কোনো বস্তুকে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে মুক্তভাবে পড়তে দিলে বস্তুর গতি তিনটি সূত্র মেনে চলে। 1589 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও (Galileo) এই সূত্র তিনটি আবিষ্কার করেন। এগুলোকে পড়ন্ত বস্তুর সূত্র বলা হয়। সূত্রগুলো হচ্ছে-
১ম সূত্র : বায়ুশূন্য স্থানে বা বাধাহীন পথে সকল বস্তুই নিশ্চল অবস্থা হতে যাত্রা করে সমান দ্রুততায় নিচে নামে, অর্থাৎ সমান সময়ে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে।
ছোট, বড় ও বিভিন্ন ওজনের কতকগুলো বস্তু একই উচ্চতা হতে ও স্থিরাবস্থা হতে ছেড়ে দিলে বাধাহীন পথে তারা সমান দ্রুততায় অর্থাৎ সমান ত্বরণে গতিশীল থাকবে এবং একই সময়ে মাটিতে পড়বে।
২য় সূত্র : বাধাহীন পথে পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্ত বেগ ঐ সময়ের সমানুপাতিক। কোনো পড়ন্ত বস্তু t সময়ে v বেগ প্রাপ্ত হলে, গাণিতিকভাবে লেখা যায়-
v ∝ t
অভিকর্ষের টানে স্থিরাবস্থা হতে বাধাহীন পথে নিচের দিকে পড়বার সময় কোনো বস্তুর বেগ যদি এক সেকেন্ড পরে v হয় তবে তার বেগ দুই সেকেণ্ড পরে 2v, তিন সেকেণ্ড পরে 3v হবে। সাধারণভাবে বলা যায় যে, কোনো একটি পড়ন্ত বস্তুর বেগ t1 ও 12 সময়ে যথাক্রমে v1 ও v2 হলে-
v1 / t1 = v2 / t2
or, v ∝ t
৩য় সূত্র : বাধাহীন পথে পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্ব ঐ সময়ের বর্গের সমানুপাতিক।
কোনো পড়ন্ত বস্তু t সময়ে h দূরত্ব অতিক্রম করলে গাণিতিক নিয়মে লেখা যায়-
h ∝ t2
অভিকর্ষের টানে স্থিরাবস্থা হতে বাধাহীন পথে নিচের দিকে পড়বার সময় কোনো বস্তু যদি প্রথম সেকেন্ডে h দূরত্ব অতিক্রম করে তবে বস্তুটি দুই সেকেন্ডে 22h, তিন সেকেণ্ডে 32h দূরত্ব অতিক্রম করবে।
কাজেই বস্তুটি t1 ও t2 সেকেণ্ডে যথাক্রমে h1 ও h2 দূরত্ব অতিক্রম করলে,
h1 / t12 = h2 / t22
or, h ∝ t2
গিনি ও পালক পরীক্ষা
এটা নিউটনের একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার সাহায্যে তিনি পড়ন্ত বস্তুর প্রথম সূত্রের সত্যতা প্রমাণ করেন। এই পরীক্ষায় একটি গিনি বা স্বর্ণ মুদ্রা এবং একটি পালক ব্যবহার করা হয়েছিল বলে এই পরীক্ষার নাম হয় গিনি ও পালক পরীক্ষা।
যন্ত্রের বর্ণনা : এই পরীক্ষায় এক মিটার লম্বা দুই মুখ খোলা মোটা ফাঁপা একটি শক্ত কাচ নল নেয়া হয়। নলের এক প্রান্তে একটি ধাতব টুপি থাকে। নলের অপর প্রান্তে একটি স্টপ-কক লাগানো আছে যাতে নলটিকে একটি বায়ু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাথে যুক্ত করা যেতে পারে।
প্রথমে ধাতব টুপি খুলে একটি গিনি পাথর ও একটি পালককে নলের মধ্যে ঢুকানো হয়। নলের অপর প্রান্ত বায়ু নিষ্কাশন পাম্পের সাথে যুক্ত করে স্টপ-কক খুলে দিয়ে নলের মধ্য হতে সমস্ত বায়ু বের করে নিয়ে স্টপ-ককটি বন্ধ করা হয়। এ অবস্থায় নলটিকে হঠাৎ উল্টিয়ে ধরলে দেখা যাবে গিনি এবং পালক নলের অপর প্রান্তে একই সঙ্গে নেমে গেছে। পুনরায় বাতাস ঢুকিয়ে নলটিকে উল্টিয়ে ধরলে গিনিটি পাথরকে পালকের আগেই নলের অপর প্রান্তে যেতে দেখা যাবে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বায়ুশূন্য স্থানে সকল বস্তুই নিশ্চল অবস্থা হতে যাত্রা করে সমান দ্রুততায় নিচে নামে। অতএব প্রথম সূত্রটি প্রমাণিত হলো।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অ্যাভোগাড্রোর সূত্র (Avogadro’s Law)
- কুলম্বের সূত্র (Coulomb’s law)
- গতির প্রকারভেদ (Kinds of Motion)
- গলজি বস্তুর প্রধান কাজ কী?
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব থেকে গ্যাসীয় সূত্র সমূহের উপপাদন (Deduction of Gas Laws From Kinetic Theory of Gases)
- গ্যাসের সূত্রসমূহ (Laws of Gases)
- দ্রুতি ও বেগ (Speed and Velocity)
- নিউটনের তৃতীয় সূত্র (Newton’s Third Law)
- নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton’s Law of Gravitation)
- পড়ন্ত বস্তুর সূত্রাবলি (Formulas of Falling Objects)
- প্রসঙ্গ বিন্দু ও প্রসঙ্গ কাঠামো (Reference Point & Reference Frame)
- বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সমন্বয় (Combination of Boyle’s, Charles’ and Avogadro’s Laws)
- ভরবেগের নিত্যতা সূত্র : উদাহরণ
- রোধের সূত্র এবং আপেক্ষিক রোধ (Laws of Resistance & Specific Resistance)
- সরল দোলকের সূত্রাবলি (Laws of Simple Pendulum)