শ্বসন প্রধানত দুই প্রকার-
- বহিঃশ্বসন
- অন্তঃশ্বসন
বহিঃশ্বসন
যে প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন দেহের ভেতরে ঢোকে এবং কার্বন-ডাইঅক্সাইড বাইরে বের হয় সেই প্রক্রিয়াকে বহিঃশ্বসন বলে। এর আবার দুটো ভাগ আছে-
1) প্রশ্বাস : এই প্রক্রিয়াতে অক্সিজেন ভেতরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমরা বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি। বাতাস গ্রহণের ফলে আমাদের ফুসফুসের নিচে থাকা মধ্যচ্ছদা বা ডায়াফ্রাম কিছুটা নিচে নেমে যায়। নিচের ছবিতে দেখো-
2) নিঃশ্বাস : এই প্রক্রিয়াতে কার্বন-ডাইঅক্সাইড বাইরে বের হয়। অর্থাৎ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আমরা শরীরের ভেতর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাইরে বের করি। বাতাস ত্যাগের ফলে আমাদের ফুসফুসের নিচে থাকা মধ্যচ্ছদা বা ডায়াফ্রাম (এক ধরনের পর্দা যেটা আমাদের বুকের হাড় গুলো থেকে পেট বা উদরকে পৃথক করে রাখে) কিছুটা উপরে উঠে যায়। নিচের ছবিতে দেখো-
অন্তঃশ্বসন
যে প্রক্রিয়ায় আমাদের শরীরে থাকা গ্লুকোজ পদার্থটি বাইরের পরিবেশ থেকে আসা অক্সিজেনের সাহায্য জারিত হয়ে শক্তি তৈরি করে তাকে অন্তঃশ্বসন বলে। তাই অন্তঃশ্বসনের বিক্রিয়াটি হচ্ছে-
C6H12O6 + 6O2 = 6CO2 + 6H2O + 38 অণু ATP
প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস কার্যক্রম
প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস কার্যক্রম নিয়ে জানার আগে একটা ছোট্ট জিনিস নিয়ে জানতে হবে আমাদের। সেটা হলো, আমাদের বুকের হাড় বা পর্শুকা (Ribs) এর মাঝে এক ধরনের পেশী লেগে থাকে যেগুলো আমাদের শ্বসনে সাহায্য করে। এদেরকে ইন্টারকোস্টাল পেশী বলে।
প্রশ্বাস কার্যক্রম : প্রশ্বাস কার্যক্রমের জন্য আমাদের ব্রেনের মধ্যে একটা কেন্দ্র থাকে যাকে প্রশ্বাস কেন্দ্র বলে। এটি দুটো স্নায়ু বা পথের সাহায্যে ব্রেন থেকে উদ্দীপনা (বা সিগন্যাল) পাঠায় প্রশ্বাস কার্যক্রম ঠিকমত করার জন্য। এই দুটো স্নায়ু হচ্ছে- ইন্টারকোস্টাল স্নায়ু এবং ফ্রেনিক স্নায়ু।
ইন্টারকোস্টাল স্নায়ুটি সংযুক্ত থাকে ইন্টারকোস্টাল পেশীর সাথে। এই স্নায়ু দিয়ে যখন ব্রেন থেকে সিগন্যাল আসে, তখন ইন্টারকোস্টাল পেশী সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে বুকে থাকা হাড় বা পর্শুকা তখন উপরের দিকে উঠে যায়। এই ঘটনার ফলে বুকের সামনে থাকা পর্শুকা এবং পেছনের দিকে বেঁকে যাওয়া পর্শুকার মধ্যবর্তী জায়গায় পরিমাণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ আমাদের বুকের খাঁচা বা হাড় গুলোর মাঝে বেশি পরিমাণ জায়গা তৈরি হয়।
ফ্রেনিক স্নায়ুটি সংযুক্ত থাকে মধ্যচ্ছদার সাথে। এই স্নায়ু দিয়ে যখন ব্রেন থেকে সিগন্যাল আসে, তখন মধ্যচ্ছদা পেশী সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে বুক ও উদরের মাঝে থাকা মধ্যচ্ছদা তখন নিচের দিকে নেমে যায়। এই ঘটনার ফলে বুকের লম্বভাবে থাকা জায়গার পরিমাণ বেড়ে যায়। একটা ছকের মাধ্যমে ব্যাপারটা দেখো-
