ঋতু পরিবর্তনের কারণ নিয়ে জানব এখন আমরা। সূর্যের চারপাশে উপবৃত্তাকার পথে সারাক্ষণ পৃথিবী ঘুরতে থাকে। পুরো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে আসতে পৃথিবী সময় নেয় প্রায় ৩৬৫ দিনের মত। সূর্য এবং পৃথিবী যখন একই রেখার উপর অবস্থান করে তখন সেই রেখাকে Orbital Plane বলে। নিচের ছবিতে দেখো-
Orbital Plane এর মধ্যে দুটো বিন্দু থাকে, একটা বিন্দুতে সূর্য এবং অপর একটা বিন্দুতে পৃথিবী অবস্থান করে। পৃথিবী যেমন সম্পূর্ণ সূর্যের চারদিকে ঘোরে, তেমনি পৃথিবী একটা fixed axis কে কেন্দ্র করে নিজে নিজেও ঘুরতে থাকে। পৃথিবীর নিজে নিজে ঘোরাতে আহ্নিকগতি বলে। এই ঘূর্ণনের ফলে আমরা দিন-রাতের দেখা পাই।
ঋতু পরিবর্তনের কারণ
এখন ঋতু পরিবর্তনের কারণ নিয়ে অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে জানতে হবে পৃথিবী কখনোই তার নিজ অক্ষের চারপাশে ঘোরার সময় তার orbital plane এর সাথে লম্ব বরাবর কিংবা orbital plane বরাবর একই দিকবিন্যাস করে ঘোরে না। Orbital Plane এর উপর যদি একটা লম্ব (Perpendicular Libe) আঁকা হয়, সেই perpendicular line এর সাথে 23.4 ডিগ্রী করে যে কল্পিত রেখা কল্পনা করা হয়, সেই রেখাকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরতে থাকে। নিচের ছবিতে দেখো-
তবে দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবী ঘোরার ফলে এই কোণের মান পরিবর্তন হয়। যেমন- প্রায় ৪১ হাজার বছর সময়সীমাতে এই কোণের মান 22.1 degree থেকে 24.5 degree পর্যন্ত পরিবর্তন হতে পারে। এর মানে, পৃথিবী সোজাসুজি কোনো অক্ষকে ঘিরে ঘোরে না, একটা নির্দিষ্ট কোণে কাত হয়ে থাকা অবস্থায় ঘোরে। এই দীর্ঘ সময় ধরে কাত হয়ে থাকা কোণের পরিবর্তনের সাথে সাথে পৃথিবীর আবহাওয়া, পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে।
তবে কোণের পরিমান হুট করে পরিবর্তন হয় না বলে পৃথিবীর আবহাওয়া, জলবায়ু হুট করে পরিবর্তন হয়ে যায় না। আমরা এখন যে অঞ্চলটাকে বরফাচ্ছাদিত দেখছি, সেটা হয়ত কয়েক হাজার বছর পরে মরুভূমিতে পরিনত হয়ে যেতে পারে। আবার যে অঞ্চলে এখন প্রচুর গরম পড়ছে, আরো কয়েক হাজার বছর সেখানে শীত পড়তে পারে।
এবার আমরা জানবো পৃথিবীর এই একদিকে হেলে থাকা কিভাবে পৃথিবীর ঋতু পরিবর্তনে কাজ করে।
ঋতু পরিবর্তন পৃথিবীর জন্য কিভাবে কাজ করে
ধরা যাক, বছরের কোনো এক সময় সূর্যের ঠিক ডান পাশে orbital plan এর উপর পৃথিবী অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে পৃথিবী যেহেতু 23.4 degree হেলে আছে, তাই সূর্যের বেশিরভাগ আলো পড়বে দক্ষিণ অঞ্চলের দিকে (Southern Hemisphere)। এক্ষেত্রে উত্তর মেরু দিনের আলো পাবে না এবং সেখানে শীতকাল থাকবে, আবার দক্ষিণ মেরুতে গ্রীষ্মকাল থাকবে।
আবার, ৬ মাস পর পৃথিবী যখন ১৮০ ডিগ্রী পথ ঘুরে সূর্যের বিপরীত পাশে অবস্থান করবে, তখন সূর্যের ঠিক বাম পাশে থাকবে পৃথিবীর অবস্থান। এক্ষেত্রে দক্ষিণ অঞ্চল সূর্যের খুব কম আলো পাবে এবং সেখানে শীতকাল থাকবে। দক্ষিণ মেরু কোনো সূর্যের আলো পাবে না বলে সেখানে দীর্ঘসময় রাত থাকবে। বিপরীতভাবে উত্তর মেরুতে সূর্যের আলো বেশি পরিমাণে পড়বে বলে সেখানে গ্রীষ্মকাল থাকবে।
আবার, সূর্যের সাথে লম্বালম্বিভাবে যদি পৃথিবী অবস্থান করে, তবে বছরের দুটো সময় উত্তর মেরুতে শরতকাল থাকলে দক্ষিণ মেরুতে বসন্তকাল থাকবে। বিপরীতভাবে উত্তর মেরুতে বসন্তকাল থাকলে দক্ষিণ মেরুতে শরতকাল থাকবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দুটো মেরুতেই সমান পরিমান সূর্যের আলো পড়বে।
গ্রীষ্মকাল সময়টাতে সূর্যের তীর্যক রশ্মি সরাসরি পৃথিবীর উপর পড়ে বলে এই সময়টাতে সূর্যকে ঠিক মাথার উপর উঠতে দেখা যায়। আবার শীতকালে সূর্যের আলো পৃথিবীর ভূমি প্রায় ঘেঁষে পড়ে। তাই এই সময়টাতে সূর্যকে আকাশের এক কোণায় দেখা যায়। তাই এটাই ছিলো ঋতু পরিবর্তনের কারণ।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- আদর্শ আচরণ থেকে বাস্তব গ্যাসের বিচ্যুতির কারণ
- আহ্নিক গতি কাকে বলে
- জোয়ার ও ভাটা
- জোয়ার-ভাটার প্রকারভেদ ও প্রভাব
- পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার কারণ (Causes of Different States of Matter)
- পৃথিবীর কাল্পনিক রেখা সমূহ
- পৃথিবীর গঠন
- পৃথিবীর গতি কত প্রকার
- বায়ু প্রবাহ
- বারিমণ্ডল
- ভর ও ওজন (Mass & Weight)
- ভূগোল কাকে বলে
- মহাসাগর
- সমুদ্রস্রোত (Sea Tide)
- সৌরজগৎ কাকে বলে