বায়ুপ্রবাহ কয়েক প্রকারের হতে পারে। যেমন- নিয়ত বায়ু, সমুদ্র ও স্থলবায়ু, মৌসুমী বায়ু।
নিয়ত বায়ু (Planetary Winds)
নিয়ত বায়ু পৃথিবীর চাপ বলয়গুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে বছর সকল সময় একই দিকে প্রবাহিত হয়। যে বায়ু সর্বদাই উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে নিয়ত বায়ু বলা হয়। নিয়ত বায়ু তিন প্রকারের- অয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু।
অয়ন বায়ু (The Trade Winds) : নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় থেকে উষ্ণ ও হালকা বায়ু উপরে উঠে গেলে কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে শীতল ও ভারী বায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, এই বায়ুকে অয়ন বায়ু বলা হয়। ফেরেলের সুত্র অনুসারে এ বায়ু উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। প্রাচীনকালে চালিত জাহাজগুলো এ বায়ুপ্রবাহের দিক অনুসরণ করতো বলে এগুলোকে অয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ু বলা হয়।
উত্তর-পূর্ব অয়ন বায়ু ঘণ্টায় প্রায় ১৬ কিমি এবং দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু প্রায় ২২.৫৪ কিমি বেগে প্রবাহিত হয়। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু নিরক্ষরেখার নিকটবর্তী হলে অত্যধিক তাপে উষ্ণ ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। তখন নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর অনুভূমিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং নিরক্ষরেখার উভয়দিকে উত্তর-দক্ষিণে ৫° অক্ষাংশ পর্যন্ত একটি শান্ত বলয়ের সৃষ্টি হয়। এ বলয়কে নিরক্ষীয় শাস্ত বলয় (Doldrum) বলে ।
পশ্চিমা বায়ু বা প্রত্যয়ন বায়ু (The Westerlies) : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে অয়ন বায়ু ব্যতীত আরও দুটি বায়ুপ্রবাহ মেরুবৃত্ত নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর গোলার্ধে এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহকে পশ্চিমা বায়ু বলে। উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগের পরিমাণ অধিক বলে স্থানীয় কারণে পশ্চিমা বায়ুর সাময়িক বিরতি ঘটে। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের পরিমাণ বেশি বলে পশ্চিমা বায়ু প্রবলবেগে এ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। এজন্য এই বায়ুপ্রবাহকে প্রবল পশ্চিমা বায়ু (Brave west winds) বলে। ৪০° থেকে ৪৭° দক্ষিণ পর্যন্ত পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগ সর্বাপেক্ষা বেশি। এ অঞ্চলকে গর্জনশীল চল্লিশ (Roaring forties) বলে।
নিরক্ষীয় শান্ত বলয়ের ন্যায় ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়েও দুটি শান্ত বলয়ের সৃষ্টি হয়। ৩০° থেকে ৩৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় দুটি অবস্থিত। বায়ু নিম্নগামী বলে এই অঞ্চলে অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ অনুভব করা যায় না। প্রাচীনকালে যখন আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে জাহাজযোগে ইউরোপ থেকে আমেরিকায় ঘোড়া ও অন্যান্য পশু রপ্তানি করা হতো তখন এ অঞ্চলে পৌছলে বায়ুপ্রবাহের অভাবে পালচালিত জাহাজের গতি প্রায় নিশ্চল হয়ে পড়ত। এ অবস্থায় নাবিকগণ খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে অনেক সময় তাদের ঘোড়া / অশ্ব গুলো সমুদ্রে ফেলে দিত। এজন্য আটলান্টিক মহাসাগরের ক্রান্তীয় শাস্ত বলয়কে অশ্ব অক্ষাংশ (Horse latitude) বলে। উত্তর গোলার্ধে ৩০° থেকে ৩৫° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত অঞ্চলটিতে শীতকালেও পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়।
মেরু বায়ু (Polar Winds) : মেরু অঞ্চলের উচ্চচাপ বলয় থেকে অতি শীতল ও ভারী বায়ু উত্তর গোলার্ধে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। এ বায়ু উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এ প্রবাহদ্বয়কে সুমেরু বায়ু ও কুমেরু বায়ু বলে৷
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- জোয়ার-ভাটার প্রকারভেদ ও প্রভাব (Types & Effects of Tides)
- টেলিস্কোপের প্রকারভেদ (Types of Telescope)
- তড়িতের প্রকারভেদ (Types of Electricity)
- পৃথিবীর কাল্পনিক রেখা সমূহ
- পৃথিবীর গতি
- বায়ু প্রবাহ (Airflow)
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : সাময়িক বায়ু (Types of Airflow : Temporary Winds)
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : স্থানীয় বায়ু (Types of Airflow : Local Winds)
- বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Rainfall)
- ভাইরাসের প্রকারভেদ (Types of Viruses)
- মহাসাগর ও এর প্রকারভেদ (Oceans & their types)
- মৌলিক বল ও তাদের প্রকারভেদ (Basic Forces & their Types)
- সমুদ্রস্রোত (Sea Tide)
- সমুদ্রস্রোতের প্রভাব ও গুরুত্ব (The effect and importance of Ocean Currents)
- হিমপ্রাচীর ও সামুদ্রিক দুর্যোগ (Cold Wall & Sea Disaster)