যখন আমরা বলি, একটি বস্তু স্থির বা গতিশীল, তখন বুঝতে হবে কোনো দ্বিতীয় বস্তুর সাপেক্ষেই প্রথম বস্তুটি স্থির আছে অথবা এর অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে। কোনো বস্তুর অবস্থান অপর একটি নির্দিষ্ট বস্তুর সাপেক্ষে জানতে হলে ঐ নির্দিষ্ট বস্তুর সঙ্গে একটি স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা (co-ordinate system) ধরে নিতে হয়। একে প্রসঙ্গ বা নির্দেশ কাঠামো (Reference frame) বলে। সুতরাং বলা যায়, যে স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার সাহায্যে বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করা হয় তাকে প্রসঙ্গ কাঠামো বলে। প্রসঙ্গ কাঠামোর যে বিন্দুর সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করা হয় তাকে প্রসঙ্গ বিন্দু (Reference point) বলে।
তিন ধরনের প্রসঙ্গ কাঠামো রয়েছে-
- একমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো
- দ্বিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো এবং
- ত্রিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো
একমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো (One Dimensional Reference Frame)
মনে করি একটি কণা একটি সরলরেখা OX-বরাবর গতিশীল। বিভিন্ন সময়ে কণাটির অবস্থান একটি বিন্দু সাপেক্ষে নির্ণয় করতে হয়। যে বিন্দুর সাপেক্ষে কণাটির অবস্থান নির্ণয় করা হয়, তাকে প্রসঙ্গ বিন্দু বা নির্দেশ বিন্দু বলে। ছবিতে O-কে প্রসঙ্গ বিন্দু ধরে নেয়া হয়েছে।
OX সরলরেখাকে X-অক্ষ বলা হয়। প্রসঙ্গ বিন্দু এবং X-অক্ষ নিয়ে গঠিত হয় একমাত্রিক কাঠামো। এ কাঠামোর সাহায্যে কণার যে-কোনো সময়ের অবস্থান নির্ণয় করা যায় O-বিন্দুর সাপেক্ষে।
ধরো, একটি নির্দিষ্ট সময়ে কণাটি A অবস্থানে আছে। এই সময়ে O বিন্দু হতে কণাটির দূরত্ব = OA = x। কণাটি স্থিতিশীল হলে x-এর একটিমাত্র মান থাকবে। আর কণাটি গতিশীল হলে x-এর মান বিভিন্ন হবে। এখানে x-কে স্থানাঙ্ক বলা হয়। একটিমাত্র স্থানাঙ্ক দ্বারা কণাটির অবস্থান নির্দেশিত হওয়ায় কণাটি একমাত্রিক স্থানে অবস্থিত। যে বস্তুর বিভিন্ন কণার অবস্থান একটিমাত্র স্থানাঙ্ক দ্বারা নির্দেশ করা হয় তাকে একমাত্রিক প্রসঙ্গ বস্তু বলে।
মুক্তভাবে পড়ন্ত একটি বস্তুর গতিও একমাত্রিক গতি, তাই পড়ন্ত বস্তুর বিভিন্ন সময়ে অবস্থান বিভিন্ন হবে। এর গতি একটি একমাত্রিক কাঠামো দ্বারা প্রকাশ করা যাবে। যে বিন্দু হতে বস্তুটি পড়তে শুরু করে তাকে প্রসঙ্গ বিন্দু বলে এবং এর গতিপথ X-অক্ষ ধরা হয়।
উদাহরণ : একটি দীর্ঘ সরু দণ্ড, একটি দীর্ঘ সরু সূতা, ঝুলন্ত সূতা ইত্যাদি একমাত্রিক বস্তু।
দ্বিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো (Two Dimensional Reference Frame)
