ত্রিমাত্রিক / স্টেরিও সমাণুতা

আমরা যখন খাতায় কোনো ছবি আঁকি তবে সেটা হয় দ্বিমাত্রিক, কিন্তু বাস্তবে আমরা যেসব জিনিস দেখি, যাদের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা আছে তারা ত্রিমাত্রিক বস্তু।

যখন দুটো বা তার বেশি জৈব যৌগের মাঝে আণবিক সংকেত, গাঠনিক সংকেত একই থাকে কিন্তু ত্রিমাত্রিক অবস্থান ভিন্ন হয় তবে এই ঘটনাকে ত্রিমাত্রিক বা স্টেরিও সমাণুতা বলে।

ত্রিমাত্রিক বা স্টেরিও সমাণুতা আবার ২ ভাগে বিভক্ত। এরা হচ্ছে-

a) জ্যামিতিক সমাণুতা (Geometric Isomerism)

b) আলোক সমাণুতা (Optical Isomerism)

এখানে আমরা শুধুমাত্র জ্যামিতিক সমাণুতা নিয়ে আলোচনা করবো।

 

জ্যামিতিক সমাণুতা (Geometric Isomerism)

যেসব জৈব যৌগের বন্ধনের মুক্ত আবর্তন (Free Rotation) থাকে না তারা জ্যামিতিক সমাণুতা প্রদর্শন করে। বন্ধনের মুক্ত আবর্তন বলতে বোঝায় দুটো কার্বন পাশাপাশি থেকে যে বন্ধন তৈরি করে, তাদেরকে একজনের সাপেক্ষে আরেকজনকে ঘোরানোটা।

যেমন একটা জৈব যৌগের গাঠনিক সংকেত দেখি, এখানে দুটো কার্বন পাশাপাশি একটা বন্ধন দিয়ে যুক্ত, সেইসাথে কার্বন দুটোর সাথে আলাদাভাবে Cl, H, CH3 গ্রুপ যুক্ত-

a যৌগতে ৩ নাম্বার কার্বনের সাথে থাকা গ্রুপ গুলো যেভাবে আছে, b যৌগতে কিন্তু সেভাবে নেই, ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে সবগুলো গ্রুপ উল্টে গেছে। আমরা ইচ্ছা করলে এভাবে একটা কার্বনের সাপেক্ষে আরেকটা কার্বনের গ্রুপ গুলোকে ঘুরিয়ে লিখতে পারি। এই ঘটনাটাই হচ্ছে বন্ধনের মুক্ত আবর্তন। তবে মনে রাখো, এটা কেবল মাত্র কার্বন-কার্বন একক বন্ধনের জন্য কাজ করে। এই ঘূর্ণনের সমস্যা হচ্ছে দুটো জৈব যৌগের গঠনের মাঝে পার্থক্য খুঁজে না পাওয়া, কেননা a ও b যৌগ দুটোর গাঠনিক সংকেত একই, শুধুমাত্র গ্রুপগুলোকে একটা এদিক সেদিক সরানো হয়েছে। এই ধরনের যৌগ কখনোই জ্যামিতিক সমাণুতা দেখায় না।

আবার আরেকটা জৈব যৌগের গাঠনিক সংকেত দেখি, এখানে দুটো কার্বন পাশাপাশি দ্বি-বন্ধন দিয়ে যুক্ত, সেইসাথে কার্বন দুটোর সাথে আলাদাভাবে H ও CH3 গ্রুপ যুক্ত-

a যৌগতে ২ নাম্বার কার্বন যেভাবে ছিলো, সেটা ১ নাম্বার কার্বনের সাপেক্ষে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে ঘুরতে পারেনি। তাই b যৌগতে দেখা যাচ্ছে, দ্বি-বন্ধন যুক্ত দুটো কার্বন একইসাথে একইদিকে ঘুরে গেছে। অর্থাৎ এখানে মুক্ত আবর্তন হচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে, কার্বন-কার্বন দ্বি-বন্ধনে একটা পাই বন্ধন থাকে, যেটি পাশাপাশি দুটো কার্বন অরবিটালকে উপর থেকে নিচ বরাবর আটকে রাখে। তাই এই ধরনের যৌগে জ্যামিতিক সমাণুতা ঘটে।

ওদিকে কিছু চাক্রিক যৌগ আছে, যারাও মুক্ত আবর্তন করতে পারে না। যেমন একটা চাক্রিক জৈব যৌগের দুই ধরনের অবস্থান দেখো-

এখানে কার্বন-কার্বন বন্ধনের মাঝে ৩য় একটা গ্রুপ CH2 এসে বসেছে। তাই a যৌগে থাকা ২য় কার্বন যখন পুরোপুরি উল্টে ফেলা হয়, তখন ১ম কার্বনটাও অটোমেটিক উল্টে যাবে b যৌগের মতন। ফলে এদের কোনো মুক্ত আবর্তন হবে না। তাই এক্ষেত্রেও জ্যামিতিক সমাণুতা হবে।

জ্যামিতিক সমাণুতা হবার জন্য আরো একটা শর্ত হচ্ছে- যে দুটো কার্বনের মাঝে মুক্ত আবর্তন ছাড়া বন্ধন হবে (বা দ্বি-বন্ধন থাকবে) তাদের প্রত্যেকের সাথে একই রকম / একই জাতীয় মৌল বা মূলক যুক্ত থাকতে হবে। যেমন আরো কিছু জৈব যৌগ দেখি যারা মুক্ত আবর্তন করতে পারে না-

