রাইবোজোম কি

রাইবোজোম কি? রাইবোসোম কোষের একটা ছোট অঙ্গানু। এটা কোষের সাইটোপ্লাজমে থাকে। তবে এর সুন্দর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর চারপাশে কোনো কোষঝিল্লি বা Cell Membrane নেই। অর্থাৎ রাইবোসোমের চারপাশে কোনো ফ্লুইড মোজাইক মডেল যুক্ত দ্বিস্তরী আবরণ নেই।

রাইবোজোম কি সেটা তো জানলাম। এটা খুব ভালো একটা কাজ করে। সে এক ধরনের RNA তৈরি করে যার নাম রাইবোসোমাল RNA (বা rRNA). রাইবোসোম rRNA কে তৈরি করে নিউক্লিওলাসের ভেতরে।

রাইবোসোম দেখতে খুব সুন্দরী। এর শরীরে দুটো ভাগ আছে। একটা ভাগের সাইজ বড়, যাকে Large Sub Unit বলে। আর ছোট ভাগটাকে Small Sub Unit বলে।

রাইবোজোম কি

তবে দুঃখের কথা হচ্ছে রাইবোসোমের এই দুটো ভাগ বা unit কোষের মধ্যে কখনোই একইসাথে থাকে না। তারা আলাদা আলাদা হয়ে ঘোরাফেরা করে। তবে একটা বিশেষ সময় এরা দুজন দুজনের সাথে জোড়া বাঁধে। আর সেই সময়টা হচ্ছে যখন তারা rRNA তৈরি করে তখন।

রাইবোজোম কি ও এর কাজ

এখন রাইবোজোম কি সেটা জেনেছি। রাইবোসোমের আসল কাজ হচ্ছে সে আমাদের শরীরের যত ধরনের প্রোটিন আছে সেগুলো তৈরি করা। তাই রাইবোসোমকে অনেক সময় প্রোটিন তৈরির কারখানাও বলা হয়। রাইবোসোম একা একা প্রোটিনকে তৈরি করতে পারে না। mRNA নামক এক ধরনের RNA রাইবোসোমকে একটা বিশেষ কোড দেয়। এই কোড অনুযায়ী রাইবোসোম প্রোটিন তৈরি করে।

mRNA থেকে প্রোটিন তৈরি করার এই প্রসেসটা হচ্ছে Translation. Translation এর শুরুতে রাইবোসোমের small sub unit এর উপর mRNA এর সুতা সুন্দরভাবে বসে যায়-

রাইবোজোম

তারপর large sub unit mRNA এর উপর বসে যায়। অর্থাৎ শুধুমাত্র mRNA থাকার সময় রাইবোসোমের দুটো sub unit একে অপরের উপর বসে যায় এবং একসাথে থাকে।

রাইবোজোম কি

রাইবোসোম এই mRNA থেকে কোড নিয়ে নিয়ে অনেকগুলো Amino Acid এর অনু তৈরি করে যেগুলো পরে বব্ধন তৈরি করে প্রোটিনে রূপান্তর হয়। তাই রাইবোসোম হচ্ছে প্রোটিন তৈরির কারখানা।

রাইবোসোমের প্রকারভেদ

প্রতিটা রাইবোসোমে দুটো পার্ট থাকে। একটা হচ্ছে large sub unit, আরেকটা হচ্ছে small sub unit. একটা রাইবোসোমকে তার ওজনের উপর ভিত্তি করে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন 70s Ribosome, 80s Ribosome.

70s Ribosome কে আদিকোষ বা Prokaryotic Cell-এ পাওয়া যায়। 80s Ribosome কে পাওয়া যায় প্রকৃতকোষ বা Eukariyotic Cell-এ। 70 কিংবা 80 এর পর আমরা এখানে ‘s’ লিখছি, এই s নিয়ে এবার একটু কথা বলবো।

রাইবোজোম কি ও এটিকে পৃথক করার যন্ত্র

S মানে হচ্ছে sedimentation এর একক। এই এককের আবিষ্কারক হচ্ছে Svedberg (ভেদবার্গ) নামক এক ভদ্রলোক। Svedberg Unit নিয়ে জানতে হলে একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে। একটা টেস্টটিউবের ভেতরে Ribosome কে রাখো। এবার টেস্টটিউবকে একটা Centrifuge Machine এর উপর রেখে দিবো। এই মেশিনটা হচ্ছে ব্লান্ডারের মত। যাকেই এর উপর রাখবে সেই ঘোরা শুরু করবে।

রাইবোজোম

Centrifuge Machine প্রতি মিনিটে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার বার ঘুরতে পারে। টেস্টটিউবের ভেতরে Ribosome যখন মিনিটে এক থেকে দেড় হাজার বার ঘোরে তখন Ribosome তার ওজন অনুসারে আলাদা আলাদা হয়ে যায়। টেস্টটিউবের নিচের দিকে জমা হয় ভারী ribosomal unit, উপরের দিকে জমা হয় হালকা ribosomal unit. যেমন 80s এবং 70s Ribosome এর মধ্যে 80s হচ্ছে ভারী, তাই এটি নিচের দিকে জমা হবে। 70s হালকা বলে এটি টেস্টটিউবের উপরের দিকে জমা হবে।

রাইবোজোম

70s এবং 80s এরা হচ্ছে Ribosome এর ওজনের পার্থক্য। কিন্তু একটা Ribosome এর দুটো অংশ থাকে। একটা হচ্ছে Large Subunit, আরেকটা হচ্ছে Small subunit. 70s Ribosome এর এরকম দুটো subunit থাকে। একটার নাম 50s, আরেকটা 30s.

রাইবোজোম কি

80s Ribosome এর দুটো subunit হচ্ছে 60s এবং 40s.

রাইবোজোম কি

দুটো subunit 50s এবং 30s যোগ করলে 80s হবার কথা, কিন্তু সেটা না হয়ে হয় 70s. আবার 60s এবং 40s দুটো subunit যোগ করলে সেটা 100s হবার কথা, সেটা না হয়ে হয় 80s. এর কারন হচ্ছে Ribosome এর দুটো subunit যখন আলাদা থাকে তখন তারা 50s, 30s হিসেবে কিংবা 60s, 40s হিসেবে থাকে। কিন্তু যখন একটা পূর্নাঙ্গ Ribosome তৈরি হয় তখন দুটো subunit একে অপরের ভেতর ঢুকে যায়।

অর্থাৎ 50s এবং 30s পরস্পরের ভেতর এমনভাবে ঢুকে যায় যাতে তাদের টোটালকে 70s এর মত দেখায়। একইভাবে 60s এবং 40s তারাও পরস্পরের ভেতর এমনভাবে ঢুকে যাতে টোটাল Ribosome কে 80s এর মত দেখায়। তাহলে এখান থেকে আমরা বুঝলাম রাইবোজোম কি।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool