সমান্তরাল পাত ধারকে দুটি সমান্তরাল ধাতব পাত থাকে। ধরা যাক এদের নাম যথাক্রমে M ও N। পাত দুটি একে অপরের থেকে সামান্য দূরে থাকে এবং এদের মধ্যে বাতাস অথবা অন্য কোনো পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যম যেমন প্যারাফিন, গন্ধক, কাচ, ইবোনাইট, অভ্র ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পাত M , কুপরিবাহী দণ্ডের মাধ্যমে ভূমি থেকে পরিবাহী অবস্থায় এবং পাত N ভূমির সাথে যুক্ত অবস্থায় থাকে।
ধরা যাক, ধারকের পাত দুটির প্রত্যেকটির ক্ষেত্রফল A, তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব d এবং এদের মধ্যবর্তী মাধ্যম বাতাস। এখন M পাতে +Q পরিমাণ চার্জ দিলে, M পাত থেকে বের হওয়া তড়িৎ বলরেখাগুলো তার কাছাকাছি অবস্থানে থাকা ভূ-সংযুক্ত পরিবাহী N-এর দিকে যাবে। ফলে তাদের মাঝে বৈদ্যুতিক আবেশ ঘটবে এবং N পাতের ভেতরের পৃষ্ঠের আবিষ্ট ঋণাত্নক চার্জ, M পাতের আবেশী ধনাত্নক চার্জের সমান হবে। পাত দুটি একে অপরের কাছাকাছি বলে M পাত থেকে সোজাসুজি ভাবে বলরেখাগুলো বের হয়ে সমান্তরাল অবস্থায় যেয়ে N পাতের উপর পড়বে। সেইসাথে পাত দুটির মধ্যে তড়িৎ প্রাবল্য সব জায়গায় প্রায় সমান হবে। আবার যেহেতু ভূ-সংযুক্ত পাত N-এর বিভব শূন্য, তাই M পাতের বিভবকে M ও N-এর মধ্যকার বিভব পার্থক্য হিসেবে ধরা যেতে পারে।
ধরা যাক, সমান্তরাল পাতের ধারকত্ব = C, পাত দুটির বিভব পার্থক্য = V, ধারকের প্রতিটি পাতের ক্ষেত্রফল A, পাতের চার্জ ঘনত্ব σ এবং পাত দুটির মধ্যে বৈদ্যুতিক প্রাবল্য = E
এখন M পাতে +Q একক চার্জ দেয়া হলে d দূরত্বে অবস্থিত N পাতে সম-পরিমাণ ঋণ চার্জ আবিষ্ট হবে। M পাতে চার্জের তল ঘনত্ব-
σ = চার্জ / ক্ষেত্রফল
= Q / A
পাত দুটির মধ্যবর্তী জায়গায় তড়িৎ প্রাবল্য-
E = σ / e0
যেখানে e0 = শূন্য বা বায়ু মাধ্যমে ভেদন যোগ্যতা
এবার, একক ধনাত্নক চার্জকে এক পাত থেকে অন্য পাতে নিয়ে যেতে যে কাজ করতে হয়, সেই কাজের পরিমাণ পাত দুটির বিভব পার্থকোর সমান। তাই বিভব পার্থক্য = V হলে-
V = তড়িৎ প্রাবল্য × দূরত্ব
V = Ed
= (σ / e0) x d
= Qd / e0A
সুতরাং, ধারকত্ব C = Q / V
= Q / (Qd / e0A)
or, C = e0A / d
যদি পাত দুটির মধ্যে বায়ু ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম থাকে যার পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক er হয়, তবে ধারকত্ব-
C = ere0A / d
= eA / d
সমান্তরাল পাত ধারকের ধারকত্ব যে যে বিষয়ের উপর নির্ভর করে
সমীকরণ C = ere0A / d থেকে দেখা যায় যে, ধারকত্ব তিনটি রাশির উপর নির্ভর করে। এগুলো হচ্ছে-
- পাতের ক্ষেত্রফল (A)
- সমান্তরাল পাত দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব (d) এবং
- পাত দুটির মধ্যবর্তী মাধ্যমের পরাবৈদ্যুতিক বা ডাই-ইলেকট্রিক ধ্রুবক (er)
পাতের ক্ষেত্রফল : ধারকের পাতের ক্ষেত্রফল যদি তবে ধারকত্ব বাড়বে। আমাদের জানা আছে, ধারকত্ব, C = চার্জ / বিভব। পাতের ক্ষেত্রফল বাড়লে সেটা চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে ধারকত্ব বাড়ে।
পাত দুটোর মধ্যবর্তী দূরত্ব : ধারকের সমান্তরাল পাতের মধ্যবর্তী দূরত্ব বাড়লে ধারকত্ব কমে এবং দুরত্ব কমলে ধারকত্ব বৃদ্ধি পায়।
পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যম : পাত দুটির মাঝে বায়ু বা শূন্য মাধ্যম ছাড়া অন্য যেকোনো অন্তরক বা অপরিবাহী মাধ্যম ব্যবহার করলে ধারকত্ব বাড়ে। এর কারণ হলো, পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যমের উপস্থিতিতে পাত দুটির মাঝে তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্যের মান বা বিভব কমে যায়। ফলে পাতে চার্জের মান অপরিবর্তিত থাকলে বিভব কমে যাওয়ায় ধারকত্ব C-এর মান বেড়ে যায়। পাত দুটোর মাঝে গ্লাস, মোম, সিরামিক ইত্যাদি অন্তরক পদার্থ ব্যবহার করে ধারকত্ব বাড়ানো যায়। ডাই-ইলেকট্রিক বা পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক er এর মান যত বেশি হবে ধারকত্ব ততগুণ বেড়ে যাবে।
‘আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।’ (আল-কুরআন, সূরা : আল বাক্বারাহ্)
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- ইলেকট্রনের তাড়ন বেগ (Drift Velocity of Electron)
- কুলম্বের সূত্র (Coulomb’s law)
- চার্জের তল ঘনত্ব (Surface Charge Density)
- তড়িৎ আবেশ (Electrostatic Induction)
- তড়িৎ ধারকত্ব (Electric Capacity)
- তড়িৎ বিভব (Electric Potential)
- ধারক ও ধারকত্ব (Capacitor & Capacitance)
- ধারকের শ্রেণী বিন্যাস (Series Combination of Capacitor)
- ধারকের সমান্তরাল বিন্যাস (Parallel Combination of Capacitor)
- পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বা আপেক্ষিক ভেদ্যতা (Dielectric Constant or Relative Permittivity)
- বিভব পার্থক্য (Potential Difference)
- বিভব পার্থক্য ও তড়িচ্চালক বলের পার্থক্য (Difference between Voltage & Electromotive Force)
- ব্যাটারির প্যারালাল কানেকশন – Parallel Connection of Battery
- ভোল্টেজের প্যারালাল কানেকশন – Voltage in Parallel Connection
- সমবিভব তল (Equipotential Surface)