এ মহাবিশ্বে প্রতিটি বস্তুকণাই একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এ বলের মান কত হবে সে সম্পর্কে নিউটন যে সূত্র দেন সেটি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত। এ আকর্ষণ বলের মান শুধু বস্তুদ্বয়ের ভর এবং এদের মধ্যকার দূরত্বের ওপর নির্ভর করে। এদের আকৃতি, প্রকৃতি কিংবা মধ্যবর্তী মাধ্যমের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে না। এ মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাকে মহাকর্ষ বলে। দুটি বস্তুর একটি যদি পৃথিবী হয় তবে তাকে অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলে অর্থাৎ, কোনো বস্তুর ওপর পৃথিবীর আকর্ষণকে অভিকর্ষ বলে।
সৌর জগতে পৃথিবী ব্যতিত যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ, তা মহাকর্ষ কিন্তু পৃথিবী ও যে কোনো বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তা অভিকর্ষ। সূর্য ও চন্দ্রের মধ্যে যে আকর্ষণ তা মহাকর্ষ কিন্তু পৃথিবী ও একটি বস্তু এর যে আকর্ষণ তা অভিকর্ষ। অভিকর্ষও এক ধরনের মহাকর্ষ।
সূত্র : মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজ দিকে আকর্ষণ করে এবং এ আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং এদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এ বল বস্তুকণা দুটোর কেন্দ্র থেকে সংযোগকৃত সরলরেখা করার কাজ করে।
ধরা যাক, m1 এবং m2 ভরের দুটি বস্তু পরস্পর থেকে d দূরত্বে অবস্থিত। এদের মধ্যকার আকর্ষণ বল F হলে, মহাকর্ষ সূত্রানুসারে-
F ∝ m1 m2 / d2
or, F = (G m1 m2) / d2
এখানে G একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। একে সার্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে। মহাকর্ষ সূত্রানুসারে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত দুটি বস্তুর ভরের গুণফল দ্বিগুণ হলে বল দ্বিগুণ হবে, ভরের গুণফল তিনগুণ হলে, বল তিনগুণ হবে। আর নির্দিষ্ট ভরের দুটি বস্তুর দূরত্ব দ্বিগুণ করলে বল এক চতুর্থাংশ হবে, দূরত্ব তিনগুণ করলে বল নয় ভাগের এক ভাগ হবে।
মহাকর্ষীয় ধ্রুবক G (Gravitational Constant)
মহাকর্ষ সূত্রের সমীকরণ থেকে আমরা দেখি-
F = (G m1 m2) / d2
or, G = Fd2 / m1 m2
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, “1 kg ভরের দুটি বস্তু 1 m দূরত্বে থেকে যে বলে পরস্পরকে আকর্ষণ করে তার মান মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মানের সমান।”
G এর মাত্রা : মহাকর্ষ সূত্রের সমীকরণ থেকে দেখা যায়,
G = (বল x দূরত্ব2) / (ভর x ভর)
= (MLT2 x L2) / M2
= [L3M-1T-2]
G এর একক : সমীকরণ থেকে পুনরায় পাওয়া যায়-
G = Fd2 / m1 m2
এ সমীকরণের ডানপাশের রাশিগুলোর একক বসালে G এর একক পাওয়া যায়। সুতরাং এর একক হচ্ছে Nm2/kg2. অর্থাৎ, Nm2kg-2
G এর মান : G এর মান নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন সময় বহু বিজ্ঞানী বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের প্রাপ্ত মানে সামান্য পার্থক্য হয়। G এর সর্বসম্মত মান গৃহীত হয়েছে 6.673×10-11 Nm2kg2। এর অর্থ হচ্ছে 1kg ভরের দুটি বস্তু 1m দূরে স্থাপন করলে এরা পরস্পরকে 6.673×10-11N বলে আকর্ষণ করে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অভিকর্ষজ ত্বরণ (Gravitational Acceleration)
- কুলম্বের সূত্র (Coulomb’s law)
- গে-লুস্যাকের গ্যাসের চাপের সূত্র (Gay-Lussac’s Law of Pressure of Gases)
- চার্লসের সূত্র বিবৃত করো
- জোয়ার ও ভাটা (High Tide & Low Tide)
- তড়িৎগ্রস্ততার সুনিশ্চিততর পরীক্ষা (The surer test of Charging or Electrification)
- নিউটনের গতিসূত্র (Newton’s Law of Motion)
- নিউটনের গতিসূত্র কি কি?
- নিউটনের প্রথম সূত্রের ব্যাখ্যা: জড়তা ও বল (Explanation of Newton’s First Law: Inertia and Force)
- পড়ন্ত বস্তুর সূত্র (Laws of Falling Bodies)
- পদার্থের অবস্থাভেদের কারণ কি?
- বয়েলের সূত্র ও চার্লসের সূত্রের সমন্বয় (Combination of Boyle’s Law and Charles’ Law)
- বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সমন্বয় (Combination of Boyle’s, Charles’ and Avogadro’s Laws)
- ভরবেগ (Momentum)
- ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র (Law of Conservation of Momentum)