জৈব যৌগের গাঠনিক সমাণুতা

গাঠনিক কথাটার মানে হচ্ছে গঠনগত বিষয়। যখন দুটো বা তার বেশি জৈব যৌগের মাঝে আণবিক সংকেত একই থাকে কিন্তু গাঠনিক সংকেত ভিন্ন হয় তবে এই ঘটনাকে গাঠনিক সমাণুতা বলে।

গাঠনিক সমাণুতা আবার ৫ ভাগে বিভক্ত। এরা হচ্ছে-

 

1) শিকল সমাণুতা (Chain Isomerism)

যেসব জৈব যৌগদের আণবিক সংকেত একই কিন্তু তাদের মূল কার্বন শিকলে কার্বনের সংখ্যা ভিন্ন, তাদের এই ঘটনাকে শিকল সমাণুতা বলে। যেমন বিউটেন এর আণবিক সংকেত C4H10, এর দুটো শিকল সমাণুর গঠন হচ্ছে নিচের ছবিটির মত-

এখানে a নাম্বার যৌগে মূল কার্বন শিকলে কার্বনের সংখ্যা ৪টা, কিন্তু b যৌগে মূল কার্বন শিকলে কার্বনের সংখ্যা ৩টা। a যৌগের নাম n-বিউটেন কিন্তু b যৌগের নাম আইসো বিউটেন। তাই এরা একে অপরের শিকল সমাণু। এবার চলো আরো কিছু যৌগের শিকল সমাণুতা দেখে নেই-

এবার আমরা কার্যকরী মূলক সমাণুতা ও টোমারিজমকে পাশাপাশি রেখে এদেরকে জানার চেষ্টা করবো।

 

2) কার্যকরী মূলক সমাণুতা (Functional Group Isomerism)

এই সমাণুতার ক্ষেত্রে দুটো জৈব যৌগের আণবিক সংকেত একই থাকলেও কার্যকরী মূলক একই থাকবে না। যেমন- C2H6O আণবিক সংকেত যুক্ত একটা যৌগকে দেখি, যার দুটো গাঠনিক সংকেত হচ্ছে ঠিক এমন-

এখানে a যৌগতে কার্যকরী মূলকটি হচ্ছে -OH যেটা অ্যালকোহলের কার্যকরী মূলক, কিন্তু b যৌগতে কার্যকরী মূলকটি -O- যেটা ইথারের কার্যকরী মূলক। তাই এরা দুজন কার্যকরী মূলকের দিক দিয়ে ভিন্ন বলে এদের এই ঘটনাকে কার্যকরী মূলক সমাণুতা বলে। এবার চলো আরো কিছু যৌগের কার্যকরী মূলক সমাণুতা দেখে নেই-

 

3) টটোমারিজম (Tautomerism)

টটোমারিজম হচ্ছে প্রায় কার্যকরী মূলক সমাণুতার মতই। তবে এক্ষেত্রে এক্সট্রা জিনিস হচ্ছে, এই ধরনের সমাণুর মধ্যে একটা গতিশীল সাম্যাবস্থা থাকে। একটা উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটা বুঝি!

C3H6O আণবিক সংকেত যুক্ত একটা যৌগের দুটো সমাণু থাকে যাদেরকে টটোমারিজম বলা হয়। একটা সমাণুতে কিটোন গ্রুপ থাকে, আরেকটা যৌগতে ইনল গ্রুপ থাকে। ইনল (enol) মানে- অ্যালকিনের ইন (ene) + অ্যালকোহলের অল (ol) গ্রুপ নিয়ে গঠিত যৌগ। এদের গাঠনিক সমাণু দেখি-

যৌগ দুটোর গাঠনিক সংকেত দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা কার্যকরী মূলক সমাণুতা। কিন্তু, ১ম যৌগটিকে বা কিটোন যৌগটিকে যদি কোনো টেস্টটিউবে রাখা হয় তবে কিছুক্ষণ পর সেটা ২য় যৌগতে বা ইনল যৌগটিতে রূপান্তর হয়ে যাবে। আবার ২য় যৌগটিকে টেস্টটিউবে রাখলে সেটাও কিছুক্ষণ পর ১ম যৌগতে রূপান্তর হবে। এটি হচ্ছে একটা গতিশীল সাম্যবস্থা। তাই এদের মধ্যকার এই ঘটনাকে টটোমারিজম বলে। তবে এই সমাণু এক ধরনের কার্যকরী মূলক সমাণু।

এবার আমরা অবস্থান সমাণুতা ও মেটামারিজম পাশাপাশি রেখে এদেরকে জানার চেষ্টা করবো।

 

4) অবস্থান সমাণুতা (Position Isomerism)

