ক্রোমোজোম কাকে বলে এটা নিয়ে জানাবো এখন তোমাদের। একটা সম্পূর্ণ DNA কিভাবে তৈরি হয় সেটা তোমরা DNA-এর গঠনে দেখেছো। কিন্তু এই একটা কোষে DNA কিভাবে, কোথায় থাকে সেটা হয়ত অনেকের কাছে ক্লিয়ার না। চলো সেটা নিয়ে এখন জানি।
তোমরা জানো যে DNA-এর গঠন দুইটা সুতা নিয়ে এবং এরা সবসময় পেঁচিয়ে থাকে আমাদের কোষের ভেতর। যদি তুমি একটা DNA-এর প্যাঁচ খোলো তবে সেটা কয়েক মাইল পর্যন্ত লম্বা হবে! কিন্তু তারা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ছোট হয়ে থাকে বলে আমাদের কোষে এরা কয়েক মাইল পর্যন্ত জায়গা দখল করে না। কথা হচ্ছে DNA কিভাবে পেঁচিয়ে ছোট হয়ে থাকে?
ক্রোমোজোম কাকে বলে ও এর গঠন
তোমরা জেনে গেছো যে DNA-এর চারপাশে ফসফেট (-PO4) গ্রুপ থাকে বলে এটি নেগেটিভ (-ve) চার্জ যুক্ত। তাই যখন দুটো DNA অণু এঁকে অপরের কাছে আসে তখন এরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। এজন্য DNA অণু একত্রে পেঁচিয়ে থাকা সত্যি খুব কঠিন। কিন্তু তারপরেও DNA পেঁচিয়ে থাকেই। তাকে পেঁচিয়ে থাকার জন্য একটা সাপোর্ট দেয় আমাদের কোষ। আর সেই সাপোর্টের নাম হচ্ছে হিস্টোন (Histone) প্রোটিন।
হিস্টোনের চার্জ হচ্ছে পজেটিভ (+ve). তাই নেগেটিভ DNA পজেটিভ চার্জযুক্ত হিস্টোনের চারপাশে খুব সুন্দর করে পেঁচিয়ে থাকতে পারে। এই অবস্থাকে নিউক্লিওসোম (Nucleosome) বলি আমরা।
মানে–>> হিস্টোন + DNA = নিউক্লিওসোম
এভাবে কয়েক মাইল লম্বা DNA-কে হিস্টোনের চারপাশে পেঁচিয়ে ছোট করে রাখা যায়।
মজার কথা হচ্ছে আমাদের কোষে হিস্টোন একটা-দুইটা থাকে না, অনেক অনেক অনেকগুলো থাকে। প্রতিটা হিস্টোনে DNA এভাবে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে থাকে যাদের নিউক্লিওসোম বলেছিলাম আমরা। আবার এসব নিউক্লিওসোম গুলো নিজেরা নিজেরা পেঁচিয়ে লম্বা একটা চিকণ সুতা বানায়। নিউক্লিওসোমের এই সুতা আবার নিজেদের উপর পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে মোটা সুতা তৈরি করে। এই মোটা সুতাকে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম (nuclear reticulum) বলি আমরা।
ক্রোমোজোম আর ডিএনএ কি একই জিনিস
ক্রোমোজোম কাকে বলে সেটা নিয়ে হয়ত কিছুটা ধারণা পেয়েছো তোমরা। তোমরা খেয়াল করেছো কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে কিছু হিজিবিজি সুতার মত পেঁচানো জিনিস দেখা যায়? এই সুতাগুলোই হচ্ছে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম। এবার চিন্তা করে দেখো DNA আসলে কোথায় থাকে!
একটা নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম সুতার প্যাঁচ খুলতে খুলতে তুমি নিউক্লিওসোম সুতা পাবে, নিউক্লিওসোম সুতা থেকে হিস্টোন পাবে, সেই হিস্টোনকে ঘিরে পেঁচিয়ে থাকা DNA-কে অবশেষে পাবে।
তাহলে বুঝতে পেরেছো যে তোমার শরীরের সবগুলো DNA তোমার কোষের নিউক্লিয়াসের সুতাতে মানে নিউক্লিয়ার রেটিকুলামে থাকে। নিউক্লিয়ার রেটিকুলামকে সাধারণ অবস্থায় মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখা যায়। তোমাদের প্রশ্ন জাগতে পারে DNA তো ক্রোমোসোমে থাকে কিন্তু নিউক্লিয়ার রেটিকুলামে আসলো কিভাবে! হ্যাঁ, এখানে একটা কাহিনী আছে।
ক্রোমোজোমের কাহিনী
তোমরা জানো যে ক্রোমোসোম কোষের সাধারণ অবস্থায় দেখা যায় না। যখন কোষ বিভাজন ঘটে তখন মেটাফেজ পর্যায়ে রং প্রয়োগ করলে সেই রং-কে ক্রোমোসোম শুষে নেয় এবং ঠিক তখন আমরা ক্রোমোসোমকে দেখতে পাই, এছাড়া আর কোনোখানে দেখি না এটাকে। কিন্তু জানো এই ক্রোমোসোমটা আসলে কি কিংবা কোথা থেকে আসে?
কাজেই ক্রোমোজোম কাকে বলে এটার উত্তর অনেকটা ক্লিয়ার হয়ে গেছে তোমাদের। ক্রোমোসোম তৈরি হয় নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম থেকেই। কোষ বিভাজনের সময় নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম জায়গায় জায়গায় ভেঙ্গে গিয়ে ছোট ছোট অনেকগুলো মোটা আর খাটো টুকরা বানায়। এই মোটা এবং খাটো টুকরাগুলোই হচ্ছে ক্রোমোসোম। মানূষের কোষ বিভাজন হলে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম ৪৬ টা টুকরাতে পরিনত হয়, মানে মানুষের ক্রোমোসোম হচ্ছে ৪৬ টা বা ২৩ জোড়া।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-