তল ভেক্টর (Vector Plane)
কোনো ভেক্টর রাশি যেকোনো একটি তল থেকে তার লম্ব দিক বরাবর যে দিক নির্দেশ করে তাকে তল ভেক্টর বলে।
যেমন তোমরা এখন মোবাইল ফোনে কিংবা কম্পিউটারে এই লেখাটি পড়ছো। তাহলে তোমাদের মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিন বা পর্দা হচ্ছে একটি তল। এটি তোমাদের চোখ বরাবর আলো দিচ্ছে, ফলে তোমরা এই লেখাটি পড়তে পারছো। তার মানে তোমাদের কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্কিনের area বা ক্ষেত্রফলটি হচ্ছে এক ধরনের তল ভেক্টর।
সমান ভেক্টর (Equals Vector)
যদি দুটি ভেক্টর একই জাতীয় হয় এবং তাদের মান ও দিক একই হয় তবে সেই ভেক্টর দুটোকে সমান ভেক্টর বলে।
ধরা যাক তুমি O বিন্দু থেকে A বিন্দুতে দক্ষিণ দিক বরাবর 5 মিটার অতিক্রম করে গিয়েছো এবং তোমার অন্য একজন বন্ধু B বিন্দু থেকে C বিন্দুতে দক্ষিণ দিকেই 5 মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে গিয়েছে। এখানে তুমি এবং তোমার বন্ধু দুজনের একইজাতীয় কাজ অর্থাৎ সরণ হয়েছে দক্ষিণ দিক বরাবর 5 মিটার। তাই তোমার এবং তোমার বন্ধু দুজনের ভেক্টর OA এবং BC সমান ভেক্টর হবে। অর্থাৎ OA = BC
সমান ভেক্টর যাচাইয়ের পরিক্ষা-
একটা মোরগ এবং একটা মুরগির দৌড় প্রতিযোগিতায় মুরগি জয়ী হয়েছে। মোরগ এবং মুরগিদের মধ্যে সমান ভেক্টর কাজ করছে কিনা তা যাচাই করো!
আমাদের শুরুতে জানতে হবে, সমান ভেক্টর হতে হলে কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা লাগে। সমান ভেক্টরের বৈশিষ্ট্য তিনটি-
- দুটি ভেক্টরকে একই জাতীয় হতে হবে
- ভেক্টর দুটিকে একই দিক বরাবর কাজ করতে হবে, এবং
- ভেক্টর দুটোর মান সমান হতে হবে
এবার একটু খেয়াল করি, আমাদের মোরগ এবং মুরগির দৌড় প্রতিযোগিতায় মুরগিটি আগে তার গন্তব্যে পৌঁছেছে। তাই এদের মধ্যে দুটো ভেক্টর রাশি কাজ করবে, সরণ এবং বেগ।
যদি এদের দুজনের মধ্যে সরণ এর কথা চিন্তা করি তবে এরা অবশ্যই তাদের যাত্রা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গিয়েছিল এবং তারা একই দিকে গিয়েছিল। কাজেই তাদের দৌড় প্রতিযোগিতায় দূরত্বের মান সমান ছিল এবং দুজনের দিক ছিল একই দিকে। কাজেই তাদের দুজনের সরণ হচ্ছে সমান ভেক্টর।
কিন্তু যদি এদের দুজনের বেগের কথা চিন্তা করি তবে মুরগিটির বেগ ছিলো বেশি, কিন্তু মোরগের বেগ ছিল কম। যদিও তাদের বেগ একই দিক বরাবর কাজ করেছে এবং দুজনের বেগ হচ্ছে সমজাতীয় ভেক্টর, কিন্তু তাদের বেগের মান সমান ছিল না। কাজেই এখানে বেগ সমান ভেক্টরের মত কাজ করবে না।
তাহলে বলা যায় মোরগ এবং মুরগির মধ্যে সরণ ভেক্টরটি সমান ভেক্টর হিসেবে কাজ করেছে।
বিপরীত ভেক্টর (Negative Vector)
যদি দুটি ভেক্টর সমজাতীয় হয় এবং তাদের মান সমান হয় কিন্তু তাদের দিক একে অপরের বিপরীত দিকে হয় তবে দ্বিতীয় ভেক্টরকে প্রথম ভেক্টরের বিপরীত ভেক্টর বলে।
