কৃত্রিম উপগ্রহের বহুল ব্যবহার অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং মহাকাশ গবেষণায় বিরাট অবদান রেখেছে। এর মূলে রয়েছে রকেট চালনার উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন। পিছনের সরু পথ দিয়ে উচ্চ চাপের গ্যাস অত্যন্ত জোরে নির্গমনের ফলে রকেট সম্মুখের দিকে ধাবিত হয়। দ্রুত গতির এই উষ্ণ গ্যাস রকেটের মধ্যে জ্বালানি দহনে উৎপন্ন হয়। ছিদ্র পথে গ্যাস নির্গমন হলো ক্রিয়া এবং এর ফলে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তা রকেটের গতি কে গ্যাস প্রবাহের বিপরীত দিকে চালিত করে।
যদিও গ্যাস হাল্কা কিন্তু উচ্চ বেগের কারণে নির্গত গ্যাসের ভরবেগ খুব বেশি হয়। ভরবেগের সংরক্ষণ নীতি অনুযায়ী রকেটও সমান কিন্তু বিপরীতমুখী ভরবেগ প্রাপ্ত হয় এবং উচ্চবেগে উপরে ওঠে যায়।
জ্বালানি হিসেবে রকেটে সাধারণত তরল হাইড্রোজেন এবং দহনের জন্য তরল অক্সিজেন থাকে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় এবং নিয়ন্ত্রিত হারে তরল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনকে দহন প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করানো হয়। জ্বালানির দহন ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন উত্তপ্ত উচ্চ চাপের গ্যাস অত্যন্ত উচ্চ বেগে রকেটের নিচের দিকে নির্গমন পথ দিয়ে বেরিয়ে আসে।
রকেটের গতির সমীকরণ
ধরো, রকেট উৎক্ষেপণের পরমুহূর্তে রকেটের ভর (m) (জ্বালানিসহ) এবং এর ঊর্ধ্বমুখী বেগ v. সুতরাং রকেটের ভরবেগ = mv.
আবার মনে করি, ক্ষুদ্র সময় অবকাশে dm পরিমাণ গ্যাস রকেটের নিচের ছিদ্রপথে নির্গত হয়েছে। ধরা যাক রকেটের সাপেক্ষে নির্গত গ্যাসের নিম্নমুখী বেগ vr.
এখন পৃথিবীর সাপেক্ষে নির্গত গ্যাসের বেগ v’ হবে,
v’ = v – vr (এখানে ঊর্ধ্বমুখী বেগ ধনাত্মক ধরা হয়েছে, সুতরাং নিম্নমুখী বেগ ঋণাত্মক হবে)
এবং এর ভরবেগ,
dm v’ = dm (v – vr)
এখন dt সময় অবকাশে dm পরিমাণ গ্যাস নির্গত হওয়ার ফলে রকেটের ভর কমে (m – dm) হয় এবং বেগ বৃদ্ধি পেয়ে v + dv হয়। সুতরাং dt সময় অবকাশে রকেটের ভরবেগ হয়-
(m – dm) (v + dv)
অতএব, t + dt সময়ে,
মোট ভরবেগ = রকেটের ভরবেগ + নির্গত গ্যাসের ভরবেগ
= (m – dm) (v + dv) + dm (v – vr)
= mv + mdv – vdm – dmdv + vdm – vrdm
= mv + mdv – vrdm (dmdv ক্ষুদ্র বলে বাদ দেয়া হয়েছে)
এখন আমরা ঘাত-ভরবেগ সূত্র (impulse momentum theorem) প্রয়োগ করতে পারি। এই সূত্র অনুসারে কোনো সিস্টেমের (system) উপর ক্রিয়াশীল লব্ধি (resultant) এবং বলের ক্রিয়াকালের গুণফল সিস্টেমের ভরবেগের পরিবর্তনের সমান হয়।
এখন রকেট সিস্টেমের উপর একমাত্র বহিস্থ ক্রিয়াশীল বল হলো রকেটের ওজন অর্থাৎ -mg. g-এর দিক নিম্নমুখী হওয়ায় ঋণ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে রকেটের গতি এর ক্ষেত্রে বাতাসের বাধা উপেক্ষা করা হয়েছে।
অতএব dt সময়ে ভরবেগের পরিবর্তন বা পার্থক্য হবে t এবং t + dt সময়ে ভরবেগের পার্থক্যের সমান। অর্থাৎ-
