অ্যানড্রুজের পরীক্ষা হতে গ্যাসের তরলীকরণের জন্য কিছু শর্ত তৈরি হয়, সেগুলো হচ্ছে-
a) তরলীকরণের আগে যেকোন গ্যাসের তাপমাত্রা তার সন্ধি তাপমাত্রার নিচে আনতে হবে। গ্যাসের তাপমাত্রা সন্ধি তাপমাত্রা হতে যত নিচে হবে, গ্যাসের তরলীকরণ তত সহজ হবে।
b) গ্যাসের সন্ধি তাপমাত্রার নিচে তাপমাত্রা কমানোর পর গ্যাসের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। যে কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সে পদার্থের বাষ্পীয় চাপের চেয়ে বেশি চাপ প্রয়োগ করলে গ্যাসটি তরলে পরিণত হবে। তাপমাত্রা যত কমে বাষ্পীয় চাপও তত কমে। সুতরাং গ্যাসের তাপমাত্রা যত কম হবে, এর তরলীকরণের প্রয়োজনীয় চাপও তত কম লাগবে।
তরলীকরণে সন্ধি তাপমাত্রার গুরুত্ব
গ্যাস তরলীকরণে গ্যাসের সন্ধি তাপমাত্রার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ সন্ধি তাপমাত্রার নিচে গ্যাসের উপর প্রয়োজনীয় চাপ প্রয়োগ করে গ্যাসকে তরলীভূত করা সম্ভব। কিন্তু গ্যাসের তাপমাত্রা সন্ধি তাপমাত্রার উপরে হলে যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করেও গ্যাসকে তরলীভূত করা যায় না। সুতরাং যে কোন গ্যাসকে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় শীতল করে এবং তার উপর উপযুক্ত চাপ প্রয়োগ করে তাকে তরলে পরিণত করা যায়।
গ্যাসকে তরলীকরণের প্রচলিত কয়েকটা পদ্ধতি হচ্ছে-
- হিমমিশ্র প্রয়োগ করে
- জুল-থমসন প্রভাব
- ক্লড পদ্ধতি
- উদ্বায়ী তরলকে বাষ্পীকরণ
- লিন্ডে পদ্ধতি
a) হিমমিশ্র প্রয়োগ : যে সব গ্যাসের স্ফুটনাঙ্ক খুব বেশি নয় (যেমন- NH3, SO2, H2S, C2H4), তাদেরকে বিভিন্ন হিমমিশ্র ব্যবহার করে সরাসরি তরলিত করা হয়। হিমমিশ্র রূপে খাদ্য লবণ ও বরফ ব্যবহার করে -20° C, বিগলিত CaCl2 ও বরফ ব্যবহার করে -54°C এবং ড্রাই আইস বা কঠিন CO2 ও ইথার মিশ্রণ ব্যবহার করে -110°C পর্যন্ত কম তাপমাত্রায় পৌঁছানো যায়।
b) জুল-থমসন প্রভাব প্রয়োগ : বিজ্ঞানী জুল ও থমসন পরীক্ষা করে দেখেন যে, অনেক বেশি চাপে আবদ্ধ পাত্রের গ্যাসকে যখন সচ্ছিদ্র প্লাগ বা ছিপির মধ্য দিয়ে হঠাৎ কম চাপ বিশিষ্ট বিশাল স্থানে প্রসারিত হতে দেয়া হয়, তখন গ্যাসের তাপমাত্রা কমে যায়। এই ঘটনাকে জুল-থমসন প্রভাব বলে। কারণ গ্যাসের প্রসারণের সময় গ্যাসকে কাজ করতে হয়। যেমন, গ্যাস প্রসারিত হবার সময় এর সামনের গ্যাসকে ধাক্কা দিয়ে পেছনের দিকে সরাতে হয়। তখন গ্যাসের অণুগুলোকে তাদের আন্তঃআণবিক আকর্ষণের বিরুদ্ধে কাজ করে অনেক দূরে দূরে ছড়িয়ে পড়তে হয়। যদি এই আয়তনের প্রসারণ খুব দ্রুত ঘটে তখন গ্যাস অণুগুলো পরিবেশ থেকে তাপ শক্তি শোষণ করতে পারে না। তাই গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি ব্যবহৃত হয় এবং গ্যাসটির তাপমাত্রা কমে যায়। এ প্রক্রিয়ায় গ্যাসটির তাপমাত্রা সন্ধি তাপমাত্রার নিচে আসলে তখন উপযুক্ত চাপে গ্যাসটি তরলীভূত হয়।