ধরো তুমি প্রতিদিন তোমার বাসা থেকে 2 কিলোমিটার দূরে তোমার একজন স্টুডেন্টের বাসায় পড়াতে যাও। আবার তাকে পড়ানো শেষ করে তুমি তোমার বাসায় 2 কিলোমিটার অতিক্রম করে বিপরীত দিকে ফিরে আসো। এখানে তোমার যাওয়া-আসা হচ্ছে একটি সরণ এবং তোমার যাওয়া-আসার রাস্তার দুরত্ব সমান,অর্থাৎ 2 কিলোমিটার। কিন্তু তুমি প্রথমবার বাসা থেকে তোমার স্টুডেন্টের বাসায় যে দিক বরাবর যাও, তার বাসা থেকে তোমার বাসায় ফিরে আসো ঠিক বিপরীত দিক বরাবর। তাই এটি হচ্ছে বিপরীত ভেক্টর যেখানে দুটি ভেক্টর সমজাতীয়, তাদের মান সমান, কিন্তু দিক বিপরীতমুখী।
সদৃশ ভেক্টর (Similar Vector)
যদি দুটি ভেক্টরের দিক একই হয় এবং তারা যদি সমজাতীয় হয় তবে তাদেরকে সদৃশ ভেক্টর বলে।
মনে করো তুমি এবং তোমার এক বন্ধু বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় যাবা। কিন্তু আমেরিকা যাবার পথে মাঝখানে আফ্রিকা পড়ল। এখন তুমি আফ্রিকায় থেমে গেলে এবং তোমার বন্ধু ঠিকই আমেরিকায় চলে গেল।
এখানে তুমি এবং তোমার বন্ধু দুজনেরই যাত্রা পথের দিক একই ছিল এবং তোমরা দুজনেই তোমাদের সরণ ঘটিয়েছ। কিন্তু মাঝপথে তুমি আফ্রিকায় থেমে যাওয়াতে তোমাদের দুজনের সরণের মান একই হয়নি।
ধরা যাক তুমি 500 কিলোমিটার অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে আফ্রিকায় গিয়েছো কিন্তু তোমার বন্ধু 1000 কিলোমিটার অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছে। তাই তোমাদের দুজনের ভেক্টর একটি সদৃশ ভেক্টর।
বিসদৃশ ভেক্টর
দুটো সমজাতীয় ভেক্টরের মান সমান এবং তাদের দিক যদি বিপরীত হয় তবে সেই ভেক্টর কে বিসদৃশ ভেক্টর বলে।
আগের উদাহরণটা খেয়াল করো, তোমার বন্ধু যদি আমেরিকা থেকে আফ্রিকায় ফিরে আসে এবং সেই একই মুহূর্তে তুমি যদি আফ্রিকা থেকে আমেরিকার দিকে যাও তবে এক্ষেত্রে দুজনেই সমান দূরত্ব অতিক্রম করবে এবং দুজনেই সমজাতীয় কাজ অর্থাৎ সরণ ঘটাবে। কিন্তু দুজনের দিক বিপরীত হওয়াতে তোমাদের দুজনের ভেক্টর হবে বিসদৃশ ভেক্টর।
সমরেখ ভেক্টর
যেসব ভেক্টর একই দিকে কাজ করে তাদেরকে সমরেখ ভেক্টর বলে।
মনে করো তুমি O বিন্দু থেকে A বিন্দুর দিকে যাচ্ছ এবং তোমার বন্ধু A বিন্দু থেকে B বিন্দুর দিকে যাচ্ছে। কিন্তু OA এবং AB এরা একই সরলরেখায় অবস্থিত। তাহলে তোমার এবং তোমার বন্ধুর যাত্রাপথের ভেক্টরটি হবে সমরেখ ভেক্টর।
সমতলীয় ভেক্টর (Co-planner Vector)
সমতলীয় অর্থ হচ্ছে যারা একই তল বরাবর থাকে। যে সকল ভেক্টর একই তল বরাবর থাকে তাদেরকে সমতলীয় ভেক্টর বলে।
ধরো তুমি এবং তোমার দুজন বন্ধু একটা ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আছ। হঠাৎ তোমরা তিনজনই নির্দিষ্ট তিনটি দিকে হাঁটা শুরু করলে। এখানে তোমাদের তিনজনেরই সরণ হচ্ছে, যদিও তোমাদের দিক ভিন্ন। কাজেই তোমাদের তিনজনের সরণ ভেক্টরটি হচ্ছে সমতলীয় ভেক্টর।
মনে রাখতে হবে, সমতলীয় ভেক্টরের ক্ষেত্রে প্রতিটা ভেক্টরের মান এবং দিক একই হবার কোনো প্রয়োজন নেই।
বিপ্রতীপ ভেক্টর (Reciprocal Vector)
যদি দুটো ভেক্টরের দিক একই হয় এবং তারা যদি সমজাতীয় হয় তবে ভেক্টর দুটিকে বিপ্রতীপ ভেক্টর বলে।
তবে বিপ্রতীপ ভেক্টরের একজনের মান অপরজনের মানের বিপরীত হয়। যেমন 5 এর বিপরীত মান 1/5.
