প্রাচীনকালের মানুষেরা আকাশকে অনেক সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করতো এবং তারা জানতো যে আকাশে একটা-দুইটা না, অসংখ্যক তারকা রয়েছে। কিন্তু তারা খালি চোখে কেবল কয়েকটা star দেখতে পেতো। Telescope আবিষ্কার হবার আগে প্রায় ১৬০৮ সাল পর্যন্ত মানুষ আকাশের অনেক কিছুই দেখতে পেতো না। কাজেই Telescope হচ্ছে এমন এক ধরনের যন্ত্র যার মাধ্যমে অনেক দূরের বস্তু বড় দেখায়।
Telescope এর বাংলা দূরবীক্ষণ যন্ত্র, এটি বলতে বোঝায় উত্তল-অবতল কাঁচের সম্মিলনে তৈরি করা একটা ফাঁপা চোঙ, যার মধ্যে এই দুপ্রকার কাচের কারণে দূরের জিনিস খুব কাছে দেখা যায়।
Telescope এমন এক ধরনের instrument যেটা আলোকে collect এবং focus করতে পারে এবং অন্য যেকোনো ধরনের electromagnetic radiation কে সংগ্রহ করতে পারে। এর মধ্যে lens কিংবা mirror ব্যবহার করা হয় যাতে অনেক দূরের আলোকে সহজেই telescope সংগ্রহ করতে পারে। Telescope এর আবিষ্কার হওয়াতে Astronomy তে একটা বিপ্লব আসে। কেননা বিজ্ঞানীরা তখন মহাকাশের অনেক বস্তুই চোখের পলকেই স্পষ্ট দেখা শুরু করেন। এপর্যন্ত (২০১২) পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীর সর্বপ্রথম টেলিস্কোপটি তৈরি হয়েছিল নেদারল্যান্ড্সে, ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে। গ্যালিলিও, বরং টেলিস্কোপ কিভাবে বানাতে হয় সেটা জেনে নিয়ে নিজে একটা টেলিস্কোপ বানিয়ে নিয়েছিলেন। ছোট, বাঁশির মত দেখতে একটা চোঙার ভিতরে উত্তল আর অবতল কাচ বসিয়ে বানানো নিজের ঐ টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি সেই ১৬০০ সালের দিকে দেখেছিলেন চাঁদের পাহাড় ও মালভূমিগুলো, বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ এবং ছায়াপথের তারাগুলোকে (ছায়াপথের হাল্কা মেঘকে তিনি তারা সমষ্টি বলে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন)।
গ্যালিলিও থাকাকালীন সময়েই astronomer রা শক্তিশালী এবং বিশাল telescope বানানো শুরু করে। সেসব telescope দিয়ে মহাকাশের অনেক আশ্চর্য জনক বস্তু দেখা যেতো যেগুলো দেখে গ্যালিলিও নিজেও অনেক অবাক হতেন।
আমরা জানি, কোনো বস্তুর আলো এসে যদি আমাদের চোখে পড়ে, তাহলে আমরা সেটা দেখি- এই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে যে বস্তুটা আমরা দেখতে চাচ্ছি, তার আলোটাকে উত্তল আর অবতল লেন্সের ভিতর দিয়ে পার করে যদি আমাদের চোখে ফেলা যায়, তাহলে বস্তুটাকে তার দূরত্বের চেয়ে অনেক কাছে দেখা যায়। এই সূত্র কাজ করে যেসব টেলিস্কোপে, সেগুলোকে প্রতিসরণ টেলিস্কোপ (Refracting Telescope) বলে। কেননা এগুলোতে আলোর প্রতিসরণের সূত্র কাজ করে। দূরবীণও এই একই প্রক্রিয়ায় কাজ করে। তবে দূরবীণের উত্তল-অবতল কাচের চেয়েও বেশি দামি উত্তল-অবতল কাচ দিয়ে টেলিস্কোপ তৈরি হয় বলে এর দাম যেমন বেশি, ক্ষমতাও তেমনি বেশি।
যেহেতু টেলিস্কোপের ক্ষমতা খুব বেশি থাকে, তাই তা দিয়ে অনেক অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, টেলিস্কোপ সামান্য নড়লে সেটার দৃষ্টি সরে যায় বহুদূর। তাই একটা টেলিস্কোপ যন্ত্রকে ট্রাইপড বা স্ট্যান্ডের উপর নাট-বল্টু দিয়ে খুব দৃঢ়ভাবে আটকানো হয়। পাশাপাশি ঐ স্ট্যান্ডের উপর টেলিস্কোপকে ঘোরাবার জন্য ব্যবহৃত হয় খুব নিখুঁত গিয়ার চাকা। সেই চাকাকে মিলিমিটার মিলিমিটার করে ঘোরাতে হয়। কেননা টেলিস্কোপ যদি একটু ঘোরে তবে সেটা কয়েক কিলোমিটার দুরত্ব অতিক্রম করে ফেলবে!
