?
- নেটওয়ার্ক ডিভাইস : রিপিটার (Network Device: Repeater)
- পরিবেশের উপর ল্যাবরেটরি সামগ্রীর প্রভাব (The effect of the laboratory material on the environment)
- প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ (Primary & Secondary Standard Reagents)
- রংয়ের ব্যবহার শুরু হয়েছিল কখন?
- ল্যাবরেটরির কাঁচ সামগ্রী (Laboratory Glass Materials)
- সবুজ রসায়ন (Green Chemistry)
- সি++ প্রোগ্রামিং ভাষা (C++ Programming Language)