যদি A = 5i হয়, তবে এর বিপরীত ভেক্টরের মান হবে-
B = (1/5)i হবে
একক ভেক্টর (Unit Vector)
যেসব ভেক্টরের মান 1 তাদেরকে একক ভেক্টর বলে।
কোনো ভেক্টরকে তার মান দিয়ে ভাগ করলে সেই ভেক্টরের একক ভেক্টর পাওয়া যায়। যদি কোনো ভেক্টরের মান E = 3i – 4j + 5k হয়, তবে এই ভেক্টরের মান হবে-
E = √(32 + 42 + 52)
= √50
এবং এই ভেক্টরের একক ভেক্টরের মান হবে-
E/E = (3i – 4j + 5k) / √50
একক ভেক্টরকে প্রকাশ করা হয় ছোট হাতের লেটার দিয়ে এবং এর উপরে একটা টুপি চিহ্ন বসিয়ে, যেমন-
ê = (3i – 4j + 5k) / √50
আয়ত একক ভেক্টর (Rectangular Unit Vector)
আয়ত একক ভেক্টর নিয়ে জানার জন্য প্রথমে আমাদের জানতে হবে ত্রিমাত্রিক স্থানাংক ব্যবস্থা নিয়ে, যেখানে তিন দিক বরাবর তিনটা অক্ষ থাকে X, Y, Z থাকে। ধরা যাক O আমাদের মূল বিন্দু এবং O থেকে X, Y, Z এই তিন দিকে তিনটি অক্ষ বরাবর তিনটি রেখা চলে গিয়েছে। যদি এই ত্রিমাত্রিক ব্যবস্থায় একটা পয়েন্ট বা বিন্দু P হয়, তবে তার ত্রিমাত্রিক অবস্থান বা স্থানাংক হবে- P (x,y,z).
এবার আমরা ত্রিমাত্রিক স্থানাংক ব্যবস্থায় তিনটা অক্ষকে (X, Y, Z অক্ষ) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করে নেই।
X অক্ষ বরাবর প্রত্যেকটা ঘরকে বলা হয় i, Y অক্ষ বরাবর প্রত্যেকটা ঘরকে বলা হয় j এবং Z অক্ষ বরাবর প্রত্যেকটা ঘরকে বলা হয় k.
এখানে i, j, k এরা তিনজন তিনটি অক্ষ বরাবর একক ভেক্টর হিসেবে কাজ করছে।
তিনটি অক্ষ নিয়ে একক ভেক্টরের অবস্থানকে বলা হয় আয়ত একক ভেক্টর।
অবস্থান ভেক্টর (Position Vector)
অবস্থান ভেক্টর নিয়ে জানার জন্য আমরা আবারও ত্রিমাত্রিক স্থানাংক ব্যবস্থা কে নিয়ে আসি যে ব্যবস্থায় একটা পয়েন্ট বা বিন্দু P হলে তার ত্রিমাত্রিক অবস্থান বা স্থানাংক হবে- P (x,y,z)
যে ভেক্টর দিয়ে মূল বিন্দুর সাপেক্ষে ত্রিমাত্রিক স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় যেকোন বিন্দুর অবস্থান বের করা হয় তাকে অবস্থান ভেক্টর বলে।
যদি মূল বিন্দু O এবং ত্রিমাত্রিক স্থানাংক ব্যবস্থায় যেকোনো বিন্দু P হয় তবে অবস্থান ভেক্টরটি হবে OP-
অবস্থান ভেক্টরের আরেক নাম ব্যাসার্ধ ভেক্টর। তাই ছবি থেকে আমরা লিখতে পারি- OP = r
শূন্য ভেক্টর (Null Vector)
যেসব ভেক্টরের মান এবং দিক কোনোটি নেই তাকে শূন্য ভেক্টর বলে। অথবা যেসব ভেক্টরের মান শূন্য তাকে শূন্য ভেক্টর বলে।
শূন্য ভেক্টর কে প্রকাশ করা হয় 0 দিয়ে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অভিক্ষেপ ও উপাংশের মধ্যে পার্থক্য
- কোয়ান্টাম তত্ত্ব কি
- দড়ি দিয়ে নৌকা টানা
- ভেক্টর অভিক্ষেপ
- ভেক্টর গুনন
- ভেক্টর বিভাজন
- ভেক্টর যোগ ও বিয়োগ
- ভেক্টর রাশির বিয়োগফল
- ভেক্টর লব্ধির সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মান
- ভেক্টর সামান্তরিক সূত্র
- ভেক্টরের বন্টন সূত্র
- ভেক্টরের বিনিময় সূত্র
- ভেক্টরের সংযোগ সূত্র
- লব্ধি ভেক্টর কাকে বলে
- স্কেলার ও ভেক্টর রাশি