পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা

এ পৃথিবীতে যা দেখা যায়, যা অনুভব করা, তাদেরকে দুটো ভাগে বিভক্ত করা যায়। অর্থাৎ এই বিশ্ব প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের কাছে দু’ভাগে বিভক্ত-

  • পদার্থ (matter) ও
  • বিকীর্ণ শক্তি (radiant energy)

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বস্তু যেমন চেয়ার, টেবিল, কাগজ, কলম, এমনকি যা আমরা খাই বা বর্জন করি, এরা সবই হলো পদার্থ। এ সব বস্তুর বা পদার্থের ভর (mass) আছে, তারা স্থান (space) দখল করে। আবার আলো, তাপ, বেতার তরঙ্গ, অতিবেগুনি রশ্মি ইত্যাদি হলো বিকীর্ণ শক্তি, যারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যেতে পারে।

 

পদার্থ

প্রাকৃতিক পরিবেশ যে সব বস্তু দিয়ে তৈরি তাদেরকে পদার্থ বলে। পদার্থের নির্দিষ্ট ভর আছে এবং তারা জায়গা দখল করে। বল প্রয়োগ করলে ঐ বলকে পদার্থ কিছু না কিছু প্রতিরোধ করতে পারে। তাপ ও চাপের উপর নির্ভর করে কোনো পদার্থ সাধারণত তিনটি ভিন্ন ভৌত অবস্থায় থাকে-

  1. কঠিন (Solid)
  2. তরল (Liquid) ও
  3. গ্যাস (Gas)

কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকৃতি ও আয়তন থাকে, তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আকৃতি থাকে না, নির্দিষ্ট আয়তন থাকে। তাই তরলকে যে পাত্রে রাখা হয়, সেই পাত্রের আকৃতি ধরে থাকে সে। কিন্তু গ্যাসীয় পদার্থের আকৃতি ও আয়তন কোনটাই থাকে না। তাপ প্রয়োগ করলে একই পদার্থ তিনটি ভৌত অবস্থায় থাকতে পারে। যেমন-

পানি একটি তরল পদার্থ, একে ঠাণ্ডা করলে তা বরফ নামক কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। আবার তরল পানিকে উত্তপ্ত করলে তা গ্যাসে পরিণত হয়। সে গ্যাসকে জলীয় বাষ্প বলা হয়। জলীয় বাষ্পকে ঠাণ্ডা করলে আবার তরল পানি পাওয়া যায়। এসব পরিবর্তন হচ্ছে ভৌত পরিবর্তন, এতে বস্তুর আণবিক গঠনে কোনো পরিবর্তন হয় না।

সব পদার্থ খুব কম তাপমাত্রায় কঠিন অবস্থায় থাকে। উত্তপ্ত করলে তা আস্তে আস্তে তরলে পরিণত হয়। যে তাপমাত্রায় কোন কঠিন বস্তু তরলে পরিণত হয় সে তাপমাত্রাকে সে পদার্থের গলনাঙ্ক (melting point) বলা হয়।

আবার ঐ তরল পদার্থকে ঠান্ডা করলে ঐ একই তাপমাত্রায় সেটি কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। এ তাপমাত্রাকে সে পদার্থের হিমাঙ্ক (freezing point) বলা হয়। মনে রাখতে হবে, হিমাঙ্ক এবং গলনাঙ্ক একই জিনিস। যেমন- বরফকে গরম করলে তা 0°C তাপমাত্রায় তরল পানিতে পরিণত হয়। তাই এই তাপমাত্রাকে বরফের গলনাঙ্ক বলা যায়। আবার পানিকে ঠাণ্ডা করলে তা 0°C তাপমাত্রায় বরফে পরিণত হয়। সুতরাং এ তাপমাত্রা হচ্ছে পানির হিমাঙ্ক। তাই বলা যায়-

যে তাপমাত্রায় কোন কঠিন পদার্থ তরলে রূপান্তরিত হয়, সে তাপমাত্রাকে পদার্থটির গলনাংক বলা হয়। আবার, যে তাপমাত্রায় কোন বিশুদ্ধ তরল পদার্থ কঠিন পদার্থে পরিণত হয়, সে তাপমাত্রাকে হিমাঙ্ক বলা হয়।

আরো একটা বিষয় এখানে মনে রাখতে হবে-

যে তাপমাত্রায় কোন তরল পদার্থের বাষ্পীয় চাপ এক  বায়ুমন্ডল চাপ বা 1 atm এর সমান হয় এবং তরলটি বুদবুদসহ ফুটতে থাকে, তাকে সেই তরল পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলা হয়। যেমন- পানির স্ফুটনাংক 100°C। প্রকৃতপক্ষে যে কোন তাপমাত্রায় তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হয়।

যে তাপমাত্রায় কোন তরল পদার্থের বাষ্পীয় চাপ এর বাইরের পরিবেশে থাকা চাপের সমান হয়, তখন সেই তরল পদার্থ ফুটতে থাকে। বাহ্যিক চাপ কমিয়ে বা বাড়িয়ে দিলে তরল পদার্থের স্ফুটনাঙ্কের কমবে বা বাড়বে। পাহাড়ের উপরে বায়ুমণ্ডল চাপ কম, তাই পাহাড়ের উপর পানির স্ফুটনাংক কমে, যেমন মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গে (8848m) পানির স্ফুটনাংক হয় 71ºC। সুতরাং প্রমাণ চাপ হিসেবে এক বায়ুমণ্ডল চাপ বলতে 760mm উচ্চতাবিশিষ্ট পারদ স্তম্ভের চাপকে ধরা হয়। অর্থাৎ 1 atm = 760mm (Hg) = 101.32 KPa (কিলো প্যাসকেল)। কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক বাহ্যিক চাপের উপর কিছুটা নির্ভরশীল, তবে এ নির্ভরশীলতা খুবই কম।

এমন কিছু কঠিন পদার্থ আছে, এদেরকে উত্তপ্ত করলে তরলে রূপান্তরিত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত বলা হয়। কঠিন পদার্থের এ ধরনের পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে ঊর্ধ্বপাতন (sublimation) বলে। যেমন কর্পুর, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, ন্যাফথালিন হল এ ধরনের পদার্থ।

পদার্থের সাধারণ তিন ভৌত অবস্থা যেমন কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা ছাড়াও প্লাজমা (plasma) নামক চতুর্থ অবস্থা থাকতে পারে। এছাড়া কোন কোন জৈব কেলাসাকার পদার্থের তরল স্ফটিক (liquid crystal) নামক কঠিন ও তরল উভয় অবস্থার সমন্বয়রূপে একটি অবস্থা থাকতে পারে। তাই সব মিলিয়ে পদার্থ মোট ৫ অবস্থায় থাকতে পারে।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool