তরল স্ফটিক ও প্লাজমা

তরল স্ফটিক

তরল পদার্থের অণু গুলোর মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক বিন্যাস থাকে না, তাই তরলের প্রবাহ-ধর্ম (fluidity) থাকে। অন্যদিকে, কেলাসাকার কঠিন পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক বিন্যাস থাকে, তাই কঠিন পদার্থের প্রবাহ-ধর্ম থাকে না। কিন্তু কঠিন পদার্থের দৃঢ়তা ধর্ম (rigidity) থাকে। এমন কিছু কেলাসাকার জৈব পদার্থ আছে, তাদেরকে তাপ দিলে তারা সরাসরি কঠিন থেকে স্বচ্ছ তরলে পরিণত হওয়ার আগে হঠাৎ একটি অসচ্ছ তরলে পরিণত হয়। এ অবস্থায় পদার্থটি তরলের মত কিছুটা প্রবাহ ধর্ম ও পৃষ্ঠটান ধর্ম এবং কঠিন কেলাস বা স্ফটিকের মত দৃঢ়তা ধর্ম ও আলোক ধর্ম দেখায়। তাই পদার্থের এ অবস্থাকে তরল স্ফটিক অবস্থা বলে। তরল স্ফটিক অবস্থাটি দুটি তাপমাত্রার সূক্ষ্ম ব্যবধানে অবস্থান করে।

এখানে প্রথম তাপমাত্রাকে গলন তাপমাত্রা (melting temperature) এবং পরের তাপমাত্রাকে ঐ পদার্থের স্বচ্ছকরণ তাপমাত্রা (clearing/transparency temperature) বলা হয়।

তরল স্ফটিকের কিছু গাঠনিক বৈশিষ্টা থাকে। যেমন-

  • সব তরল স্ফটিক হলো জৈব যৌগ এবং তাদের দীর্ঘ আণবিক গঠনের এক প্রান্তে পোলার গ্রুপ যেমন -CN, -NO2, -NH ও -OR ইত্যাদি থাকে। পোলার গ্রুপ থাকায় অণু গুলোতে প্রবল ডাইপোল (বা দুই দিকে মেরু) প্রভাব তৈরি হয়।
  • তরল স্ফটিক যৌগের অণুতে বেনজিন বলয়যুক্ত চ্যাপ্টা অংশ এবং দ্বিবন্ধনযুক্ত গ্রুপ যেমন C=C, N=N গ্রুপ থাকে। ফলে অণুটি অক্ষ বরাবর ঘুরতে গিয়ে বাঁধা পায়। তাই ঐ অংশের অণুটি দৃঢ় হয় এবং অপর অংশের অণুটি নমনীয় থাকে।

তরল স্ফটিকের একটা উদাহরণ হচ্ছে-

4′- পেন্টাইল বাইফিনাইল-4-কার্বোনাইট্রাইল।

আরো কিছু তরল স্ফটিক যৌগের নাম হচ্ছে-

4-বিউটাইল অক্সি-4’-ইথানোয়িল অ্যাজো বেনজিন,

4,4′-ডাইমিথোক্সি অ্যাজোক্সি বেনজিন,

ন্যাফথেলিন ডাইকার্বক্সিলিক এসিড ও ডাইঅল এর পলি এস্টার

 

তরল স্ফটিকের ব্যবহার

তরল স্ফটিক অবস্থায় পদার্থগুলো আলোক ধর্ম (optical properties) দেখায়। তাই ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, যেমন ক্যালকুলেটর, ইলেকট্রনিক ঘড়িতে প্রদর্শনী-পদার্থ (digit প্রদর্শনী) রূপে তরল স্ফটিক ব্যবহৃত হয়।

তরল স্ফটিক তাপমাত্রা সংবেদক (temperature Sensor) হিসেবে কাজ করে। মানুষের শরীরে রক্ত প্রবাহ হবার ধমনী ও শিরা এলাকার ত্বকের তাপমাত্রা অন্য অংশ থেকে কিছুটা বেশি থাকে দেহ-ত্বকের তাপমাত্রার পার্থক্যের পরিসরে তরল স্ফটিক আলোক ধর্ম দ্বারা রঙ পরিবর্তনের পূর্ণ রেঞ্জ (violet to red) প্রকাশ করে। এভাবে স্ক্রিন থার্মোগ্রাফির সাহায্যে স্তন ক্যানসার, শিরা-ধমনীতে রক্ত প্রবাহে বাঁধা বা blockage শনাক্তকরণ যন্ত্রে তরল স্ফটিক ব্যবহৃত হয়।

 

প্লাজমা

অনেক বেশি তাপমাত্রায় যেমন- 104-105 K (কেলভিন) তাপমাত্রায় কোন কোন পদার্থ গ্যাসীয় অবস্থার পর তাদের পরমাণু থেকে ইলেকট্রন বের করে আয়নিত অবস্থায় থাকে। গ্যাসীয় অবস্থায় এদের ধনাত্মক আয়ন ও ইলেকট্রনের পাশাপাশি থাকা এবং একই সাথে এদের বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ রূপে থাকায় পদার্থের এই অবস্থাকে প্লাজমা অবস্থা বলে। নিউক্লিয়ার ফিউশান (fusion) গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নক্ষত্র ও সূর্যের মাঝে প্লাজমার উপস্থিতি জানা যায়। সূর্যের তাপমাত্রা প্রায় এক কোটি কেলভিন, 107K। হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ফিউশান প্রক্রিয়ায় এ তাপমাত্রা তৈরি হয়। তাই সূর্যে প্লাজমা ধরনের পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool