পদার্থবিজ্ঞান বিজ্ঞানের একটি প্রাচীনতম ও মৌলিক শাখা। পদার্থবিজ্ঞান কি? বলা যেতে পারে যে পদার্থবিজ্ঞান জিনিসটা পদার্থ আর শক্তি এবং এ দুইয়ের মাঝে অন্তঃক্রিয়া (interaction) নিয়ে আলোচনা করে। পদার্থবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে বিজ্ঞানের নানা শাখা। রসায়ন, জীববিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আবহাওয়া বিজ্ঞান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে রয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাপক অবদান।
এই পদার্থবিজ্ঞানকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:
১. ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান : এর মাঝে রয়েছে বলবিজ্ঞান, শব্দবিজ্ঞান, তাপ ও তাপগতি বিজ্ঞান, বিদ্যুৎ ও চৌম্বকবিজ্ঞান এবং আলোকবিজ্ঞান।
২. আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান : কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান এবং আপেক্ষিক তত্ত্ব ব্যবহার করে যে পদার্থবিজ্ঞান গড়ে উঠেছে তাকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান বলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে- নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞান, কঠিন অবস্থার পদার্থবিজ্ঞান এবং পার্টিকেল ফিজিক্স (কণা পদার্থবিজ্ঞান)।
এই বিজ্ঞান কোনো বিজ্ঞানীর একক কৃতিত্ব নয়, বরং বিভিন্ন যুগে নানা জাতির বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। এখন আমরা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গদের অবদানগুলো জানবো-
গ্রিকদের অবদান
- থেলিস (খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬-৬২৪) :সূর্যগ্রহণের ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন এবং লোডস্টোনের চৌম্বকধর্ম সম্পর্কে জানতেন।
- পীথাগোরাস (খ্রিস্টপূর্ব ৫২৭) : জ্যামিতি ও কম্পমান তারের উপর অবদান রাখেন।
- ডেমোক্রিটাস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০) : তার মতে সকল পদার্থ অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত, যার নাম তিনি দেন এটম (Atom)। এখান থেকে এটম বা পরমাণু শব্দের যাত্রা শুরু। গ্রিক a= not, tom= divisible. তাই Atom শব্দের অর্থ অবিভাজ্য।
- আর্কিমিডিস (খ্রিস্টপূর্ব ২৮৭) : তরল পদার্থে উর্ধমুখী ক্রিয়ার ক্ষেত্রে তার আবিষ্কৃত সূত্রটি আজও ব্যাপক ব্যবহৃত ও প্রসিদ্ধ। এছাড়াও তিনি গোলীয় আয়নায় সূর্যরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করে দূর থেকে যুদ্ধজাহাজে আগুন ধরিয়ে দিতে পারতেন। এছাড়াও গ্রিকদের মধ্যে আরো অনেক বিজ্ঞানী রয়েছেন যাদের মতবাদ পরবর্তীতে ভুল প্রমাণিত হওয়ায় বা সময়ের ব্যবধানে তাদের মূল্যবান আবিষ্কার হারিয়ে যাওয়ায় বিখ্যাত হতে পারেননি।
মধ্যযুগীয় বিজ্ঞানীদের অবদান
- ভারতবর্ষে আর্যভট্ট (৪৭৬), ব্রহ্মগুপ্ত এবং ভাস্কর গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার অনেক মূল্যবান কাজ করেছেন। শূন্যকে সত্যিকার অর্থে ব্যবহার করার বিষয়টিও ভারতবর্ষে (আর্যভট্ট) করা হয়েছিল।
- মুসলিম গণিতবিদ এবং বিজ্ঞানীদের ভেতর আল খোয়ারিজমির (৭৮৩) নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয়। তার লেখা আল জাবির বইটি থেকে বর্তমান এলজেবরা নামটি এসেছে।
- ইবনে আল হাইয়াম (৭৬৫) কে আলোকবিজ্ঞানের স্থপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- আল মাসুদি (৮৯৬) প্রকৃতির ইতিহাস নিয়ে ৩০ খন্ডে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া লিখেছিলেন।
- ওমর খৈয়ামের নাম সবাই কবি হিসেবে জানে, কিন্তু তিনি ছিলেন উঁচুমাপের গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ এবং দার্শনিক।
- চীনা গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীরাও পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে শেন কুয়োর নামটি উল্লেখ করা যায় (১০৩১), যিনি চুম্বক নিয়ে কাজ করেছেন এবং ভ্রমণের সময় কম্পাস ব্যবহার করে দিক নির্ধারণ করার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অতিথি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com

Abdul Mukit Nipun
ex Notre Damian, BUET ME’18. Like to keep connected with the rest of world and believe in humanity.
Related posts:
- অর্থনীতি কি? (What is Economics?)
- আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা
- আধুনিক যুগে ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশ (The development of Physics in the Modern Era)
- জীববিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব কী?
- জীববিজ্ঞানের ধারণা ও শাখা (Concept of Biology & its Branches)
- জীববিজ্ঞানের ফলিত শাখাগুলোর নাম কি কি?
- জীববিজ্ঞানের বিকাশ
- প্রাচীন জ্যোতির্বিদ – Ancient Astronomer
- বিজ্ঞানীদের কাজের ধারা ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি (The Work style and Scientific method of the Scientist)
- ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশ (Development of Physical Science)
- ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশে মুসলিমদের অবদান (The Contribution of Muslims in the Development of Physics)
- সভ্যতার বিবর্তনে পদার্থবিজ্ঞানের অবদান (The contribution of Physics to the Evolution of Civilization)
- সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ধাপ (Different stages of Society & Civilization)
- সমাজবিজ্ঞান ও সমাজ (Sociology & Society)
- সংস্কৃতি ও সভ্যতা (Culture and Civilization)