আমরা জানি ঘর্ষণে চার্জ উৎপন্ন হয়। 1733 খ্রিস্টাব্দে রাজা পঞ্চদশ লুইয়ের প্রধান মালী ফরাসি বিজ্ঞ একাডেমির সদস্য সি. এফ. ডুফে (CF Du Fay) নিম্নলিখিত পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করেন যে, ঘর্ষণের ফলে বিভিন্ন বস্তুতে উৎপন্ন চার্জের প্রকৃতি এক রকম হয় না। একটিতে সৃষ্ট চার্জের প্রকৃতি অপরটিতে সৃষ্ট চার্জের প্রকৃতির বিপরীত। অর্থাৎ প্রকৃতি অনুসারে চার্জ দু প্রকার। যথা –
১. ধন চার্জ (Positive charge) এবং
২. ঋণ চার্জ (Negative charge)।
চার্জের প্রকৃতি নির্ণয়
নিম্নের পরীক্ষা থেকে আমরা চার্জের প্রকৃতি নির্ণয় করতে পারি।
একটি কাচ দণ্ড নেই। একে এক টুকরা শুকনা রেশমী কাপড় দিয়ে ঘর্ষণ করি এবং দণ্ডটিকে সিল্কের সুতা দিয়ে ঝুলিয়ে দেই। এতে কাচ দণ্ডটি চার্জগ্রস্ত অবস্থায় থাকবে। এখন অপর একটি কাচ দণ্ডকে অনুরূপভাবে রেশমী কাপড় দ্বারা ঘষে ঝুলন্ত কাচ দণ্ডটির নিকট ধরি। দেখব ঝুলন্ত কাচ দন্ডটি খানিকটা সরে গিয়েছে অর্থাৎ এরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করছে।
এবার একটি ইবোনাইট দণ্ডকে এক খণ্ড ফ্লানেল কাপড় বা বিড়ালের চামড়া দ্বারা ঘর্ষণ করি এবং ঝুলন্ত কাচ দণ্ডের নিকটে আনি। দেখব কাচ দন্ডটি ইবোনাইটের দিকে সরে আসছে। অর্থাৎ পরস্পরকে আকর্ষণ করছে। আবার একটি ইবোনাইটের দণ্ডকে ফ্লানেল বা বিড়ালের চামড়া দ্বারা ঘষে পূর্বের ইবোনাইট দন্ডের নিকটে ঝুলিয়ে দেই। দেখব এরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করছে।
উপরের পরীক্ষা হতে প্রমাণিত হয় যে, রেশমের ঘর্ষণে কাচ দণ্ডে উৎপন্ন চার্জ ফানেলের ঘর্ষণে ইবোনাইটে উৎপন্ন চার্জের বিপরীতধর্মী। তাই বলা যায় ঘর্ষণের ফলে দুটি বিপরীত প্রকৃতির চার্জ উৎপন্ন হয়।
আরেকটা মজার তথ্য রয়েছে!
1747 খ্রিস্টাব্দে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (Benjamin Franklin) রেশমের ঘর্ষণে কাচ দণ্ডে উৎপন্ন চার্জকে ভিট্রিয়াস (Vitreous) বা ধনাত্মক (+ve) চার্জ বা ধন চার্জ এবং ফ্লানেলের ঘর্ষণে ইবোনাইটে উৎপন্ন চার্জকে রেসিনাস (Resinous) বা ঋণাত্মক (-ve) চার্জ বা ঋণ চার্জ নামকরণ করেন।
চার্জের আকর্ষণ ও বিকর্ষণ সূত্র
প্রকৃতিতে দুটো প্রকৃতির চার্জ বা আধান আছে। এদের মধ্যে কখনও আকর্ষণ আবার কখনও বিকর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরই ভিত্তিতে 1733 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী ডু’ফে (Du Fay) চার্জের দুটি সূত্র আবিষ্কার করেন, যথা-
- আকর্ষণ সূত্র
- বিকর্ষণ সূত্র
আকর্ষণ সূত্র : বিপরীতধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে। একে আকর্ষণ সূত্র বলে। যেমন, ঋণ চার্জ এবং ধন চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে।
বিকর্ষণ সূত্র : সমধর্মী চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। একে বিকর্ষণ সূত্র বলে। যেমন, ধন চার্জ এবং ধন চার্জ কিংবা ঋণ চার্জ এবং ঋণ চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আধানের নিত্যতা এবং কোয়ান্টায়ন
- কুলম্বের সূত্র
- চার্জের তল ঘনত্ব
- জোয়ার ও ভাটা
- তড়িৎ আবেশ
- তড়িৎ ক্ষেত্র
- তড়িৎ বলরেখা
- তড়িৎ বলের উপরিপাতন নীতি
- তড়িৎ বিভব
- তড়িৎগ্রস্ততার সুনিশ্চিততর পরীক্ষা
- তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র
- নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র
- প্রকৃতি ও প্রত্যয়
- বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি
- স্বর্ণপাত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রকে চার্জিতকরণ