নাগরিক কাকে বলে এটা বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে মানুষ সম্পর্কে। মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বাস করে। রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিক ও নাগরিকতা নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। সুনাগরিকের ওপর রাষ্ট্রের সাফল্য নির্ভরশীল। সেজন্য নাগরিকতা সম্পর্কে জানা সকলের জন্য অপরিহার্য।
নাগরিক কাকে বলে
শব্দগত অর্থে নাগরিক বলতে নগরের অধিবাসী বুঝায়। প্রাচীন গ্রিসে নগর নিয়ে গঠিত নগর-রাষ্ট্রের শাসনকার্যে যারা সরাসরি জড়িত থাকত, তাদের নাগরিক বলা হত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা গ্রিক মনীষী এরিস্টটল বলেন, “সেই ব্যক্তিই নাগরিক যে নগর-রাষ্ট্রের শাসনকার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।” নাগরিকতা সম্পর্কে বর্তমান ধারণা এবং প্রাচীন গ্রিক ধারণায় অনেক পার্থক্য বিদ্যমান।
আধুনিক রাষ্ট্রের বিপুল জনসমষ্টি সরাসরি শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করতে পারে না। তাই বর্তমানকালে নাগরিকের সংজ্ঞাও বদলে গেছে। নাগরিক কাকে বলে এটা জানানোর জন্য অধ্যাপক গেটেলের (Gettel) মতে, “নাগরিক হচ্ছে রাজনৈতিক সমাজের সে-সব সদস্য, যারা উক্ত সমাজের প্রতি কর্তব্য পালনে বাধ্য থাকেন এবং সে সমাজ থেকে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা লাভের অধিকারী হন।” অধ্যাপক লাস্কি (Laski) নাগরিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে, তাকেই নাগরিক বলা হয়।” এ সব মতের প্রেক্ষিতে নাগরিকের সংজ্ঞা আমরা এভাবে দিতে পারি যে রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, রাষ্ট্রের কল্যাণ কামনা করে এবং রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করে তাকেই নাগরিক বলা হয়। আর নাগরিকরা রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রের দেওয়া যে মর্যাদা লাভ করে পৌরনীতিতে তাকেই নাগরিকত্ব বা নাগরিকতা বলে। অর্থাৎ নাগরিকতা হচ্ছে নাগরিকের গুণ বা মর্যাদা।
নাগরিকতা লাভের পদ্ধতি
নাগরিকতা দুইভাবে লাভ করা যায় :
১। জন্মসূত্রে ও ২। অনুমোদনসূত্রে।
জন্মসূত্রে নাগরিক যারা জন্মের অধিকারে নাগরিকত্ব অর্জন করে, তাদের জন্মসূত্রে নাগরিক বলা হয়।
অনুমোদনসূত্রে নাগরিক : যারা বিভিন্ন রাষ্ট্রের নানাবিধ শর্ত পূরণ করে আইনের সাহায্যে অনুমোদন নিয়ে নাগরিকত্ব অর্জন করে তাদের অনুমোদনসূত্রে নাগরিক বলা হয়।
জন্মসূত্রে নাগরিক : জন্মসূত্রে নাগরিকতা লাভের আবার দুইটি পদ্ধতি আছে। একটি জন্মনীতি, অপরটি জন্মস্থান নীতি। জন্মনীতি : জন্মনীতি অনুসারে সাধারণত পিতা-মাতা যে দেশের নাগরিক, সন্তানও সে দেশের নাগরিক হবে। এ ক্ষেত্রে পিতা-মাতার নাগরিকতা সন্তানের নাগরিকতা নির্ধারণ করে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এই নীতি অনুসরণ করে।
জন্মস্থান নীতি : এ নীতি অনুসারে যে যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করে, সে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক বলে গণ্য হয়। এ ক্ষেত্রে জন্মের স্থান নাগরিকতা নির্ধারণ করে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র জন্মনীতি ও জন্মস্থান নীতি – এ উভয় নীতি অনুসরণ করে।
সাধারণভাবে জন্মসূত্রে নাগরিক ও অনুমোদনসূত্রে নাগরিকের মধ্যে কোনো বৈষম্য করা হয় না। আবার কোনো কোনো দেশে কিছু বৈষম্য দেখা যায় । যেমন- আমেরিকাতে অনুমোদনসূত্রে নাগরিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে পারে না। তাই নাগরিক কাকে বলে বলতে আমরা মূলত একটা দেশে বাস করা মানুষদেরকে বুঝবো।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-