dt সময়ে ভরবেগের পরিবর্তন = (m – dm) (v + dv) + dm (v – vr) – mv
= mv + mdv – vrdm – mv
= mdv – vrdm
এখন ঘাত-ভরবেগ সূত্র প্রয়োগ করে আমরা পাই,
F dt = mdv – vrdm
or, -mgdt = mdv – vrdm
or, -mg = m (dv/dt) – vr (dm/dt)
or, m (dv/dt) = vr (dm/dt) – mg……. (1)
কিন্তু, dv/dt হলো রকেটের ত্বরণ। সুতরাং বামপক্ষ রকেটের উপরে লব্ধি বল নির্দেশ করে। ডানপক্ষের প্রথম রাশি হল রকেটের ঘাতবল এবং দ্বিতীয় রাশি রকেটের ওজন। অর্থাৎ রকেটের উপরে ক্রিয়াশীল লব্ধি রকেটের ঘাতবল ও ওজনের পার্থক্যের সমান।
সমীকরণ (1) এর উভয় পক্ষ m দ্বারা ভাগ করে, আমরা রকেটের তাৎক্ষণিক ত্বরণ ‘a’ পেতে পারি। অর্থাৎ-
a = dv/dt
or, a = vr/m (dm/dt) – g
এই সমীকরণ থেকে রকেটের গতি সম্পর্কে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তসমূহে উপনীত হওয়া যায় :
- গ্যাসের নির্গমনের বেগ vr বেশি হলে রকেটের ত্বরণ বেশি হবে।
- গ্যাস নির্গমনের হার (dm/dt) বেশি হলে ত্বরণ বেশি হবে।
- রকেটের ভর ‘m’ কম হলে ত্বরণ বাড়বে।
- পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে রকেট যত উপরে উঠবে, g-এর মান তত কমতে থাকবে। ফলে রকেটের ত্বরণ বাড়তে থাকবে।
আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তিনি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন সত্যতার সাথে; যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের।
(সুরা ইমরান : ২-৩)
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আদর্শ আচরণ থেকে বাস্তব গ্যাসের বিচ্যুতির কারণ (Causes of Deviation of Real Gases from Ideal Behavior)
- আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাস (Ideal Gas and Real Gases)
- আদর্শ গ্যাস সমীকরণের বিভিন্ন রূপ ও ব্যবহার (Different forms of Ideal Gas Equation & It’s Usage)
- গতির প্রকারভেদ (Kinds of Motion)
- গতির সমীকরণ (Equations of Motion)
- গ্যাসের অণুর গতিবেগ হিসাবকরণ (Calculation of Molecular Velocities of Gases)
- গ্যাসের আংশিক চাপ ও মোল ভগ্নাংশের সম্পর্ক (Relation Between Partial Pressure and Mole Fraction of a Gas)
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্র (Dalton’s Law of Partial Pressure)
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্রের প্রয়োগ (Application of Dalton’s Law of Partial Pressure)
- নিউটনের গতিসূত্র (Newton’s Law of Motion)
- বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সমন্বয় (Combination of Boyle’s, Charles’ and Avogadro’s Laws)
- বাস্তব গ্যাসের প্রেষণ গুণাঙ্ক ও আদর্শ আচরণ (Compressibility Factor & ideal behavior of Real Gases)
- বৃত্তাকার গতি (Circular Motion)
- ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র (Law of Conservation of Momentum)
- মোলার গ্যাস ধ্রুবকের মাত্রা ও তাৎপর্য (Dimension and Significance of Molar gas constant)