এই ছবি দেখলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ধরা যাক, তুমি O থেকে চোখ রেখেছ A এর দিকে এবং A এর অবস্থান তোমার চোখ থেকে বেশ কাছে। হঠাৎ তোমার টেলিস্কোপ নড়ে উঠলো, তাই তোমার দৃষ্টি চলে গেল B এর দিকে। A থেকে B-এর দূরত্ব খুব বেশি না। কিন্তু ধরা যাক, তুমি চোখ রেখেছ X এর দিকে, X এর অবস্থান তোমার চোখ থেকে বহুদূরে। আর ঠিক সেই মূহুর্তে আগের মত একই পরিমাণ সরে গেল তোমার টেলিস্কোপ। তোমার দৃষ্টি চলে গেলো Y এর দিকে। খেয়াল করে দেখো, কত দূরে চলে গেছে এখন তোমার দৃষ্টি, অর্থাৎ X থেকে Y-এর দূরত্ব অনেক বেশি। তাই বহুদূরের বস্তু দেখার সময় যদি টেলিস্কোপ একটু এদিক সেদিক সরে যায় তবে বস্তুটি থেকে দৃষ্টি কয়েক মাইল সরে যাবে।
একটা পরিষ্কার আকাশে মানুষ খালি চোখে সর্বোচ্চ ১০০০ টার মত তারা দেখতে পায়। কিন্তু একটা telescope এর মাধ্যমে সেই আকাশে ১০ লাখেরও বেশি তারা দেখা যায়। এর কারন হচ্ছে আকাশের তারকাগুলো বহুদূর থাকে এবং তাদের থেকে কম পরিমান আলো পৃথিবীতে আসে। আমাদের চোখের সাইজ ছোট বলে এই কম পরিমান আলো আমরা নিতে পারি না। তাই আকাশে খালি চোখে কম তারকা দেখি। কিন্তু টেলিস্কোপ বেশি পরিমাণ আলোকে collect করতে পারে বলে সেটা দিয়ে আমরা বহুদূরের তারাদের স্পষ্টভাবে দেখতে পাই।
শেষ শতাব্দি থেকে Astronomer রা অনেক বড় বড় টেলিস্কোপ আবিষ্কার করা শুরু করেন যেগুলো অনেক বেশি পরিমাণ দৃশ্যমান আলোকে এবং অন্যান্য radiation কে সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে Astronomer রা telescope এর মধ্যে যেসব tools গুলো ব্যবহার করেন সেগুলো একশ বছর আগেও ব্যবহার করা হতো না। তেমনি একটা telescope এর উদাহরণ হচ্ছে জমজ কেক টেলিস্কোপ।
হাওয়াই-এর মো’না কী নামক মৃত আগ্নেয়গিরির চূড়ায় স্থাপন করা হয় পৃথিবীর বিখ্যাত ‘কেক টেলিস্কোপ’ (Keck Telescope)। আসলে এরা টুইন বা জমজ। এদের একেকটার আয়না তৈরি হয়েছে ৩৩ ফুট চওড়া করে মোট ৩৬ টুকরা আয়না জোড়া লাগিয়ে। এরা দুজনে একসাথে বিশাল টেলিস্কোপের কাজ করে।
কিন্তু এই telescope এর চেয়েও বিশাল টেলিস্কোপ আছে চিলিতে, যাকে বলা হয় Very Large Telescope, সংক্ষেপে VLT. চারটে বিশাল আর তিনটা ছোট আকৃতির টেলিস্কোপের সমন্বয়ে এটি গঠিত।
ক্রাশ স্কুলের Youtube চ্যানেলের জয়েন করুন-
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে? (How Optical Fiber Works?)
- কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ ও ভীনের সূত্র (Black Body Radiation & Wien’s Law)
- ঘটনা দিগন্ত ও হকিং রেডিয়েশন
- টেলিস্কোপ কিভাবে কাজ করে? (How Telescope Works?)
- টেলিস্কোপের প্রকারভেদ (Types of Telescope)
- ডিএনএ থেকে ক্রোমোজোম (From DNA to Chromosome)
- নক্ষত্রপুঞ্জ (Constellation)
- নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা (The Brightness of Star)
- নক্ষত্রের উপাদান শনাক্তকরণ (Identification of Star Elements)
- নক্ষত্রের শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি (The Basis of the Class of Stars)
- পৃথিবী ও সূর্যের মডেল (The model of Earth & Sun)
- প্রকট এবং প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য (Recessive & Dominant Traits)
- মহাজাগতিক বস্তু : ধূমকেতু ও উল্কা
- মহাজাগতিক বস্তু : নীহারিকা
- হাবল টেলিস্কোপ (Hubble Telescope)