আমাদের প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস দুইভাবে নিয়ন্ত্রণ হতে পারে-
- স্নায়বিকভাবে
- রাসায়নিকভাবে
আমরা এই দুটো সিস্টেম নিয়ে জানবো।
স্নায়বিক উপায়ে প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস
স্নায়বিক ভাবে আমাদের ব্রেন বিভিন্ন স্নায়ুর মাধ্যমে প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস কে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রেনের মেডুলাতে থাকা পেসমেকার কোষগুলো স্বাভাবিকভাবেই প্রতিনিয়ত উদ্দীপ্ত হয়। এই উদ্দীপনা আবার দুটো নতুন স্নায়ু যেমন ফ্রেনিক স্নায়ু ও ইন্টারকোস্টাল স্নায়ুর মাধ্যমে আমাদের বুকে থাকা ইন্টারকোস্টাল পেশী এবং মধ্যচ্ছদাতে সংকোচন ঘটায়। ফলে আমাদের প্রশ্বাস কাজ সম্পন্ন হয়।
এক্ষেত্রে আমাদের ব্রেনে থাকা ৪টা কেন্দ্র প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণের কাজটা করে। এদের নাম হচ্ছে-
1) প্রশ্বাস কেন্দ্র / Dorsal Respiratory Group of Neuron : এটির অবস্থান পশ্চা মস্তিষ্কের অংশ মেডুলার পেছনের দিকে।
2) নিঃশ্বাস কেন্দ্র / Ventral Respiratory Group of Neuron : এর অবস্থান মেডুলার সামনের দিকে।
3) Pneumotaxic Center / নিউমোট্যাক্সিক কেন্দ্র : এটি থাকে পনসের উপরের দিকে। এটি গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে।
4) অ্যাপনিউস্টিক কেন্দ্র / Apneustic Center : এটির অবস্থান পনসের নিচের দিকে। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রাবল্যতা নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ মানুষ কখন জোরে শ্বাস নিবে, কখন আস্তে শ্বাস নিবে এসব নিয়ন্ত্রণ করে এটি। একটা ছবির মাধ্যমে এই অংশগুলো দেখি-
রাসায়নিক উপায়ে প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস
রাসায়নিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ হয় কেমোরিসেপ্টরের মাধ্যমে। কেমোরিসেপ্টর হচ্ছে নিউরনের কিছু গুচ্ছ যারা রাসায়নিক পরিনর্তনে সাড়া দেয়। দুই ধরনের কেমোরিসেপ্টর দেখা যায় আমাদের শরীরে। প্রথমটা হচ্ছে কেন্দ্রীয় কেমোরিসেপ্টর, যেটি আমাদের ব্রেনে থাকে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে প্রান্তীয় কেমোরিসেপ্টর, যারা আমাদের শরীরে ব্রেন বাদে অন্য জায়গায় থাকে।
কেন্দ্রীয় কেমোরিসেপ্টর : এটির অবস্থান মেডুলার অঙ্কীয় তলে। যখন আমাদের শরীরে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্বার্শীয় চাপ বেড়ে যায় তখন এই কেমোরিসেপ্টরটি উদ্দীপিত হয় বা সাড়া প্রদান করে।
প্রান্তীয় কেমোরিসেপ্টর : এটির অবস্থান ক্যারোটিড বডি ও অ্যাওর্টিক আর্চে। যখন আমাদের শরীরে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্বার্শীয় চাপ কমে যায় তখন এই কেমোরিসেপ্টরটি উদ্দীপিত হয় বা সাড়া প্রদান করে। নিচের ছবিতে দেখো হৃদপিন্ডের মধ্যে অ্যাওর্টিক আর্চ ও ক্যারোটিড বডির অবস্থান কোথায়-
স্নায়ুর মাধ্যমে ক্যারোটিড বডির সাথে আমাদের মস্তিষ্ক বা ব্রেন যুক্ত থাকে।