এই ধরণের সমাণুতার ক্ষেত্রে জৈব যৌগের কার্যকরী মূলক একই হতে হবে, তবে সেই কার্যকরী মূলকের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বসবে। যেমন- C3H8O আণবিক সংকেত বিশিষ্ট একটা যৌগের দুটো অবস্থান সমাণু দেখি-

এখানে a যৌগতে -OH কার্যকরী মূলকের অবস্থান মাঝখানের কার্বনে কিন্তু b যৌগতে তার অবস্থান এক নাম্বার কার্বনের সাথে। তাই এরা একে অপরের অবস্থান সমাণু। এবার চলো আরো কিছু যৌগের অবস্থান সমাণুতা দেখে নেই-

 

5) মেটামারিজম (Metamerism)

এটিও এক ধরনের অবস্থান সমাণুতা, তবে এখানে এক্সট্রা জিনিস হচ্ছে, যেসব জৈব যৌগে কার্যকরী মূলকটা দ্বিযোজী হয়, তাদের সমাণুতাকে মেটামারিজম বলে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দ্বিযোজী কার্যকরী মূলক তাদের অবস্থান পরিবর্তন ঘটায়। যেমন- C4H10O আণবিক সংকেত যুক্ত একটা জৈব যৌগের দুটো মেটামারিজম পাওয়া যায়-

a যৌগে দ্বিযোজী কার্যকরী মূলক -O- এর অবস্থান ঠিক কার্বনদের মাঝে, কিন্তু b যৌগে তার অবস্থান প্রান্তের দিকে থাকা ১ নাম্বার কার্বনের সাথে। তাই এটি মেটামারিজম সমাণুতা। মনে রাখতে হবে-

-O-, C=O, -NH- এসব দ্বিযোজী কার্যকরী মূলক যদি কোনো যৌগে থাকে তবে তারা মেটামারিজম প্রদর্শন করবে।

 

গাঠনিক সমাণু লেখার নিয়ম

a) প্রথমে আমরা কার্বন ও হাইড্রোজেন সংখ্যা গুনে বের করবো তারা অ্যালকেন, অ্যালকিন নাকি অ্যালকাইনের ফর্মুলা অনুসরণ করছে। যদি যৌগতে অক্সিজেন যুক্ত থাকে তবে তার উপস্থিতিকে আমরা না ধরেই এই কাজটা করবো।

b) এবার অক্সিজেনকে কাজে লাগাতে হবে। যদি যৌগটির সংকেত অ্যালকেনের হয় এবং এর সাথে ১টা অক্সিজেন যুক্ত থাকে, তবে ধরে নিতে হবে যৌগটির সম্ভাব্য সমাণু হবে অ্যালকোহল ও ইথার। কেননা, অ্যালকেনে কোনো পাই বন্ধন নেই, আবার অ্যালকোহল, ইথার এদের মধ্যেও কোনো পাই বন্ধন নেই।

কিন্তু যদি যৌগটির সংকেত অ্যালকিন বা অ্যালকাইনের হয় এবং এর সাথে ১টা অক্সিজেন যুক্ত থাকে, তবে ধরে নিতে হবে যৌগটির সম্ভাব্য সমাণু হবে অ্যালডিহাইড, কিটোন এবং ইনল। কেননা অ্যালকিন বা অ্যালকাইনের পাই বন্ধন আছে, আবার অ্যালডিহাইড, কিটোন এবং ইনলের মধ্যেও পাই বন্ধন আছে।

এবার একটা জৈব যৌগের আণবিক সংকেত দেখি-

C5H12O

যেখানে C5H12 হচ্ছে এক ধরনের অ্যালকেনের সংকেত এবং এর সাথে একটা O যুক্ত আছে। তাই এই যৌগটির সমাণু হবে অ্যালকোহল এবং ইথার। এদের গাঠনিক সমাণু দেখে ফেলি, যেখানে a যৌগটি হচ্ছে ইথার এবং b যৌগটি হচ্ছে অ্যালকোহল-

আরেকটা জৈব যৌগের আণবিক সংকেত দেখি-

C4H8O

যেখানে C4H8 হচ্ছে এক ধরনের অ্যালকিনের সংকেত এবং এর সাথে একটা O যুক্ত আছে। তাই এই যৌগটির সমাণু হবে অ্যালডিহাইড, কিটোন এবং ইনল যৌগ। এদের গাঠনিক সমাণু দেখে ফেলি, যেখানে a যৌগটি কিটোন, b যৌগটি অ্যালডিহাইড এবং c যৌগটি ইনল যৌগ-

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool

অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-

write@thecrushschool.com

Emtiaz Khan

A person who believes in simplicity. He encourages the people for smart education. He loves to write, design, teach & research about unknown information.