তরল অবস্থায় পদার্থের অণুগুলো পরস্পরের খুব কাছাকাছি থাকে। এ কারণে তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন থাকে। অণুসমূহ মোটামুটিভাবে পরস্পরের কাছাকাছি থাকায় তাদের মধ্যে ফাঁকা জায়গার পরিমাণ খুবই কম। এ কারণে প্রচণ্ড চাপেও তরল পদার্থের আয়তন তেমন কমে না। তরল পদার্থের অণুগুলো সবসময় গতিশীল। এ কারণে তরল পদার্থের কোন নির্দিষ্ট আকৃতি নেই, যে পাত্রে কোন তরল পদার্থ রাখা হয়, তা সে পাত্রের আকৃতি ধারণ করে। এক্ষেত্রে তরল অবস্থার সাথে গ্যাসীয় অবস্থার মিল আছে। তবে গ্যাসীয় অবস্থায় অণুগুলো খুব দ্রুতগতি সম্পন্ন হয়। অপরদিকে তরল অবস্থায় অণুগুলো পরস্পরের খুব নিকটে থাকায় পরস্পরের সাথে আকর্ষণের কারণে তাদের গতিবেগ অনেক কম হয়।
কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাষ্প ও তরল সাম্যাবস্থায় থাকলে তরলের উপরিস্থিত বাষ্পের যে চাপ থাকে, তাকে সে তাপমাত্রায় সে তরল পদার্থের বাষ্পচাপ বলা হয়। তাপমাত্রা বাড়লে বাষ্পচাপ বাড়ে৷
গতিতত্ত্ব অনুযায়ী বাষ্পচাপের ব্যাখ্যা
গ্যাসের অণুসমূহের ন্যায় তরল পদার্থের অণুসমূহ সর্বদা কিছুমাত্রায় গতিশীল। যেহেতু তরল পদার্থের একটি উন্মুক্ত পৃষ্ঠতল আছে, সেহেতু তরল পদার্থ থেকে কিছু অণু এই পৃষ্ঠতল থেকে মুক্ত হয়ে আসবে এবং তরল পদার্থের উপরিভাগের স্থানে গ্যাসরূপে অবস্থান করবে।
আবদ্ধ পাত্রে যদি তরল পদার্থের উপরিভাগে যথাযথ জায়গায় থাকে, তবে সে স্থানে এ সব অণুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়বে। যেহেতু এ সব অণু গ্যাসীয় অবস্থায় আছে, তারা সবদিকে দ্রুত গতিশীল, ফলে তাদের মধ্য থেকে কিছু অণু সব সময় তরল মাধ্যমে ফিরে আসবে। তরল পদার্থের উপরিভাগে গ্যাসীয় অণুর সংখ্যা যত বাড়বে, তরল মাধ্যমে এসব অণুর ফিরে আসার হারও তত বাড়বে।
সুতরাং এক সময় সেখানে একটি সাম্যাবস্থা তৈরি হবে, যখন প্রতি একক সময়ে তরল মাধ্যম পরিত্যাগকারী অণুর সংখ্যা সে সময়ে তরল মাধ্যমে ফিরে আসা অণুর সংখ্যার সমান হয়। এ অবস্থায় তরল পদার্থের উপরের স্থান তরল পদার্থের বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হবে এবং এদের সৃষ্ট চাপই সে তাপমাত্রায় তরল পদার্থের বাষ্পচাপ। তরল পদার্থের উপরে স্থানের আয়তন যা হোক না কেন, সে স্থান হতে তরল মাধ্যমে ফিরে আসা গ্যাস অণুর সংখ্যা গ্যাসীয় মাধ্যমে অণুর ঘনমাত্রার সমানুপাতিক হবে। আবার নির্দিষ্ট ঘনমাত্রার যে কোন গ্যাস একটি নির্দিষ্ট চাপ দেয়। সুতরাং যে কোন তাপমাত্রায় কোন তরলের বাষ্পচাপও নির্দিষ্ট হবে।
অপরদিকে তাপমাত্রা বাড়লে তরল পদার্থের অণুসমূহের গতিশক্তি বাড়ে। অণুসমূহের গতিশক্তি মাধ্যমের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তিকে অতিক্রম করে তাদের গ্যাসীয় মাধ্যমে চলে যাওয়ার প্রবণতা তত বাড়ে। সুতরাং তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে তরল পদার্থের বাষ্পচাপ বাড়ে।
তরল পদার্থের বাষ্পচাপ ও স্ফুটনাঙ্ক
কোন তরল পদার্থের উপর যদি স্থির চাপ 1 atm (বায়ুমণ্ডল) চাপ রেখে তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়ানো হয়, তবে তরল পদার্থটির বাষ্পচাপ বাড়তে থাকবে এবং এক সময় তা বাহ্যিক চাপের সমান হবে। এ অবস্থায় তরল পদার্থটি স্বাধীনভাবে ব্যষ্পীভূত হবে এবং তরল পদার্থের মধ্যে তার বাষ্পের বুদবুদ তৈরি হতে দেখা যাবে। এ তাপমাত্রাই হচ্ছে তরল পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক। সুতরাং যে তাপমাত্রায় কোন তরল পদার্থের বাষ্পচাপ তার উপরস্থ বায়ুমণ্ডল চাপ বা 1 atm চাপের সমান হয় এবং তরল পদার্থটি বুদবুদ সহকারে বাষ্পে পরিণত হয়, তাকে তরল পদার্থটির ফুটনাঙ্ক বলা হয়। যদি বাহ্যিক চাপ বা বায়ুমণ্ডল চাপ কমানো হয়, তবে তরল পদার্থের স্ফুটনাংক কমে যায়, আবার বাহ্যিক চাপ বাড়লে ফুটনাঙ্ক বাড়ে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- অ্যাভোগাড্রোর সূত্র
- একই পদার্থের তিনটি ভৌত অবস্থা
- কণার গতিতত্ত্ব
- গ্যাস অণুসমূহের গতিবেগের বিতরণ
- গ্যাসের ক্রান্তি অবস্থা
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব থেকে গ্যাসীয় সূত্র সমূহের উপপাদন
- গ্যাসের ঘনত্বের উপর চাপের প্রভাব
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্রের প্রয়োগ
- পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা
- পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা
- পদার্থের অবস্থা ও পরিবর্তন
- পদার্থের পরিবর্তন
- পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার কারণ (Causes of Different States of Matter)
- পদার্থের শ্রেণীবিভাগ
- হাইড্রোকার্বনের আণবিক সংকেত নির্ণয়