প্রথমে আমরা জানবো কেন্দ্রীয় কেমোরিসেপ্টর কিভাবে আমাদের প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমাদের শরীরে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে যায় তখন এর প্বার্শীয় বা আংশিক চাপও বেড়ে যায়। ফলে এটি আমাদের ব্রেনে পৌঁছায় এবং পানির সাথে বিক্রিয়া করে এটি কার্বনিক এসিড তৈরি করে।
CO2 + H2O = H2CO3
এই কার্বনিক এসিড বিজারিত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন ও বাইকার্বোনেট আয়নে পরিণত হয়। আমাদের ব্রেনে হাইড্রোজেন আয়নের ঘনমাত্রা বেড়ে গেলে সেটি কেন্দ্রীয় কেমোরিসেপ্টরকে উদ্দীপিত করে। কেন্দ্রীয় কেমোরিসেপ্টর উদ্দীপ্ত হবার ফলে আমাদের প্রশ্বাস কেন্দ্রও উদ্দীপ্ত হয়। তখন আমাদের প্রশ্বাস ঠিকঠাক মত হয়। যদি একটা ফ্লোচার্টের মাধ্যমে বিষয়টা দেখি তবে আরো সহজভাবে বোঝা যাবে জিনিসটা-
এভাবে রাসায়নিকভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাওয়াতে আমাদের প্রশ্বাস সংগঠিত হচ্ছে।
এবার আমরা জানবো প্রান্তীয় কেমোরিসেপ্টর কিভাবে আমাদের প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমাদের শরীরে কার্বন ডাই-অক্সাইড কমে যায় তখন এর প্বার্শীয় চাপও কমে যায়। ফলে ক্যারোটিড বডি এবং অ্যাওর্টিক আর্চে থাকা প্রান্তীয় কেমোরিসেপ্টর তখন উদ্দীপিত হয়। এই উদ্দীপনা ভেগাস স্নায়ু এবং ল্যাসোফিরিঞ্জিয়াল স্নায়ুর মাধ্যমে মেডুলাতে পৌঁছায়। মেডুলাতে প্রশ্বাস কেন্দ্র থাকাতে এই উদ্দীপনার মাধ্যমে প্রশ্বাস কেন্দ্রও উদ্দীপিত হয়। ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং অক্সিজেনের প্বার্শীয় বা আংশিক চাপও বেড়ে যায়। পুরো বিষয়টা একটা ছকের মাধ্যমে দেখি-
এখানে মনে রাখতে হবে, নিঃশ্বাস কেন্দ্র কোনো উদ্দীপনা পরিবহন করে না। তাই প্রশ্বাস কেন্দ্র যখন উদ্দীপিত হয় না, ঠিক তখনই অটোমেটিক নিঃশ্বাস কার্য সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ প্রশ্বাস কেন্দ্র যখন কাজ বন্ধ করে তখন আমাদের নিঃশ্বাস তৈরি হয়।
আন্তঃকেন্দ্রের সমন্বয়
প্রশ্বাসের ওপর আমাদের ব্রেনের বিভিন্ন কেন্দ্র কিভাবে ভূমিকা রাখে সেটাকে আন্তঃকেন্দ্রের সমন্বয় বলে।
নিউমোট্যাক্সিক কেন্দ্র : এটি প্রশ্বাস কেন্দ্রের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে শ্বসনের হারকে সীমিত করে দেয়। একজন স্বাভাবিক মানুষের শ্বসনের হার ১৪-১৮ প্রতি মিনিটে। তাই এই হারটা যাতে ঠিক থাকে সেজন্য নিউমোট্যাক্সিক কেন্দ্র কাজ করে।
অ্যাপনিউস্টিক কেন্দ্র : এটি প্রশ্বাসকে আরো বেশি সময় ধরে চালাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এটি নিউমোট্যাক্সিক কেন্দ্রের বিপরীত কাজ করে।
নিঃশ্বাস কেন্দ্র : এটি জোরপূর্বক নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণের কাজ করে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- অভিকর্ষ কেন্দ্র
- ঋতু পরিবর্তনের কারণ
- কোষ কী
- ক্যাথোড রে টিউব
- ডিএনএ কী
- তড়িৎ ধারকত্ব
- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণিবিজ্ঞানের গুরুত্ব
- প্রাণিবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা
- প্লাসমোডেসমাটা
- ফার্মাকোডাইনামিক্স ও ফার্মাকোকাইনেটিক্স
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া
- বৃত্তাকার গতি কাকে বলে
- রক্তচাপ কাকে বলে
- শ্বসনের শারীরবৃত্ত
- স্যাটেলাইটে কেপলারের সূত্র