বাণিজ্যিকভাবে বায়ুর তরলীকরণ জুল-থমসন প্রভাব প্রক্রিয়ায় করা হয়। বায়ুকে তরলীভূত করার আগে তাকে কিছুটা ঠাণ্ডা করে তারপর জুল-থমসন সম্প্রসারণ ঘটিয়ে তাপমাত্রা অনেক ঠাণ্ডা করা হয় এবং এই সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া কয়েকবার ঘটিয়ে বায়ুর তাপমাত্রা অনেক বেশি কমানো হয়। পরে -200°C তাপমাত্রা এবং প্রায় 200 atm চাপে বায়ুকে তরলীভূত করা হয়।
হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস তরলীকরণ সবচেয়ে কঠিন। কেননা, -80°C তাপমাত্রার উপরে হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে এবং −240°C তাপমাত্রার উপরে হিলিয়ামের ক্ষেত্রে জুল-থমসন সম্প্রসারণে গ্যাসের তাপমাত্রা না কমে বরং বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তাপমাত্রা কমার পরিবর্তে গ্যাসের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকে ঐ গ্যাসের উৎক্রম (inversion) তাপমাত্রা বলা হয়। অর্থাৎ H2 এর উৎক্রম তাপমাত্রা হল -80° C এবং হিলিয়ামের উৎক্রম তাপমাত্রা -240°C। গ্যাসের উৎক্রম তাপমাত্রা হল এমন একটি তাপমাত্রা যার থেকে কম তাপমাত্রায় গ্যাসটির রুদ্ধতাপীয় সম্প্রসারণ ঘটলে তা শীতল হয়ে থাকে। সুতরাং প্রথমে তরল বায়ু দ্বারা হাইড্রোজেনকে শীতল করে অতঃপর জুল-থমসন সম্প্রসারণ দ্বারা একে আরো শীতল করে উচ্চচাপে তরল করা হয়। অপরদিকে তরল হাইড্রোজেন দ্বারা হিলিয়াম গ্যাসকে যথেষ্ট ঠাণ্ডা করে তারপর জুল-থমসন সম্প্রসারণ ঘটিয়ে আরো শীতল করে প্রবল চাপ প্রয়োগ করে হিলিয়ামকে তরলিত করা হয়।
উৎক্রম তাপমাত্রার গুরুত্ব
(১) গ্যাসের নিজস্ব উৎক্রম তাপমাত্রার নিচে প্রাথমিক তাপমাত্রা না থাকলে জুল-থমসন প্রক্রিয়া প্রয়োগে গ্যাসটিকে শীতল তথ্য তরলীকৃত করা সম্ভব হবে না।
(২) জুল-থমসন প্রক্রিয়া প্রয়োগ করার পূর্বেই গ্যাসটিকে উৎক্রম তাপমাত্রার নিচে অন্য শীতলীকরণ পদ্ধতিতে শীতল করে জুল-থমসন প্রক্রিয়া পরপর প্রয়োগ করে গ্যাসটি সন্ধি তাপমাত্রায় বা এর নিচে রেখে প্রয়োজনীয় চাপ প্রয়োগ করলে গ্যাসটি তরলীভূত হবে। এখানেই উৎক্রম তাপমাত্রার গুরুত্ব। যেমন-
- H2 গ্যাসের উত্তম তাপমাত্রা হল -80°C, এর সন্ধি তাপমাত্রা Tc = -239.65°C, সন্ধি চাপ Pc = 12.8 atm.
- হিলিয়াম (He) এর উৎক্রম তাপমাত্রা -240°C, এর সন্ধি তাপমাত্রা Tc = -267.65°C, সন্ধি চাপ Pc = 1.26 atm
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
Related posts:
- অ্যাভোগাড্রোর সূত্র
- আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাস
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব (Kinetic Theory of Gases)
- গ্যাসের ঘনত্বের উপর চাপের প্রভাব
- গ্যাসের সূত্রসমূহ
- চার্লসের সূত্র
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্র
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্রের প্রয়োগ
- নিঃসরণ
- পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার কারণ (Causes of Different States of Matter)
- পরম তাপমাত্রা স্কেল
- পরমশূন্য তাপমাত্রা কাকে বলে
- বয়েলের সূত্র
- বাস্তব গ্যাসের জন্য অ্যামাগা’র পরীক্ষা
- বাস্তব গ্যাসের প্রেষণ গুণাঙ্ক ও আদর্শ আচরণ