ধরো, একটি কণা একটি সমতল পৃষ্টে অবস্থিত এবং কণাটি গতিশীল। সেজন্য বিভিন্ন সময়ে এর অবস্থান বিভিন্ন হবে। এখন এর অবস্থান বের করার জন্য একে অপরের উপর লম্ব দুটো সরলরেখার দরকার। ছবিতে OX ও OY এরকম দুটি সরলরেখা। এই দুটি সরলরেখা পরস্পর O বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। অতএব O হলো প্রসঙ্গ বিন্দু বা মূল বিন্দু (reference or origin)। এখানে OX-কে X অক্ষ এবং OY-কে Y অক্ষ বলা হয়। প্রসঙ্গ বিন্দু এবং অক্ষ দুটি মিলে একটি কাঠামো তৈরি করেছে যার নাম দ্বিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো।
ধরে নাও একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি কণা A অবস্থানে আছে। A হতে OX-এর উপর AM এবং OY এর উপর AN লম্ব টানো। তা হলে OM = AN = x এবং AM = ON = y হবে। এখানে A-এর অবস্থান x ও y দুটি স্থানাঙ্ক দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। সোজা কথায় বলা যায়, A হল একটি মাত্র বিন্দু যার স্থানাঙ্ক x, y। অতএব কোনো একটি বস্তুর বিভিন্ন কণার দুটি স্থানাঙ্ক থাকলে সেই বস্তুটিকে দ্বিমাত্রিক বস্তু বলে। এবার OA যোগ করো। OA = r হলে এই রেখার উপর C, D, E, F ইত্যাদি অনেক বিন্দু থাকবে, O হতে এসব বিন্দুর নির্দিষ্ট দূরত্বও থাকবে।
উদাহরণ : ফুটবল খেলার মাঠে একটি গতিশীল ফুটবল দ্বিমাত্রিক স্থানে দৌড়ায়, পাতলা কাগজ কিংবা পাতলা ধাতব পাত ইত্যাদি দ্বিমাত্রিক বস্তু।
ত্রিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো (Three Dimensional Reference Frame)
ধরো, বায়ু ভর্তি রুমের মধ্যে একটি কণা অবস্থিত। কণাটির অবস্থান নির্দেশ করার জন্যে পরস্পর লম্বভাবে অবস্থিত তিনটি সরলরেখার দরকার। ধরা যাক সরলরেখা তিনটি যথাক্রমে OX, OY এবং OZ। সরলরেখা তিনটি পরস্পরকে O বিন্দুতে ছেদ করেছে। অতএব O বিন্দু হল মূল বিন্দু বা প্রসঙ্গ বিন্দু। এখানে OX-কে X অক্ষ, OY-কে Y অক্ষ এবং OZ-কে Z অক্ষ বলা হয়। মূল বিন্দু এবং তিনটি অক্ষ মিলে যে কাঠামো তৈরি হয়েছে তার নাম ত্রিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো।
ধরো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কণাটি P অবস্থানে আছে। P হতে XY তলের উপর PQ লম্ব টানো। Q হতে OX-এর উপর QR এবং OY-এর উপর QT লম্ব টানো। সবশেষে P হতে OZ-এর উপর PS লম্ব টানো।
OR = QT = x
OT = RQ = y
এবং OS = AQ = z
এখানে P-এর অবস্থান x, y এবং z এই তিনটি স্থানাঙ্ক দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে। মূল বিন্দু O এবং এই (x, y, z) তিনটি স্থানাঙ্ক সহ পুরো কাঠামোকে ত্রিমাত্রিক কাঠামো বলে। কোনো একটি বস্তুর বিভিন্ন কণা এই কাঠামোয় অবস্থান করলে বস্তুটিকে ত্রিমাত্রিক বস্তু বলে।
উদাহরণ : টেবিল, চেয়ার, ইট, পাথর ইত্যাদি ত্রিমাত্রিক বস্তু।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অভিকর্ষ কেন্দ্র
- কুলম্বের সূত্র
- কেলাসের একক কোষ ও কেলাস জালি (Crystal Lattice & Unit Cells)
- গতির প্রকারভেদ
- গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র
- তড়িৎ ক্ষেত্র
- তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য
- দূরত্ব ও সরণ
- পদার্থবিজ্ঞানে কাজ
- বলবিদ্যা
- বিভব পার্থক্য
- বৃত্তাকার গতি কাকে বলে
- ভেক্টর বিভাজন
- ভেক্টর সম্পর্কিত কিছু সংজ্ঞা
- সমবিভব তল