তাহলে, এই দুটি স্নায়ু দিয়ে আসা উদ্দীপনার ফলে আমাদের বুকের ভেতরের জায়গা বা ব্যাস বা আয়তন অনেকখানি বেড়ে যায়। এখন আমাদের জানা আছে, কোনো কিছুর চাপ কমে গেলে তার আয়তন বেড়ে যায়, তাই বুকের ভেতরের জায়গার আয়তন বেড়ে গিয়েছে বলে ফুসফুসের পর্দা প্লুরার উপর চাপটাও কমে যায়। আবার প্লুরার উপর চাপ কমে যায় বলে ফুসফুসের উপরেও চাপ কমে যায়। ফুসফুসের চাপ কমে গেলে ওদিকে ফুসফুসের আয়তনও বেড়ে যায়। সবশেষে বেশি আয়তন যুক্ত জায়গা পেয়ে বাইরের থেকে অক্সিজেন ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে। এভাবে আমাদের প্রশ্বাস কার্যক্রম গঠিত হবে।
নিঃশ্বাস কার্যক্রম : নিঃশ্বাসের কার্যক্রমটি প্রশ্বাস কার্যক্রমের ঠিক উল্টো ঘটনা। এক্ষেত্রে ব্রেনে থাকা প্রশ্বাস কেন্দ্র আর উদ্দীপনা দিবে না। ইন্টারকোস্টাল স্নায়ু দিয়ে যখন ব্রেন থেকে সিগন্যাল আসবে না, তখন ইন্টারকোস্টাল পেশী প্রসারিত হয়ে যাবে। ফলে বুকে থাকা হাড় বা পর্শুকা তখন নিচের দিকে নেমে যাবে। এই ঘটনার ফলে বুকের সামনে থাকা পর্শুকা এবং পেছনের দিকে বেঁকে যাওয়া পর্শুকার মধ্যবর্তী জায়গায় পরিমাণ কমে যাবে। অর্থাৎ আমাদের বুকের খাঁচা বা হাড় গুলোর মাঝে কম পরিমাণ জায়গা তৈরি হবে।
ওদিকে ফ্রেনিক স্নায়ু দিয়ে যখন ব্রেন থেকে সিগন্যাল আসবে না, তখন মধ্যচ্ছদা পেশী প্রসারিত হয়ে যাবে। ফলে বুক ও উদরের মাঝে থাকা মধ্যচ্ছদা তখন উপরের দিকে উঠে যাবে। এই ঘটনার ফলে বুকের লম্বভাবে থাকা জায়গার পরিমাণ কমে যাবে। একটা ছকের মাধ্যমে ব্যাপারটা দেখো-
তাহলে, এই দুটি স্নায়ু দিয়ে উদ্দীপনা না আসার ফলে আমাদের বুকের ভেতরের জায়গা বা ব্যাস বা আয়তন অনেকখানি কমে যাবে আগের চেয়ে। তাই বুকের ভেতরের জায়গার আয়তন কমে যাবে বলে ফুসফুসের পর্দা প্লুরার উপর চাপটা বেড়ে যাবে। আবার প্লুরার উপর চাপ বেড়ে যাবে বলে ফুসফুসের উপরেও চাপ বেড়ে যাবে। ফুসফুসের চাপ বেড়ে গেলে ওদিকে ফুসফুসের আয়তনও কমে যাবে। সবশেষে কম আয়তন যুক্ত জায়গার জন্য ভেতর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাইরে বের হতে পারবে। এভাবে আমাদের নিঃশ্বাস কার্যক্রম গঠিত হবে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- গে-লুস্যাকের গ্যাস আয়তন সূত্র (Gay-Lussac’s Law of Gaseous Volumes)
- গে-লুস্যাকের গ্যাসের চাপের সূত্র (Gay-Lussac’s Law of Pressure of Gases)
- গ্যাসের ক্রান্তি অবস্থা (Critical States of Gases)
- চার্লসের সূত্র (Charles’ Law)
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্র (Dalton’s Law of Partial Pressure)
- প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণ (Respiratory Control)
- বয়েলের সূত্র (Boyle’s Law)
- বয়েলের সূত্র ও চার্লসের সূত্রের সমন্বয় (Combination of Boyle’s Law and Charles’ Law)
- বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সমন্বয় (Combination of Boyle’s, Charles’ and Avogadro’s Laws)
- বিভিন্ন এককে মোলার গ্যাস ধ্রুবক R এর মান গণনা (Calculation of the value of Molar Gas Constant R in different units)
- বিভিন্ন এককে মোলার গ্যাস ধ্রুবক R এর মান গণনা (Calculation of the value of Molar Gas Constant R in different units)
- মোলার গ্যাস ধ্রুবকের মাত্রা ও তাৎপর্য (Dimension and Significance of Molar gas constant)
- শ্বসনতন্ত্রের গ্যাসীয় পরিবহণ ( Gaseous Transport of the Respiratory tract)
- শ্বসনতন্ত্রের পরিচিতি (Introduction to Respiratory System)
- হাইড্রোকার্বনের আণবিক সংকেত নির্ণয় (Determination of Molecular Formula of Hydrocarbons)