দিনের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে অথবা বছরের কোনো নির্দিষ্ট ঋতুতে যে বায়ুপ্রবাহ জল ও স্থলভাগের তাপের তারতম্যের জন্য সৃষ্টি হয় তাকে সাময়িক বায়ু বলে। যেমন- সমুদ্রবায়ু, স্থলবায়ু ও মৌসুমী বায়ু।
সমুদ্র ও স্থলবায়ু (Sea and Land Breeze) : দিনের বেলা স্থলভাগ বেশি গরম হয় বলে সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়, কিন্তু জলভাগ বেশি গরম হয় না বলে সেখানকার বায়ু উচ্চচাপ যুক্ত হয়। ফলে তখন জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। একে সমুদ্রবায়ু বলে। আবার রাতের বেলা জলভাগের চেয়ে স্থলভাগ বেশি ঠান্ডা হয় বলে স্থলভাগের বায়ু উচ্চচাপ যুক্ত হয়। তখন স্থলভাগ থেকে জলভাগ বা সমুদ্রের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। একে স্থলবায়ু বলে। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থানের কারণে সামুদ্রিক ও স্থলবায়ু নিয়মিত প্রবাহিত হয়।
সমুদ্র বায়ুর বৈশিষ্ট্য
- দিনের বেলা সমুদ্র থেকে বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।
- এ বায়ু সকাল ১০টা থেকে প্রবাহিত হতে থাকে। বিকালে (অপরাহ্নে) এ বায়ুর বেগ সবচেয়ে বেশি হয়।
স্থলবায়ুর বৈশিষ্ট্য
- রাতের বেলা স্থলভাগ থেকে বায়ু সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়।
- সন্ধ্যার পর থেকে এ বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে, রাত ৩ টায় এ বায়ুর বেগ সবচেয়ে বেশি হয়।
মৌসুমি বায়ু (Monsoon Wind) : আরবি ভাষায় “মওসুম’ শব্দের অর্থ ঋতু। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয় তাকে মৌসুমি বায়ু বলে। সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের ফলে শীত-গ্রীষ্মে ঋতুভেদে স্থলভাগ ও জলভাগের তাপের তারতম্য ঘটে। সেজন্য মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি হয়। উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে সূর্য কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে আলো দেয়। এর ফলে কর্কটক্রান্তি অঞ্চলের অন্তর্গত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর-পশ্চিম ভারত, মধ্য এশিয়া প্রভৃতি স্থানের স্থলভাগ অনেক গরম হয়। ফলে এ সকল অঞ্চলে বায়ুর চাপ কমে যায় এবং একটি বড় নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ গোলার্ধের ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আসা দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে এশিয়া মহাদেশের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবলবেগে ছুটে যায়। এ বায়ুকে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মের মৌসুমি বায়ু বলে। নিরক্ষরেখা অতিক্রম করলে ফেরেলের সূত্র অনুসারে দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু গতি বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। এজন্য গ্রীষ্মের এ বায়ুকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলে।
গ্রীষ্মের মৌসুমি বায়ু সমুদ্রের উপর দিয়ে আসে বলে এতে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে। এটি আরব সাগরীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় এ দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। আরব সাগরীয় শাখা পাকিস্তান ও পশ্চিম ভারতে এবং বঙ্গোপসাগরীয় শাখা বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। স্থলভাগের উপর দিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসে বলে এটা শুষ্ক থাকে। এ মৌসুমি বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করলে ফেরেলের সূত্র অনুসারে বাম দিকে বেঁকে যায় এবং উত্তর পশ্চিম মৌসুমি বায়ুরূপে উত্তর অস্ট্রেলিয়ার দিকে অগ্রসর হয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়।
শীতকালে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণ : বর্ষাকালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে জলীয়বাষ্পপূর্ণ মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। পক্ষান্তরে, শীতকালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে মহাদেশীয় বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম। ফলে এ সময় বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- জোয়ার-ভাটার প্রকারভেদ ও প্রভাব (Types & Effects of Tides)
- টেলিস্কোপের প্রকারভেদ (Types of Telescope)
- পানিচক্র (Water Cycle)
- পৃথিবীর গতি
- বায়ু প্রবাহ (Airflow)
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : নিয়ত বায়ু (Types of Airflow : Planetary Winds)
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : স্থানীয় বায়ু (Types of Airflow : Local Winds)
- বায়ুর তাপ, চাপ ও আদ্রতা (Air heat, Pressure & Humidity)
- বারিমণ্ডল (Hydrosphere)
- বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Rainfall)
- মহাসাগর ও এর প্রকারভেদ (Oceans & their types)
- সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ (Landforms of the Seafloor)
- সমুদ্রস্রোত (Sea Tide)
- সমুদ্রস্রোতের প্রভাব ও গুরুত্ব (The effect and importance of Ocean Currents)
- হিমপ্রাচীর ও সামুদ্রিক দুর্যোগ (Cold Wall & Sea Disaster)