রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল জানার আগে রাদারফোর্ডের একটি পরীক্ষা বা এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে আগে জানতে হবে। এই এক্সপেরিমেন্ট “আলফা কণা পরীক্ষা” বা Alpha Particle Experiment হিসেবে পরিচিত। রাদারফোর্ড এই পরিক্ষাটিতে একটি আলফা কণার উৎস, একটি স্বর্ণের তৈরি পাতলা পাত এবং একটি জিংক সালফাইড যুক্ত পর্দা বা প্লেট ব্যবহার করেন, একে ফটোগ্রাফিক প্লেট বলা হয়। যখন আলফা কণা এই প্লেটের উপর পড়ে তখন সেই জায়গাটিতে জিংক সালফাইড আলো তৈরি করে।

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল এর এক্সপেরিমেন্ট

এই এক্সপেরিমেন্ট অনুসারে যখন পাতলা স্বর্ণপাতের মধ্য দিয়ে আলফা কণিকাকে জিংক সালফাইডের প্রলেপযুক্ত ফটোগ্রাফিক প্লেটে নিক্ষেপ করা হয় তখন প্রায় 99% আলফা কণা স্বর্ণপাত ভেদ করে অপর পাশে চলে যায় এবং ফটোগ্রাফিক প্লেটে আলো তৈরি করে। খুব কম সংখ্যক আলফা কণা তার দিক পরিবর্তন করে এবং সোজাসুজি স্বর্ণপাতের অপর পাশে যায় না। খুবই অল্প সংখ্যক আলফা কণা স্বর্নপাতে প্রতিফলিত হয়ে পিছনের দিকে ফিরে আসে।আলফা কণা এক্সপেরিমেন্ট

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল এক্সপেরিমেন্টের সিদ্ধান্ত

এখন রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল এর এই পর্যবেক্ষণ থেকে তিনটি সিদ্ধান্ত নেন-

   ১. বেশিরভাগ আলফা কণা স্বর্ণপাত ভেদ করে সোজাসুজি পার হয়ে যায়, এর মানে পরমাণুর বেশিরভাগ অঞ্চল ফাঁকা।

   ২. কিছু আলফা কণা খানিকটা পথ বেঁকে পার হয়, এর মানে পরমাণুর সামান্য জায়গায় ধনাত্মক চার্জ আবদ্ধ থাকে, যাকে নিউক্লিয়াস বলা হয়। নিউক্লিয়াস এবং আলফা কণা দুটোই ধনাত্নক চার্জ যুক্ত বলে এরা একে অপরকে বিকর্ষণ করে।

   ৩. খুবই কম সংখ্যক আলফা কণা বিপরীত দিকে ফিরে আসে, যার মানে পরমাণুর নিউক্লিয়াস পরমাণুর বেশিরভাগ ভর বহন করে, যেখান দিয়ে আলফা কণা গমন করলে সেটি ধাক্কা খেয়ে পেছনের দিকে ফিরে আসে।

এই সিদ্ধান্ত গুলো থেকেই রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল হিসেবে নতুন একটা মডেল তৈরি করেন, যাকে রাদারফোর্ড মডেল বা সৌরজগৎ মডেল বলা হয়।

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলের মূল কথা

এবার রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের মূল কথাগুলো হচ্ছে-

  • পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে একটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ভারী বস্তু থাকে। এই ভারী বস্তুকে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস বলে। পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অতি নগণ্য।
  • পরমাণুর প্রায় সবটুকু ভর এর নিউক্লিয়াসে পুঞ্জীভূত। তাই মোটামুটিভাবে নিউক্লিয়াসের ভরই পারমাণবিক ভর
  • সৌরমন্ডলে সূর্যের চারদিকে আবর্তনীয় গ্রহসমূহের মত পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে কক্ষপথে কতগুলো ঋণাত্মক কণিকা সর্বদা ঘূর্ণায়মান থাকে। এদেরকে ইলেকট্রন বলে।
  • পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ। তাই পরমাণুতে ধনাত্মক চার্জের সংখ্যা এবং পরিক্রমণশীল ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনের সমান।
  • নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনের মধ্যে বিরাজিত কেন্দ্রমুখী স্থির বিদ্যুৎ আকর্ষণ বল ও ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রবিমুখী বলের মান সমান ও বিপরীতমুখী।

পরমাণু

কিন্তু রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল বেশী দিন টিকে নাই। এর কয়েকটি কারণ হচ্ছে-

রাদারফোর্ড পরমাণুকে তুলনা করেছিলেন সৌরজগতের সাথে, যেখানে সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ গুলো ঘুরছে। কিন্তু পৃথিবী, সূর্য কিংবা অন্যান্য গ্রহ কারোই চার্জ নেই। অন্যদিকে পরমাণুতে ইলেকট্রন, প্রোটন এদের চার্জ রয়েছে।

গ্রহগুলো যখন একে অপরকে ঘিরে ঘুরতে থাকে তখন তাদের মধ্যে কেন্দ্রমুখী বল ছাড়া আর কোনো বল কাজ করে না। কিন্তু যখন নেগেটিভ চার্জ যুক্ত ইলেকট্রন পজিটিভ চার্জ যুক্ত নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘুরতে থাকে তখন স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণের জন্য ঘুরতে ঘুরতে একটা সময় পর ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের মধ্যে পতিত হবে। কাজেই পরমাণুর তখন কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তাই রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুসারে পৃথিবীর প্রত্যেকটা পরমাণু অস্থায়ী হিসেবে গণ্য হবে, কিন্তু বাস্তবে কোনো পরমাণু অস্থায়ী না। তাহলে এটাই হলো রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল।

ক্রাশ স্কুলের Youtube চ্যানেলের জয়েন করুন-

www.youtube.com/crushschool

অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-

write@thecrushschool.com