ভোল্টেজ সোর্স

সার্কিটে ভোল্টেজ সোর্স হচ্ছে এমন এক ধরনের ইলেকট্রিক ডিভাইস যেটি সার্কিটে পাওয়ার সাপ্লাই করে। ভোল্টেজ সোর্স দুই ধরনের হয়।

১. স্বাধীন ভোল্টেজ সোর্স (Independent Voltage Source) : এরা আবার দুই ধরনের – ডিসি ভোল্টেজ সোর্স এবং এসি ভোল্টেজ সোর্স।

২. অধীন ভোল্টেজ সোর্স (Dependent Voltage Source) : এরাও দুই ধরনের হয় – Voltage controlled voltage source (VCVS) এবং Current controlled voltage source (CCVS).

 

স্বাধীন ভোল্টেজ সোর্স (Independent Voltage Source)

যেসব ভোল্টেজ সোর্স গুলো সার্কিটের কোনো উপাদানের উপর নির্ভরশীল না থেকে নিজে থেকে সার্কিটে ভোল্টেজ সাপ্লাই দেয় তাদেরকে Independent voltage source বলে। এরা দুই ধরনের হয়, যেমন:

a) ডিসি ভোল্টেজ সোর্স (DC Voltage Source)

এই ধরনের ভোল্টেজ সোর্স গুলো সবসময় সার্কিটে একই মানের ভোল্টেজ সাপ্লাই করে। তাই এসব ভোল্টেজ সোর্সের পোলারিটি (Polarity) সবসময় একই দিক বরাবর থাকে। ডিসি জেনারেটর, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক কোষ এরা হচ্ছে এই ধরনের ভোল্টেজ সোর্স।

নিচে একটা DC voltage source যুক্ত সার্কিট দেখানো হয়েছে এবং একটা time-voltage গ্রাফ দেখানো হয়েছে। গ্রাফ থেকে বোঝা যাচ্ছে, সময় যতই বাড়ুক না কেনো ভোল্টেজের মান একই থাকবে সবসময়।

b) এসি ভোল্টেজ সোর্স (Alternating or AC Voltage Source)

যেসব ভোল্টেজ সোর্স থেকে সবসময় পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ পাওয়া যায় তাদেরকে এসি ভোল্টেজ সোর্স বলে। খুব অল্প সময় পর পর এই ধরনের ভোল্টেজ সোর্সগুলোর পোলারিটি পরিবর্তন হয়। তাই এটিকে time varying voltage source নামেও ডাকা হয়। অল্টারনেটর বা এসি জেনারেটর, ডিসি টু এসি কনভার্টার ইত্যাদি হচ্ছে এই ধরনের ভোল্টেজ সোর্স।

নিচে একটা এসি ভোল্টেজ সোর্স যুক্ত সার্কিট এবং একটা time-voltage গ্রাফ দেখানো হয়েছে। গ্রাফ থেকে বোঝাই যাচ্ছে, সময়ের সাথে সাথে ভোল্টেজের মান আপ-ডাউন করছে, অর্থাৎ ভোল্টেজটি এক ধরনের এসি ভোল্টেজ।

 

অধীন ভোল্টেজ সোর্স (Dependent / Controlled Voltage Source)

যেসব ভোল্টেজ সোর্স গুলো নিজ থেকে কোনো ভোল্টেজ তৈরি করতে পারে না এবং ভোল্টেজ তৈরি করার সময় সার্কিটের অন্যান্য উপাদানের উপর নির্ভরশীল থাকে তাদেরকে Dependent voltage source বলে। এদেরকে সার্কিটে ডায়মন্ড বা হীরকের আকারে দেখানো হয়। এরা দুই ধরনের হয়, যেমন:

Current Controlled Voltage Source (CCVS) : যখন একটা dependent ভোল্টেজ সোর্স কোনো dependent কারেন্ট সোর্সের উপর নির্ভর করে তখন তাকে Current controlled voltage source (CCVS) বলে। নিচে একটা CCVS এর গঠন দেখানো হলো-

Voltage Controlled Voltage Source (VCVS) : আবার কোনো dependent ভোল্টেজ সোর্স অন্য কোনো independent ভোল্টেজ সোর্সের উপর নির্ভর করে তখন তাকে Voltage controlled voltage source (VCVS) বলে। নিচে একটা VCVS এর গঠন দেখানো হলো-

এছাড়া আরো দুই ধরনের ভোল্টেজ সোর্সকে দেখা যায় সার্কিটে। এরা হচ্ছে-

 

আদর্শ ভোল্টেজ সোর্স (Ideal Voltage Source)

যেসব ভোল্টেজ সোর্সের অভ্যন্তরীণ রোধ বা internal resistance এর মান শূণ্য থাকে তারা হচ্ছে Ideal voltage source. অর্থাৎ এই ধরনের ভোল্টেজ সোর্স থেকে কারেন্ট বের হতে কোনো বাধা পায় না, যেহেতু এদের কোনো রেজিস্টেন্স নাই। তাই এই ভোল্টেজ সোর্সে কোনো power loss হয় না এবং এর দক্ষতা বা efficiency 100% হয়। তবে বাস্তবে এমন কোনো ভোল্টেজ সোর্স পাওয়া যায় না।

যদি কোনো Ideal voltage source এর মান 5V হয় তবে সেটি সার্কিটে ঠিক 5V ভোল্টেজ সাপ্লাই দিবে।

 

প্রাকটিক্যাল ভোল্টেজ সোর্স (Real or Practical Voltage Source)

