প্রাণিবিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। মানবজাতির কল্যাণেই শুধু নয়, পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেও প্রাণিবিজ্ঞানের প্রয়োগ, ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আজ বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জীবনধারণের জন্য আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই প্রাণিবিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। নিচে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রাণিবিজ্ঞানের গুরুত্ব ও প্রয়োগ আলোচিত হলো।
প্রাকৃতিক নিয়ম সম্বন্ধে জানা : প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক নিয়ম-কানুন সম্মন্ধে জ্ঞান লাভ করা প্রাণিবিজ্ঞান পাঠের অন্যতম কারণ। এ জ্ঞানের আলোকে আমরা জীবিত বস্তুর গুণাগুণ ও কর্মকান্ড সম্পর্কে ধারণা লাভ করি।
প্রাণিজগত ও নিজের সম্পর্কে জানা : প্রাণিবিজ্ঞানের জ্ঞান না থাকলে সমগ্র প্রাণিজগত সম্বন্ধে কোনো পরিষ্কার ধারণা জন্মায় না। সুতরাং এ জ্ঞানের অভাবে পৃথিবীর বস্তু জগতের এক বিরাট অংশ অজানা থেকে যায়। অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষ নিজেও প্রাণিবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। প্রাণিজগতে আমাদের স্থান, অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় জানতে হলে প্রাণিবিজ্ঞানের সাহায্য অপরিহার্য।
প্রাণী সনাক্তকরণ : পৃথিবীতে কতো প্রজাতির প্রাণী আছে তা বলা কঠিন। এ পর্যন্ত প্রায় পনের লক্ষ জীবিত প্রজাতির নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং প্রতিদিনই নতুন প্রজাতি আবিষ্কারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রাণী সনাক্তকরণ করতে প্রাণিবিজ্ঞান প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।
রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে : বিভিন্ন পরজীবী প্রাণী মানুষসহ অন্যান্য পশুপাখির জটিল রোগের সৃষ্টি করে। এসব পরজীবীর জীবনবৃত্তান্ত, সংক্রমণ-পদ্ধতি ইত্যাদি সম্মন্ধে ধারণা থাকায় এদের দমন ও আক্রমণ প্রতিরোধ করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়েছে।
খাদ্যোৎপাদন : প্রাণিজ খাদ্য সম্পদ উৎপাদনে প্রাণিবিজ্ঞানের অবদান অতুলনীয়। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে উন্নত মানের পশু-পাখি উৎপাদন করে মানুষ তার চাহিদা অনুযায়ী দুধ, মাংস, ডিম ইত্যাদির উৎপাদন হার বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাছ চাষ করে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা পূরণ করছে।
পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে ধারণা : প্রাণিবিজ্ঞানের Ecology শাখাতে বায়ু, পানি, মাটি ও শব্দ দূষণের কারণ এবং এদের প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
শিল্প ক্ষেত্রে : ফলিত প্রাণিবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন- মৎস্য চাষ, ডেয়ারী, পোল্ট্রি ফার্ম, রেশম চাষ, মুক্তা চাষ, লাক্ষা চাষ, মৌমাছি প্রতিপালন ইত্যাদি ক্ষেত্রের আহরিত জ্ঞান ও গবেষণার ফলাফল সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে শিল্প ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।
বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণে : বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদ মানব সভ্যতার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। বন্যপ্রাণী কেবল বনের শোভাই বাড়ায় না, এদের অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। অনেক বন্যপ্রাণীর হাড়, চামড়া, লোম, পালক, দাঁত প্রভৃতির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মাধ্যমে বনজসম্পদও সংরক্ষিত হয় এবং জাতীয় আয় ও সুনাম বৃদ্ধির উপায় হিসেবে কাজ করে। এভাবে গড়ে উঠে ট্যুরিজম (tourism) ও ইকোট্যুরিজম (ecotourism) বা গ্রীন ট্যুরিজম (green tourism)। এছাড়া প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে এদের যে মূল্যবান ভূমিকা আছে তা বাস্তুতান্ত্রিক মূল্য (ecological value) হিসেবে চিহ্নিত।
ভূতাত্ত্বিক রহস্যভেদে : বিভিন্ন বনে বন্যপ্রাণিদের উপস্থিতি দেখে যেমন বনের স্বরূপ চিনতে পারা যায়, তেমনি বন দেখে মাটির প্রকৃতিকে জানা যায়। অর্থাৎ বনের প্রাণীরা পরোক্ষভাবে মাটিকে চিনিয়ে দেয়। এভাবে বনের প্রাণীরা ভূতাত্ত্বিক রহস্যভেদের সূত্র ধরিয়ে মাটির নীচ থেকে বিভিন্ন ধাতু ও খনিজ আহরণের সম্ভাবনাময় ইঙ্গিত প্রদর্শন করে। প্রাণিবিজ্ঞানের সহায়তায় ভূতত্ত্ববীদরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খনিজ সম্পদ আহরণ করছে। শুধু তাই নয়, তৃস্তরের বিভিন্ন অংশে প্রাণিজীবাশ্মের উপস্থিতি দেখে ওখানকার মাটির বয়সও নির্ধারিত হচ্ছে।
মানব কল্যাণের উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে : মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণ সাধনে প্রাণিবিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সঙ্গে প্রাণিবিজ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে অধুনা ভ্যাকসিন, হরমোন, অ্যান্টিবায়োটিক থেকে শুরু করে ‘টেস্ট টিউব বেবী’, জিন থেরাপি, নিউক্লিয়াস স্থানান্তর পদ্ধতিতে প্রাণী-ক্লোনিং এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের বিবিধ পথনির্দেশ দিয়ে মানুষের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত করা হয়েছে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
Related posts:
- এইডস কি
- জৈব রসায়নের ইতিহাস
- তড়িতের উৎপত্তি
- তড়িৎ বলরেখা
- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণিবিজ্ঞানের গুরুত্ব
- প্রাণিবিজ্ঞান পরিচিতি
- প্রাণিবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা
- বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ
- বিবর্তন কাকে বলে
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া
- ভাইরাসের গঠন
- ভাইরাসের প্রকারভেদ
- মৌলিক বল কাকে বলে
- সমুদ্রস্রোতের প্রভাব ও গুরুত্ব
- সংস্কৃতি ও সভ্যতা (Culture and Civilization)