সাধারণভাবে পানি কোথাও স্থির অবস্থায় নেই, বিভিন্নভাবে সর্বদা আবর্তিত হচ্ছে এবং অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। কারণ পানি বাষ্প, তরল ও কঠিন এ তিন অবস্থায় থাকতে পারে।
পানির মূল আধার হচ্ছে সমুদ্র। বাষ্পীভবনের মাধ্যমে সমুদ্রের পানি উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে বাষ্পাকারে উপরে ওঠে এবং সুবিশাল বায়ুমন্ডলে মিশে যায়। এছাড়া ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ থেকে প্রস্বেদনের মাধ্যমে জলীয় অংশ বায়ুমন্ডলে সম্পৃক্ত হয়। জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু শীতল ও ঘনীভূত হয়ে মেঘ, বৃষ্টি, শিশির কুয়াশা, তুষার, বরফ প্রভৃতিতে পরিণত হয় এবং যেগুলো বৃষ্টিপাতসহ বিভিন্ন রূপে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। বিভিন্ন উপায়ে ভূপৃষ্ঠে পতিত পানির কিছুঅংশ বাষ্পীভবনের মাধ্যমে পুনরায় বায়ুমন্ডলে মিশে যায়, কিছু অংশ নদী দ্বারা বাহিত হয়ে (Run-off) সমুদ্রে পতিত হয়, কিছু অংশ উদ্ভিদ অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় (Osmosis) গ্রহণ করে এবং অবশিষ্টাংশ ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের মধ্যে চুয়ে (Percolation) প্রবেশ করে। এভাবেই প্রকৃতিতে পানিচক্র চলতে থাকে।
সংক্ষেপে, বিভিন্ন অবস্থায় (কঠিন / তরল বায়বীয়) সমুদ্র থেকে বায়ুমন্ডলে, আবার বায়ুমন্ডল থেকে সমুদ্রের পানির মহা আবর্তনকে পানিচক্র বলে।
পানিচক্রের প্রক্রিয়াগুলোর হচ্ছে-
১) বাষ্পীভবন (Evaporation) : সূর্যের তাপে সমুদ্র, নদী, হ্রদ প্রভৃতি থেকে পানি ক্রমাগত বাষ্পে পরিণত হচ্ছে এবং তা অপেক্ষাকৃত হালকা বলে উপরে উঠে বায়ুমন্ডলে মিশে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। একে বাষ্পীভবন বলে। বায়ুর বাষ্প ধারণ করার একটা সীমা আছে। তা বায়ুর উষ্ণতার উপর নির্ভর করে। বায়ু যত উষ্ণ হয়, তত বেশি জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে। সমুদ্রই জলীয়বাষ্পের প্রধান উৎস। উদ্ভিদজগৎ, নদ-নদী এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলাশয় থেকেও বায়ু জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে থাকে।
২) ঘনীভবন (Condensation) : পরিপৃক্ত বায়ু উষ্ণতর হলে তখন এটি আরও বেশি জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে। আবার বায়ু শীতল হতে থাকলে পূর্বের মতো বেশি জলীয়বাষ্প ধারণ করে রাখতে পারে না, তখন জলীয়বাষ্পের কিছু অংশ পানিতে পরিণত হয়, তাকে ঘনীভবন বলে। বায়ু যে উষ্ণতায় (জলীয়বাষ্পীরূপে) ঘনীভূত হয় তাকে শিশিরাংক (Dew point) বলে । তাপমাত্রা ০° সেলসিয়াস বা হিমাঙ্কের (Freezing point) নিচে নেমে গেলে তখন ঘনীভূত জলীয়বাষ্প কঠিন আকার ধারণ করে এবং তুষার ও বরফরূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। কিন্তু হিমাঙ্ক শিশিরাঙ্কের উপরে থাকলে ঘনীভবনের মাধ্যমে শিশির, কুয়াশা অথবা বৃষ্টিতে পরিণত হয়।
সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত বায়ু : বায়ু নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে। কিন্তু বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে, সেই পরিমাণ জলীয়বাষ্প বায়ুতে থাকলে বায়ু আর অধিক জলীয়বাষ্প গ্রহণ করতে পারে না। তখন তাকে সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত বায়ু (Saturated air) বলে।
৩) বারিপাত (Precipitation) : জলীয়বাষ্প উপরে উঠে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। একে বারিপাত বলে। সকল প্রকার বারিপাত এই জলীয়বাষ্পের উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতি অনুযায়ী বারিপাত বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত- তুষার, তুহিন, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি।
৪) পানিপ্রবাহ (Run Off) : বারিপাতের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে আগত পৃষ্ঠপ্রবাহ পানিরূপে নদী, হ্রদ, সমুদ্রে পতিত হয়। আবার ভূঅভ্যন্তরে প্রবেশ করে অন্তঃপ্রবাহরূপে নদী ও সমুদ্রে জমা হয়। পানির কিছু অংশ ভূপৃষ্টের ভেতরে জমা হয়। পানিপ্রবাহকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-
- পৃষ্ঠপ্রবাহ (Surface Flow)
- অন্তঃপ্রবাহ (Subsurface Flow)
- চুয়ানো (Percolation)
- পরিস্রবণ (Infiltration)
ভূপৃষ্টের ভেতরের পানি পুনরায় প্রস্বেদন, বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় বায়ুতে ফিরে আসে।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- জোয়ার-ভাটার প্রকারভেদ ও প্রভাব (Types & Effects of Tides)
- ডায়রিয়া রোগটি বিপদজনক কেন?
- তাপ প্রদান ও শীতলীকরণের লেখচিত্র (Graphs of Heat Transfer & Cooling)
- তাপমাত্রা কিভাবে প্রস্বেদনকে প্রভাবিত করে?
- পৃথিবীর বাহ্যিক গঠন : পর্বত (External Structure of the Earth : Mountains)
- বায়ু প্রবাহ (Airflow)
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : নিয়ত বায়ু (Types of Airflow : Planetary Winds)
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : সাময়িক বায়ু (Types of Airflow : Temporary Winds)
- বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ : স্থানীয় বায়ু (Types of Airflow : Local Winds)
- বায়ুমন্ডল (Atmosphere)
- বায়ুর তাপ, চাপ ও আদ্রতা (Air heat, Pressure & Humidity)
- বারিমণ্ডল (Hydrosphere)
- বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Rainfall)
- সমুদ্রস্রোত (Sea Tide)
- সমুদ্রস্রোতের প্রভাব ও গুরুত্ব (The effect and importance of Ocean Currents)