যেসব ভোল্টেজ সোর্সের অভ্যন্তরীণ রোধ বা internal resistance এর একটা মান থাকে তাদেরকে Practical voltage source বলে। অভ্যন্তরীণ রোধ থাকাতে ভোল্টেজ সোর্সের মধ্যে খুব অল্প পরিমান voltage drop ঘটে। তাই এই ভোল্টেজ সোর্স যে পরিমান ভোল্টেজ তৈরি করে তার পুরোটা সার্কিটে সাপ্লাই দিতে পারে না। সেজন্য এদের দক্ষতা বা efficiency কখনোই 100% হয় না। বর্তমানে যত ধরনের ভোল্টেজ সোর্স ব্যবহার করা হয় তাদের সবাই এই ধরনের ভোল্টেজ সোর্স।

যদি কোনো practical ভোল্টেজ সোর্স 5V ভোল্টেজ তৈরি করে তবে সার্কিটে সেটি 5V থেকে কিছুটা কম মানের যেমন 4.9V কিংবা 4.5V এর ভোল্টেজ সাপ্লাই করবে। কখনোই 5V ভোল্টেজ সাপ্লাই করবে না।

 

ভোল্টেজ সোর্সের কৌশল

আমরা ইতোমধ্যে ভোল্টেজ সোর্সকে চিনে ফেলেছি। এখন আমরা ভোল্টেজ সোর্স নিয়ে দুটো মজার শর্টকাট টেকনিক জানবো। চলুন সেগুলো জেনে ফেলি :

Hacks 1

ধরা যাক দুটো ভোল্টেজ সোর্স V1 ও V2 কে সিরিজ অবস্থায় কানেক্ট করা হয়েছে। আরো ধরা যাক, এদের দুজনের পজেটিভ ও নেগেটিভ টার্মিনাল একই দিকে-

যদি a টার্মিনাল থেকে b টার্মিনালের দিকে ভোল্টেজ সোর্স দুটোর পোলারিটি দেখি তবে সেটা হবে : +, -, +, – সিকুয়েন্সের।

আবার b টার্মিনাল থেকে যদি a টার্মিনালের দিকে পোলারিটি দেখি তবে সেটা হবে : -, +, -, + সিকুয়েন্সের।

যেহেতু এই সার্কিটে ভোল্টেজ সোর্স দুটোর পজেটিভ টার্মিনাল a এর দিকে এবং নেগেটিভ টার্মিনাল b এর দিকে, তাই a পয়েন্ট হবে higher potential বা উচ্চ বিভব যুক্ত পয়েন্ট এবং b পয়েন্ট হবে lower potential বা নিন্ম বিভব যুক্ত পয়েন্ট-

যেহেতু V1 এবং V2 দুটো ভোল্টেজ সোর্স একসাথে একই সিকুয়েন্সে এখানে কাজ করছে তাই এদের মিলিত ভোল্টেজ পাওয়া যাবে a ও b টার্মিনালের মধ্যবর্তী জায়গাতে। যদি a ও b টার্মিনালের মধ্যবর্তী জায়গার ভোল্টেজকে V ধরি তবে এর মান হবে-

   V = V1 + V2

এক্ষেত্রে আমরা V1 ও V2 কে আলাদাভাবে না লিখে একত্রে যোগ করে সার্কিটে বসাতে পারি-

তাহলে মূল কথা হচ্ছে, যদি একটা সার্কিটে অনেকগুলো voltage source সিরিজে থাকে এবং তাদের polarity যদি একই দিকে থাকে তবে সেগুলোর বদলে একটা মাত্র ভোল্টেজ সোর্স বা resultant voltage source ব্যবহার করলেই হবে, যার মান হবে সার্কিটের সবগুলো ভোল্টেজ সোর্সের মানের যোগফল।

Hacks 2

যদি V1 ও V2 ভোল্টেজ যুক্ত দুটো ভোল্টেজ সোর্স সিরিজ কানেকশনে সার্কিটে যুক্ত থাকে এবং তাদের polarity বিপরীত দিকে হয় তবে সেই সার্কিটের চেহারা দেখাবে ঠিক এমন-

এখন, এই সার্কিটের দুটো টার্মিনাল a ও b এর পোলারিটি নির্ভর করবে V1 ও V2 এর উপর। যদি V1 > V2 হয় তবে V1 এর মান বেশি হওয়াতে সার্কিটে এই ভোল্টেজ সোর্সটি বেশি কাজ করবে। তাই a ও b টার্মিনালের পোলারিটি হবে V1 ভোল্টেজ সোর্স অনুযায়ী। একইসাথে, a ও b টার্মিনাল দুটোর voltage difference V এর মান হবে –

   V = V1 – V2

এক্ষেত্রে সার্কিটের অবস্থা নিচের ছবিতে দেখুন-

আবার যদি V2 > V1 হয় তবে V2 এর মান বেশি হওয়াতে সার্কিটে এই ভোল্টেজ সোর্সটি বেশি কাজ করবে। তাই a ও b টার্মিনালের পোলারিটি হবে V2 ভোল্টেজ সোর্স অনুযায়ী। একইসাথে, a ও b টার্মিনাল দুটোর voltage difference V এর মান হবে –

   V = V2 – V1

নিচের ছবিতে দেখুন-

কিন্তু, সার্কিটে দুটো ভোল্টেজ সোর্সের মান সমান এবং বিপরীতমুখী হলে, অর্থাৎ V1 = V2 হলে দুটো ভোল্টেজ সোর্স একে অপরের প্রভাবকে নষ্ট করে দিবে। তখন a ও b টার্মিনালের মাঝে কোনো ভোল্টেজ থাকবে না এবং সার্কিটটি একটা নিউট্রাল তারের মত কাজ করবে-

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool

অতিথি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-

write@thecrushschool.com

Emtiaz Khan

A person who believes in simplicity. He encourages the people for smart education. He loves to write, design, teach & research about unknown information.