এখানে a যৌগতে C = C এর দুপাশে একই রকম গ্রুপ C2H5 আছে, তাই এতে জ্যামিতিক সমাণুতা সম্ভব। b যৌগতে C = C এর দুপাশে হ্যালোজেন Cl এবং F আছে যারা একই গোত্রের। তাই এদের মাঝেও জ্যামিতিক সমাণুতা সম্ভব। কিন্তু c যৌগতে C = C এর দুপাশে চারটি গ্রুপই ভিন্ন, কারো সাথে কারো কোনো সম্পর্ক নেই। তাই c যৌগটির কোনো জ্যামিতিক সমাণুতা হবে না।

জ্যামিতিক সমাণুতার আরো একটা শর্ত হচ্ছে, কার্বন-কার্বন দ্বি-বন্ধনের যেকোনো একপাশে একই ধরনের গ্রুপ থাকা যাবে না। থাকলে সেটার জ্যামিতিক সমাণুতা হবে না। যেমন তিনটি যৌগ a, b, c কে দেখো, এদের কারোই জ্যামিতিক সমাণুতা হবে না-

 

জ্যামিতিক সমাণুতার প্রকারভেদ

দুই ধরনের জ্যামিতিক সমাণুতা দেখা যায়। এরা হচ্ছে-

1) সিস সমাণুতা (Cis Isomerism) : যখন একই গ্রুপ বা একই ধরনের গ্রুপ গুলো দ্বি-বন্ধন দ্বারা যুক্ত দুটো কার্বনের দুপাশে একই পজিশনে বসে তখন সেই জ্যামিতিক সমাণুতাকে সিস সমাণুতা বলে।

2) ট্রান্স সমাণুতা (Trans Isomerism) : যখন একই গ্রুপ বা একই ধরনের গ্রুপ গুলো দ্বি-বন্ধন দ্বারা যুক্ত দুটো কার্বনের দুপাশে ভিন্ন পজিশনে বসে তখন সেই জ্যামিতিক সমাণুতাকে সিস সমাণুতা বলে।যেমন, নিচের ছবিতে দেখো বিউটিন-2 যৌগটির ক্ষেত্রে যখন -CH3 এবং H এই দুটো গ্রুপ একই পাশে বসে তখন সেটাকে সিস সমাণুতা বলা হয় (a যৌগ), আর ভিন্ন পাশে বসলে ট্রান্স সমানুতা বলা হয় (b যৌগ)-

এই সমাণুতা জন্য যৌগটির ভিন্ন দুটো নাম তৈরি হয়, যেমন-

a যৌগটির নাম : সিস বিউটিন-2

b যৌগটির নাম : ট্রান্স বিউটিন-2

আবার, কিছু যৌগের ক্ষেত্রে দ্বি-বন্ধন দ্বারা যুক্ত দুটো কার্বনের দুপাশে একই পজিশনে একইরকম গ্রুপ বসে কিন্তু অন্য জায়গায় ভিন্ন গ্রুপ বসে। এক্ষেত্রেও সিস-ট্রান্স সমাণুতা সম্ভব। যেমন নিচের দুটো যৌগ a ও b কে দেখো, এদের C = C এর মাঝে শুধুমাত্র CH3 গ্রুপটা মিলেছে, অন্য গ্রুপ মিলেনি, তারপরেও এরা সিস-ট্রান্স সমাণুতা দেখাতে পারে-এবার ভিন্ন ধরনের যৌগের ক্ষেত্রে কিভাবে জ্যামিতিক সমাণুতা হয় সেটা দেখবো। যদি দ্বি-বন্ধন দ্বারা যুক্ত দুটো কার্বনের দুপাশে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ থাকে, তবে আমরা দ্বি-বন্ধন এর দুপাশে থাকা গ্রুপ গুলোর আণবিক ভর বের করে একই পাশে যারা আছে তাদেরকে ভর অনুসারে তুলনা করবো। বেশি ভর যুক্ত গ্রুপ গুলো যদি কার্বনের দুপাশে একই পজিশনে থাকে, তবে তারা সিস সমাণুতা দেখাবে। আর যদি বেশি ভর যুক্ত গ্রুপ গুলো যদি কার্বনের দুপাশে ভিন্ন পজিশনে থাকে, তবে তারা ট্রান্স সমাণুতা দেখাবে। যেমন নিচের ছবিতে a ও b দুটো যৌগকে দেখো- এখানে CH3 ও C2H5 এর মধ্যে C2H5 এর আণবিক ভর বেশি। আবার H ও Cl এর মধ্যে Cl এর আণবিক ভর বেশি। তাই বেশি আণবিক ভর যুক্ত গ্রুপগুলো একই পজিশনে থাকাতে a যৌগটি সিস সমাণু, ভিন্ন পজিশনে থাকাতে b যৌগটি ট্রান্স সমাণু।

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool

অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-

write@thecrushschool.com

Emtiaz Khan

A person who believes in simplicity. He encourages the people for smart education. He loves to write, design, teach & research about unknown information.