জোয়ারকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়-
- মুখ্য জোয়ার
- গৌণ জোয়ার
- ভরা কটাল
- মরা কাটাল বা লঘু স্ফীতি
মুখ্য জোয়ার : চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে আবর্তনকালে পৃথিবীর যে অংশ চন্দ্রের নিকবর্তী হয়, সেখানে চন্দ্রের আকর্ষণ সর্বাপেক্ষা বেশি হয় এ আকর্ষণে চারদিক হতে পানি এসে চন্দ্রের দিকে ফুলে ওঠে এবং জোয়ার হয়। এরূপে সৃষ্ট জোয়ারকে মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার বলা হয়।
গৌণ জোয়ার : চন্দ্র পৃথিবীর যে পার্শ্বে আকর্ষণ করে তার বিপরীত দিকের জলরাশির ওপর মহাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কমে যায় এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি হয়। এতে চারদিক হতে পানি ঐ স্থানে এসে জোয়ারের সৃষ্টি করে। এভাবে চন্দ্রের বিপরীত দিকে যে জোয়ার হয় তাকে গৌণ জোয়ার বা পরোক্ষ জোয়ার বলে।
ভরা কটাল বা তেজ কটাল : পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য প্রায় একই সরলরেখায় অবস্থান করে। তাই সূর্যের আকর্ষণ চন্দ্রের আকর্ষণ শক্তিকে সাহায্যে করে। ফলে এই দুই সময়ে জোয়ারের পানি খুব বেশি ফুলে উঠে। একে ভরা বা তেজ কটাল বলে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যার তিথিতে তেজ কটাল হয়।
মরা কটাল / লঘু স্ফীতি : চন্দ্র ও সূর্য পৃথিবীর সাথে এক সমকোণে থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। তাই চন্দ্রের আকর্ষণে যেখানে জোয়ার হয় সূর্যের আকর্ষণে সেখানে ভাটা হয়। চন্দ্র পৃথিবীর নিকট থাকায় তার কার্যকরী শক্তি সূর্য অপেক্ষা বেশি। কিন্তু চন্দ্রের আকর্ষণে যে জোয়ার হয়, সূর্যের আকর্ষণে তা বেশি স্থায়ী হতে পারে না। ফলে মরা কটাল হয়। অষ্টমীর তিথিতে মরা কটাল হয়। একমাসে দুই বার তেজ কটাল এবং দুই বার মরা কটাল হয়ে থাকে।
জোয়ার -ভাটার প্রভাব
মানবজীবনের উপর জোয়ার-ভাটার যথেষ্ট প্রভাব আছে। বিশ্বের সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশসমূহে জোয়ার-ভাটার জন্য কিছু প্রভাব দেখা যায় যেগুলো হচ্ছে-
- জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে ভূখন্ড থেকে আবর্জনাসমূহ নদীর মধ্য দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পতিত হয়।
- নদীর মোহনা পরিষ্কার থাকে। দৈনিক দুবার জোয়ার-ভাটা হওয়ার ফলে ভাটার টানে নদীর মোহনায় পলি ও আবর্জনা জমতে পারে না।
- জোয়ার-ভাটার ফলে সৃষ্ট স্রোতের সাহায্যে নদীখাত গভীর হয়।
- বহু নদীতে ভাটার স্রোতের বিপরীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ (Hydro-electric) উৎপাদন করা হয়।
- জোয়ারের পানি নদীর মাধ্যমে সেচে সহায়তা করে এবং অনেক সময় খাল খনন করে জোয়ারের পানি আটকিয়ে সেচকার্যে ব্যবহার করা হয়।
- শীতপ্রধান দেশে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি জোয়ারের সাহায্যে নদীতে প্রবেশ করে এবং এর ফলে নদীর পানি সহজে জমে না।
- জোয়ার-ভাটার ফলে নৌ-যান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয়। জোয়ারের সময় নদীর মোহনায় ও তার অভ্যন্তরে পানি অধিক হয় বলে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজের পক্ষে নদীতে প্রবেশ করা সুবিধা হয়। আবার ভাটার টানে ঐ জাহাজ অনায়াসে সমুদ্রে নেমে আসতে পারে। বাংলাদেশের দুটি প্রধান সমুদ্রবন্দর পতেঙ্গা ও মংলা এবং অন্যান্য উপকূলবর্তী নদীবন্দর সচল রাখতে জোয়ার-ভাটার ভূমিকা রয়েছে।
- অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ারের সময় বান ডাকার ফলে অনেক সময় নৌকা, লঞ্চ প্রভৃতি ডুবে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় জানমালের ক্ষতি হয়।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
Related posts:
- আহ্নিক গতি কাকে বলে
- গতির প্রকারভেদ
- গ্যাসের ঘনত্বের উপর চাপের প্রভাব
- জৈব যৌগের প্রকারভেদ
- জোয়ার ও ভাটা
- তড়িতের প্রকারভেদ
- নদীর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ
- পৃথিবীর গতি কত প্রকার
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : সাময়িক বায়ু
- বারিমণ্ডল
- ভাইরাসের প্রকারভেদ
- ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন
- মৌলিক বল কাকে বলে
- শ্রেণীবিন্যাসের প্রকারভেদ
- সৌরজগৎ কাকে বলে