বিগ ব্যাং এর পরবর্তী সময়ে পার্টিকেল ফিজিক্স এর মাধ্যমে বিগ ব্যাং নিয়ে অনেক কিছু জানা যায়। পার্টিকেল ফিজিক্স না জানা থাকলে বিগ ব্যাং নিয়ে কোন কিছু ব্যাখ্যা করা যেত না। পার্টিক্যাল ফিজিক্সের বাংলা হচ্ছে কণা। পদার্থবিজ্ঞানে পার্টিকেল ফিজিক্সের একটি থিওরি রয়েছে যার নাম Grand Unification Theory বা GUT. এই থিওরি এবং বিগ ব্যাং এই দুটোকে একত্রিত করে মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া হয়।
এবার আমরা জেনে নেই Grand Unification Theory বা GUT জিনিসটা আসলে কি! পৃথিবীতে মোট চার ধরনের মৌলিক বল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-
i) মহাকর্ষ বল
ii) তড়িৎ চুম্বকীয় বল
iii) সবল নিউক্লিয় বল এবং
iv) দুর্বল নিউক্লিয় বল
এই ধরনের বল কে একত্রিত করে যদি একটি থিওরি তে প্রকাশ করা যায় তবে সেটাকে বলা হয় Theory of Everything. তবে এই থিওরিটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ চারটি দলকে সমন্বিত করা এখনো সম্ভব হয়নি। তবে বিজ্ঞানীরা তিনটি বল কে একত্রিত করে একটি থিওরি বানাতে পেরেছেন। এই থিওরিটির নাম হচ্ছে GUT. এই থিওরিটা দুর্বল নিউক্লিয় বল, সবল নিউক্লিয় বল এবং তড়িৎ চুম্বকীয় বল এই তিন ধরনের বলকে সমন্বিত করে বানানো হয়েছে। তাই এই থিওরিতে মহাকর্ষীয় বল কোন স্থান পায়নি। যদি কখনো এই থিওরির সাথে মহাকর্ষীয় বল কে যুক্ত করে অন্য একটা থিউরি বানানো যায় তবে সেটার নামই হবে theory of everything.
বিগ ব্যাং ঘটার ঠিক পরবর্তী সময় গুলোতে কি কি ঘটনা ঘটেছে সেগুলো নিয়ে এখন আলোচনা করব।
বিগ ব্যাং এর পরবর্তী ঠিক 10-43 সেকেন্ডের মধ্যে মহাবিশ্বে এত বেশি ঘটনা ঘটে যে সেটা বিগ ব্যাং এর পরবর্তী মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরেও ঘটেনি। এই সময়টাকে প্লাংক টাইম (Planck Time) বলে। প্লাংক টাইমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে, যেগুলো হচ্ছে-
a) এই সময় সব ধরনের মৌলিক বলগুলো একসাথে মিলেমিশে ছিলো, অর্থাৎ তখন মৌলিক বল গুলো আলাদা অবস্থায় ছিল না এখন যেমনটা আছে।
b) তখন মহাবিশ্বের তাপমাত্রা ছিল 1032 কেলভিন। এই পরিমাণ তাপমাত্রাকে Plank Temperature বলে।
c) প্লাংক টাইমে মহাবিশ্বের বিস্তৃতি ছিল মাত্র 10-35 মিটার। এই পরিমাণকে প্লাংক দৈর্ঘ্য বা planck length বলে।
d) তখন আমাদের মহাকর্ষ বল বা গ্রাভিটেশন ছিল সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টে।
মহাবিশ্ব শুরুর পর এই সময়টিতে যা যা ঘটেছে সেগুলোর ধারণা সর্বপ্রথম দেন ম্যাক্স প্লাংক।
প্লাংকের সময়ের পরে 10-43 সেকেন্ড থেকে 10-38 সেকেন্ড পর্যন্ত একটা সময়ে খুব মজার একটা ঘটনা ঘটে সেটা হলো-
a) মহাকর্ষ বল অন্যান্য বলগুলো থেকে আলাদা হয়ে যায়। অর্থাৎ মহাকর্ষ বল একটা স্বাধীন অস্তিত্ব পায়।
এরপর 10-36 সেকেন্ড থেকে 10-32 সেকেন্ড পর্যন্ত একটা সময় কাল বিবেচনা করা হয়, যার নাম রাখা হয় স্ফীতিকাল বা time of inflation. এই সময়ে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে-
a) এই সময়টাতে মহাবিশ্বের বিশাল পরিমাণ সম্প্রসারণ ঘটে। কেননা এই সময়ের সীমায় মহাবিশ্ব 10 সেন্টিমিটার থেকে 1026 গুণ বড় হয়ে যায়। মহাবিশ্বের এই বিশাল সম্প্রসাণের ঘটনাকে সূচকীয় বৃদ্ধি বা Exponential Inflation বলে। অর্থাৎ সূচকীয় বৃদ্ধি অবস্থায় সময় যতটুকু বেড়েছে তার তুলনায় মহাবিশ্বের আকার অনেক বেশি গুন বেড়েছে। এর আরেক নাম হচ্ছে Cosmic Inflation.
b) এই সময় হঠাৎ মহাবিশ্ব ছড়িয়ে যাওয়াতে এর তাপমাত্রা 1032 ক্যালভিন থেকে 1027 ক্যালভিনে নেমে আসে।
c) এই সময়টিতে মহাবিশ্ব অতি ঘন Quark-Gluon Plasma বা Quark-Gluon Soup বা Quagma তে পরিণত হয়। Quark (কোয়ার্ক), Gluon (গ্লুয়ন) এবং Plasma (প্লাজমা) কি জিনিস সেটা নিয়ে আমরা পরবর্তীতে বিস্তারিত জানবো।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট, পারসেক ও আলোক দিগন্ত (Astronomical Unit, Parsec & Light Horizon)
- ঘটনা দিগন্ত ও হকিং রেডিয়েশন
- জোয়ার ও ভাটা (High Tide & Low Tide)
- টলেমির মহাবিশ্বের মডেল (Ptolemy Model of the Universe)
- নক্ষত্রের জন্ম (Birth of Star)
- নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton’s Law of Gravitation)
- প্রসঙ্গ বিন্দু ও প্রসঙ্গ কাঠামো (Reference Point & Reference Frame)
- বিগ ব্যাং এর শেষ ভাগ (Last Portion after the Big Bang)
- বিগ ব্যাং ও কণা পদার্থবিজ্ঞান (Big Bang & Particle Physics)
- বিগ ব্যাং মডেল (Big bang Model)
- মহাজাগতিক বস্তু : ছায়াপথ
- মহাজাগতিক বস্তু : ধূমকেতু ও উল্কা
- মহাজাগতিক বস্তু : নীহারিকা
- মৌলিক বল ও তাদের প্রকারভেদ (Basic Forces & their Types)
- লাল ও নীল অপসারণ (Red & Blue Shift)