তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে একই পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা গাভ করতে পারে। পদার্থের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ ও অণুর গতিসূত্র দিয়ে তা ব্যাখ্যা করা যায়। অণু গুলোর তিন প্রকার গতি যেমন-
- কম্পন গতি,
- আবর্তন গতি ও
- স্থানান্তর গতি থাকতে পারে।
তবে সব পদার্থের অণু গুলো সবসময় কম্পমান থাকে, তাপমাত্রার উপর এই কম্পনের পরিমাণ নির্ভর করে। তাপমাত্রা যত কম হয়, অণুর কম্পন তত কম হয়। এ কম্পন 273°C তাপমাত্রায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে। এ তাপমাত্রাকে (শূন্য) কেলভিন বা পরম শূন্য বলা হয়। এ তাপমাত্রায় সব বস্তু কঠিন পদার্থ হিসেবে থাকে। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে অণু গুলোর কম্পন ও আবর্তন গতি লাভ করে, কিন্তু একে অপরের প্রতি আকর্ষণের কারণে নিজের অবস্থান থেকে বিচ্যুত হতে পারে না অণুগুলো। একটা সময় যদি তাপমাত্র অনেক বেশি বাড়ানো হয়, তবে অণু গুলো নির্দিষ্ট স্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে চলাচল করতে থাকে। অর্থাৎ অণু গুলো স্থানান্তর গতি লাভ করে। তবে প্রতিটি অণুর উপর নিকটবর্তী অন্যান্য অণুর আকর্ষণের কারণে তা সম্পূর্ণ মুক্ত হয় না। এ অবস্থায় কঠিন বস্তু তরলে পরিণত হয়। আবার আরো বেশি তাপমাত্রা দিলে অণু গুলো স্থানান্তর গতির মান আন্তঃআণবিক আকর্ষণের চেয়ে বেশি হয়, তখন তরল পদার্থ গ্যাসীয় অবস্থা লাভ করে।
কঠিন পদার্থের বেলায় আন্তঃআণবিক দূরত্ব সবচেয়ে কম এবং আন্তঃআণবিক আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি থাকে। ফলে অণু গুলো স্থির অবস্থানে এবং একে অপরের অনেক কাছে থাকে। এজন্য কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকৃতি ও আয়তন থাকে। কঠিন অবস্থায় অণুর স্থানান্তর গতি ও আবর্তন গতি প্রায় থাকে না, তবে অণু গুলোর কম্পন গতি থাকে। যেহেতু তাপমাত্রা বাড়লে আন্তঃআণবিক দূরত্ব কিছুটা বাড়ে ও অণুর কম্পন বাড়ে, সেহেতু তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে কঠিন পদার্থের আয়তন কিছুটা বাড়ে, তবে এ বৃদ্ধি খুবই কম।
তরল পদার্থে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ ও অণুর স্থানান্তর গতি প্রায় সমান থাকে। তাই অণু বা কণাসমূহ স্থির অবস্থানে থাকে না। সুতরাং তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আকৃতি নেই। কিন্তু যেহেতু তরল অবস্থাতেও কণাসমূহ পরস্পরের যথাসম্ভব কাছাকাছি থাকে, সেহেতু তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে। যেহেতু তাপমাত্রা বাড়ালে অণু গুলোর স্থানান্তর, আবর্তন ও কম্পন গতি বাড়ে, তাই তরল পদার্থের আয়তনও তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে। কিন্তু এক্ষেত্রেও আয়তন খুব বেশি বাড়ে না। কেননা, তিন প্রকার গতি বাড়লেও কণা গুলো পরস্পরের যথাসম্ভব কাছাকাছি অবস্থান করে। তবে তরল পদার্থের অণুসমূহ কঠিন পদার্থের তুলনায় কম সুশৃঙ্খল অবস্থায় থাকে।
গ্যাসীয় পদার্থের বেলায় আন্তঃআণবিক দূরত্ব সবচেয়ে বেশি ও আন্তঃআণবিক আকর্ষণ সবচেয়ে কম থাকে। তাই গ্যাসীয় অবস্থায় অণুসমূহ সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খল অবস্থায় থাকে। তখন অণু গুলোতে বেশি পরিমাণ কম্পন, আবর্তন ও স্থানান্তর গতি কাজ করে এবং এরা অণুগুলোর আন্তঃআণবিক আকর্ষণকে অতিক্রম করে। ফলে অণুগুলো মুক্তভাবে চলাচল করে এবং অণুগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই গ্যাসের নির্দিষ্ট আকৃতি ও আয়তন নেই। যেহেতু অণুসমূহ আর এখন পরস্পরের কাছাকাছি থাকে না, সেহেতু গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের আয়তন কঠিন বা তরল অবস্থা থেকে অনেক বেশি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, 1kg তরল পানির আয়তন প্রায় 1L। কিন্তু 100°C তাপমাত্রায় ও এক বায়ুমণ্ডলীয় (1 atm) চাপে 1 kg জলীয় বাষ্পের আয়তন প্রায় 1245 L, যা অনেক বেশি।
সুতরাং কঠিন অবস্থায় অণুসমূহের কম্পনগতি থাকলেও আবর্তন ও স্থানান্তর গতি নেই। তরল অবস্থায় অণুসমূহের কম্পন, আবর্তন ও স্থানান্তর গতি থাকে, তবে তা কম। গ্যাসীয় অবস্থায় অণুসমূহের কম্পন, আবর্তন ও স্থানাস্তর গতি অনেক বেশি থাকে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
Related posts:
- অ্যাভোগাড্রোর সূত্র
- আদর্শ আচরণ থেকে বাস্তব গ্যাসের বিচ্যুতির কারণ
- আন্তঃআণবিক শক্তি কাকে বলে
- কণার গতিতত্ত্ব
- গলন, স্ফুটন এবং ঘনীভবন
- গ্যাসীয় অবস্থা
- গ্যাসের ক্রান্তি অবস্থা
- তরল পদার্থের বাষ্পচাপ (Vapour Pressure of Liquid)
- তরল স্ফটিক ও প্লাজমা
- পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা
- পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা
- পদার্থের অবস্থা ও পরিবর্তন
- পদার্থের পরিবর্তন
- পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার কারণ (Causes of Different States of Matter)
- পরমশূন্য তাপমাত্রা কাকে বলে