স্কেলার ও ভেক্টর রাশি নিয়ে জানবো এখন। পদার্থবিজ্ঞানের একটি প্রধান শাখা হচ্ছে বলবিজ্ঞান যেখানে বলের ক্রিয়াধীন বস্তুর স্থিতি ও গতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ভৌতজগতে যা কিছু পরিমাপ করা যায় তাকেই রাশি বলে। যেমন কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য, ভর, আয়তন, ঘনত্ব ইত্যাদি পরিমাপ করা যায়। এগুলো সবই রাশি। কোনো রাশি যখন পরিমাপ করা হয় তখন তার একটি মান থাকে। এ মান প্রকাশ করতে আমরা একটি সংখ্যা এবং একটি একক ব্যবহার করি।
যেমন, আমরা যদি বলি সাইফার উচ্চতা 1.5 মিটার, তাহলে বুঝা যায় দৈর্ঘ্যের একক মিটার, আর সাইফার উচ্চতা তার 1.5 গুণ। কিন্তু কেবল মান দিয়েই সকল রাশিকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায় না। যেমন, আমরা যদি বলি একটি গাড়ি ঘণ্টায় 30 কিলোমিটার বেগে চলছে, তাহলে এটা বুঝা যাবে যে গাড়িটি এক ঘণ্টায় 30 km দূরত্ব অতিক্রম করেছে, কিন্তু গাড়িটি কোন দিকে সে দূরত্ব অতিক্রম করেছে, তা জানা যাবে না। গাড়িটির গতির প্রকৃত অবস্থা বুঝতে হলে গাড়িটির বেগ কোন দিকে সেটাও উল্লেখ করতে হবে। দিকের বিবেচনায় আমরা বস্তুজগতের সকল রাশিকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি- স্কেলার ও ভেক্টর রাশি।
স্কেলার ও ভেক্টর রাশি
এবার আমরা স্কেলার ও ভেক্টর রাশি নিয়ে জানবো। যে সকল ভৌত রাশিকে শুধু মান দ্বারা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায়, দিক নির্দেশের প্রয়োজন হয় না তাদেরকে স্কেলার রাশি বলে। দৈর্ঘ্য, ভর, দ্রুতি,কাজ,শক্তি,সময়,তাপমাত্রা ইত্যাদি স্কেলার রাশির উদাহরণ।
যে সকল ভৌত রাশিকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য মান ও দিক উভয়ের প্রয়োজন হয় তাদেরকে ভেক্টর রাশি বলে। যেমন- সরণ, ওজন, বেগ,ত্বরণ, বল, তড়িৎ তীব্রতা, চৌম্বক তীব্রতা ইত্যাদি।
ভেক্টর রাশি হচ্ছে এমন এক ধরনের রাশি যার মান এবং দিক দুটোই থাকে। যদি কোনো রাশির শুধুমাত্র মান থাকে তবে সেটি ভেক্টর রাশি হতে পারবে না। ঠিক তেমনিভাবে যদি কোনো রাশির শুধুমাত্র দিক থাকে তবে সেটিও ভেক্টর রাশি হতে পারবে না। ভেক্টর রাশির কিছু উদাহরণ হল- সরণ, বেগ, বল, ত্বরণ ইত্যাদি।
স্কেলার ও ভেক্টর রাশির তুলনামূলক আলোচনা
এবার নিচে খেয়াল করো, একটা রেখা OP কে, যেটি একটি ভেক্টর নির্দেশ করছে। কারণ এর মান ধরা যাক 5 মিটার এবং এর দিক ধরা যাক ডান দিকে। একইভাবে QR কে দেখো, এটিও একটি ভেক্টর রাশি। কারণ এটির মান ধরা যাক 5 মিটার এবং এটির দিক ধরা যাক বাম দিকে। যদিও ভেক্টর দুটোর মান সমান কিন্তু এরা দুজন কখনোই সমান ভেক্টর হবে না, কেননা এদের দিক পরস্পর বিপরীতমুখী। তাহলে বোঝা গেল, দুটো ভেক্টর তখনি সমান হবে যখন তাদের মান এবং দিক দুটোই সমান হবে।
নিচের সারণি থেকে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতিটি ভেক্টরকে মান ও দিক দিয়ে আর স্কেলার রাশিগুলোকে কেবল মান দিয়ে নির্দেশ করা হয়েছে।
সারণি
নিচে স্কেলার এবং ভেক্টর রাশির মধ্যকার পার্থক্য তুলে ধরা হলো-
স্কেলার ও ভেক্টর রাশি এর ক্ষেত্রে ভেক্টর রাশির নির্দেশনা
এখন স্কেলার ও ভেক্টর রাশি এর ক্ষেত্রে ভেক্টর রাশি হচ্ছে সংকেতের উপর তীর চিহ্ন দিয়ে নির্দেশ করা হয়, যেমন Ā। কিন্তু শুধুমাত্র A ভেক্টর রাশি এর মান নির্দেশ করে। ছাপার ক্ষেত্রে অনেক সময় Ā এর পরিবর্তে বোল্ড হরফ A দিয়ে ভেক্টর এবং সাধারণ হরফ A দিয়ে রাশিটির মান প্রকাশ করা হয়।
নিচের চিত্রে দেখো, ভেক্টর রাশিকে একটি তীর চিহ্নিত সরলরেখা দ্বারা নির্দেশ করা হচ্ছে। A ও B দুটি সরলরেখার দৈর্ঘ্য ভেক্টর রাশিটির মান এবং তীর চিহ্ন এর দিক নির্দেশ করছে। উদাহরণ স্বরূপ এই চিত্রে A দ্বারা 150 km সরণকে নির্দেশ করা হয়েছে। সুতরাং এই চিত্রে A ভেক্টরটি পশ্চিম দিকে 150 km সরণ নির্দেশ করছে। আবার B ভেক্টরটি পূর্বদিকের সাথে 30 degree কোণে উত্তর দিকে 100 km সরণ নির্দেশ করছে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- দূরত্ব ও সরণ
- ভরবেগ কাকে বলে
- ভেক্টর অভিক্ষেপ
- ভেক্টর গুনন
- ভেক্টর বিভাজন
- ভেক্টর যোগ ও বিয়োগ
- ভেক্টর রাশির বিয়োগফল
- ভেক্টর লব্ধির সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মান
- ভেক্টর সম্পর্কিত কিছু সংজ্ঞা
- ভেক্টর সামান্তরিক সূত্র
- ভেক্টরের বন্টন সূত্র
- ভেক্টরের সংযোগ সূত্র
- ভৌত রাশি কাকে বলে
- মৌলিক রাশি কাকে বলে
- লব্ধি ভেক্টর কাকে বলে