রুশ বিপ্লব

বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত, সাড়া জাগানো এবং ইতিহাস পাল্টানো বিপ্লব ছিল রুশ বিপ্লব। এই বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাসের রাজতন্ত্রের শাসনের অবসান হয় এবং একটি সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের সৃষ্টি হয়। এছাড়া এই রুশ বিপ্লব ছিল তৎকালীন রাশিয়ার নির্যাতিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষদের অধিকার আদায়ের বিপ্লব।

রুশ বিপ্লব যেভাবে শুরু হয়

১৮৮৪ সালের ১ নভেম্বর রাশিয়ার জার সাম্রাজ্যের সর্বশেষ জার দ্বিতীয় নিকোলাস ক্ষমতায় বসেন। সে সময় রাশিয়ার গরিবদের দিন ছিল দুর্দশাগ্রস্ত এবং কষ্টে ভরপুর। তারা ঠিকমতো খেতে পারতো না। কোন কারণ ছাড়াই জার তাদের উপর উচ্চ করারোপ করতেন। তারা ছিলেন অত্যন্ত অবহেলিত পাত্র। তারা ছিলেন শোষিত এবং নির্যাতিত। তারা এই জারের অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই কোন কারন ছাড়াই তাদেরকে অমানবিক অত্যাচার এবং হত্যা করা হতো। 

১৯০৪ সালে রাশিয়া এবং জাপানের মধ্যে মুনচুরিয়া ও কোরিয়া বিভক্ত করা নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে রাশিয়া ব্যাপকভাবে পরাজিত হয় এবং রাশিয়াতে খাদ্যের অভাব তীব্র ভাবে দেখা দেয়। এই খাদ্যের অভাব রাশিয়ার মানুষকে জার এর বিরুদ্ধে আরও বিদ্রোহী করে তুলে। 

রুশ বিপ্লবের প্রথম সূচনা হয় ১৯০৫ সালের ২২ জানুয়ারি। সেদিন ফাদার গাপনের নেতৃত্বে এক বিক্ষোভ মিছিল বের হয় জারের বিরুদ্ধে। কোন এক পর্যায়ে বিক্ষোভ-মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করে জারের সৈন্য বাহিনী। শত শত মানুষের রক্তের বিনিময়ে রঞ্জিত হয় রাশিয়ার রাজপথ। এই দিনকে ব্লাডি সানডে বলা হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, জার এর উপর মানুষ আরো ক্ষিপ্ত হতে শুরু করে এবং জারের বিরুদ্ধে তীব্র ভাবে প্রতিবাদ শুরু করে।

তখন জার বাধ্য হন রাষ্ট্রীয় ডুমা বা জাতীয় পরিষদ গঠন করতে। এটা ছিল শুধু নাম দেখানো, কোনো ক্ষমতাই ছিল না এই জাতীয় পরিষদের।

রাশিয়ার অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। রাশিয়ার অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই যুদ্ধের কারণে। খাদ্যের অভাব এর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব দেখা দিতে থাকে। মানুষের জীবন ধারণ করা একেবারে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এছাড়া জার উচ্চ করারোপের পাশাপাশি যুবকদের যুদ্ধ করার জন্য চাপ দিতে থাকে। অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে রাশিয়ার পরিবেশ।

রুশ বিপ্লব

রুশ বিপ্লবের আরো কিছু তথ্য

খাদ্য (রুটি) সংকটের প্রতিবাদে ১৯১৭ সালের ৮ মার্চ (আন্তর্জাতিক নারী দিবস) জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৭ সালে কয়েক হাজার নারী তৎকালীন রাশিয়ার রাজধানী পেট্রোগ্রাদের রাজপথে নেমে আসে। তাদের সাথে যোগ হয় বিভিন্ন শ্রমিক জোট এবং ছাত্র জোট। তাদের মুখে মুখে তখন স্লোগান ছিল-

জারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে জারের সেনারাও জারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। এমতবস্থায়, জার পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ১৫ মার্চ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে পতন হয় প্রায় ৩০০ বছর ধরে চলে আসা জার শাসন।

জারের ক্ষমতা ছাড়ার পরে কেন্দ্রীয় ডুমা একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করে। এই অস্থায়ী সরকার জনগণের অধিকার নিয়েও কোন মাথা ব্যাথা ছিল না, এমনকি তারা খাদ্য সমস্যার কোন সমাধান দিতে পারে নাই।

বলশেভিক নেতা লিয়ন টটোস্কি সরকারের কাছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে রাশিয়াকে প্রত্যাহার করার দাবি জানান। কিন্ত তার দাবি নাকচ করা হয়। এতে জনগণ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ১৯১৭ সালের ৩রা এপ্রিল ১০ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে সেন্ট পিটার্সবার্গে আসেন রুশ বিপ্লবের মহানায়ক ভ্লাদিমির লেনিন। লেলিন এবং তার দল বলশেভিক পার্টি জনগণকে এই অস্থায়ী সরকার বিরোদ্ধে প্রতিবাদী করে তুলে। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর (জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ২৫ অক্টোবর, ১৯১৭) এই অস্থায়ী সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হয় যার নেতৃত্বে ছিলেন লেলিন নিজেই। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে এই অস্থায়ী সরকারের পতন হয়। লেলিনকে প্রধান রেখে সরকার গঠন করে বলশেভিক পার্টি। তার শাসন কাল (১৯১৭-১৯২৪)।             

উল্লেখ্য, ভ্লাদিমির লেলিন স্মৃতির সম্মানে ১৯২৪ সালে পেট্রোগ্রাদের (সাবেক সেন্ট পিটার্সবার্গ) নাম পরিবর্তন করে লেলিনগ্রাদ রাখা হয়। যদিও ১৯৯১ সালে পুনরায় “সেন্ট পিটার্সবার্গ”নামটি ফিরিয়ে আনা হয়। 

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool

অতিথি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-

write@thecrushschool.com