চাহিদা কাকে বলে

চাহিদা কাকে বলে সেটা নিয়ে জানবো এখন। সাধারণ অর্থে চাহিদা বলতে কোন জিনিস পাবার আকাঙ্ক্ষাকে বোঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে চাহিদা হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। শর্তগুলো হল (১) আকাঙ্ক্ষা (২) সামর্থ্য (৩) অর্থ ব্যয়ের ইচ্ছা। সুতরাং কোনো জিনিস পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, সামর্থ্য ও জিনিসটি ক্রয় করার জন্য অর্থ বায়ের ইচ্ছাকে অর্থনীতির ভাষায় চাহিদা বলে। একজন ভিখারির গাড়ি কেনার চাহিদা থাকতে পারে না, যেহেতু তার ক্রয়ক্ষমতা নেই; তেমনি একজন কৃপণের ক্রয়ক্ষমতা থাকলেও অর্থ ব্যয় করে গাড়ি কেনার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা নেই, তাই সেটা চাহিদা নয়।

চাহিদা নিয়ে আরো কিছু জানার জন্য অর্থনীতির কিছু মৌলিক ধারণা নিয়ে জানতে হবে। অন্যান্য বিজ্ঞানের ন্যায় অর্থনীতিরও কতকগুলো মৌলিক ধারণা রয়েছে। অর্থনীতির সুষ্ঠু আলোচনা ও বিশ্লেষণের জন্য এই মৌলিক ধারণা সবন্ধে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। নিচে অর্থনীতির কিছু মৌলিক ধারণার মধ্যে অভাব অন্যতম।

অর্থনীতিতে অভাব বলতে যেকোনো দ্রব্যসামগ্রী পাওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষাকে বোঝায়। এই দ্রব্যসামগ্রী বস্তুগত বা অবস্তুগত দুই প্রকারের হতে পারে। মানুষের সব অর্থনৈতিক কাজের মূলে রয়েছে অভাব। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন অভাবের সম্মুখীন হয় এবং এসব অভাব পূরণের জন্যই সে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। মানুষের যদি অভাব না থাকত তবে অর্থনৈতিক কাজের প্রয়োজন হত না। তাই অভাব সকল অর্থনৈতিক কার্যাবলির উৎস।

চাহিদা কাকে বলে ও অভাবের শ্রেণীবিভাগ

চাহিদা কাকে বলে এটা এখন আমরা জেনে ফেলেছি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদার কারণ অভাব। এই অভাবসমূহকে মোটামুটি তিনটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা- ১. প্রয়োজনীয় অভাব, ২. আরামপ্রদ অভাব এবং ৩. বিলাসজাত অভাব।

১. প্রয়োজনীয় অভাব : মানুষের জীবনধারণের জন্য যে সকল দ্রব্য অপরিহার্য সে সকল দ্রব্যের অভাবকে প্রয়োজনীয় অভাব বলা হয়। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি। প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (ক) জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অভাব যেমন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, (খ) দক্ষতার জন্য প্রয়োজনীয় অভাব যেমন, পুষ্টিকর খাদ্য, ভাল বাসস্থান ইত্যাদি এবং (গ) অভ্যাসজনিত প্রয়োজনীয় অভাব যেমন, চা, পান, তামাক ইত্যাদির অভ্যাস।

২. আরামপ্রদ অভাব : কেবলমাত্র জীবন ধারণের জন্য নয় বরং জীবনের মান উন্নয়ন এবং আরামদায়ক জীবনযাপনের জন্য যেসব অভাব বোধ হয় তাকে আরামদায়ক দ্রব্যের অভাব বলে। যেমন- সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার, আরামদায়ক পোশাক, সুদৃশ্য বাসস্থান, উচ্চতর শিক্ষা এবং আরামদায়ক গাড়ি ইত্যাদি।

চাহিদা কাকে বলে

৩. বিলাসজাত অভাব : যেসব দ্রব্য মানুষ আত্মপ্রসাদ লাভ, মর্যাদা বৃদ্ধি বা জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপন করতে ব্যবহার করে সে সব দ্রব্যের অভাবকে বিলাসজাত অভাব বলা হয়। যেমন- প্রাসাদতুল্য বাড়ি, মূল্যবান অলংকার, মূল্যবান গাড়ি বা পোশাক, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ইত্যাদি।

অর্থনীতির আরো একটা মৌলিক বিষয় হচ্ছে দ্রব্য। সাধারণত ‘দ্রব্য’ বলতে কোন বস্তুগত সম্পদকে বোঝায়। তবে যেসব বস্তুর উপযোগ আছে অর্থাৎ যে বস্তু মানুষের অভাব পূরণ করতে সক্ষম অর্থনীতির পরিভাষায় তাদেরকে ‘দ্রব্য’ বলা হয়। অর্থনীতিতে দ্রব্য বলতে বস্তুগত এবং অবস্তুগত উভয় প্রকার বস্তুকে বুঝায়। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি কভুগত এবং নার্সের পরিচর্যা, গায়কের সুকণ্ঠ ইত্যাদি অবস্তুগত দ্রব্যকে সেবা বলা হয়। দ্রব্যের বৈশিষ্ট্য হল তার উপযোগ।

দ্রব্যের শ্রেণীবিভাগ

দ্রব্যকে নিম্নরূপ কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে।

১. অবাধলভ্য দ্রব্য ও অর্থনৈতিক দ্রব্য : যে সমস্ত দ্রব্য বিনা পরিশ্রম ও বিনামূল্যে পাওয়া যায় তাদেরকে ‘অবাধ লভ্য দ্রব্য’ বলা হয়। যেমন- আলো, বাতাস, নদীর পানি ইত্যাদি। অবাধলভ্য দ্রব্যের যোগান চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। অপরদিকে যে সমস্ত দ্রব্য পাওয়ার জন্য মানুষকে পরিশ্রম করতে হয়, মূল্য প্রদান করতে হয়, তাকে অর্থনৈতিক দ্রব্য বলা হয়। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বই, চেয়ার ইত্যাদি। অর্থনৈতিক দ্রব্যের যোগান চাহিদার তুলনায় কম হয়।

২. বস্তুগত দ্রব্য ও অবস্তুগত দ্রব্য : যে সমস্ত দ্রব্য দেখা যায় এবং স্পর্শ করা যায় তাকে বস্তুগত দ্রব্য বলা হয়। যেমন- বই, কলম, চেয়ার, টেবিল। পক্ষান্তরে যে সমস্ত দ্রব্য দেখা যায় না বা স্পর্শ করা যায় না তাদেরকে অবস্তুগত দ্রব্য বলা হয়। যেমন- গায়কের সুকন্ঠ, নার্সের সেবা, ব্যবসায়ের সুনাম ইত্যাদি। সাধারণত বস্তুগত দ্রব্যকে সামগ্রী এবং অবস্থগত দ্রব্যকে সেবা বলে।

৩. ভোগ্য দ্রব্য ও উৎপাদক দ্রব্য : অভাব মেটাবার জন্য যে সমস্ত দ্রব্য সরাসরিভাবে ভোগ করা যায় তাকে ভোগ্য দ্রব্য বলে। যেমন, খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যেসব দ্রব্য প্রত্যক্ষভাবে ভোগ করা যায় না কিন্তু ভোগ্য দ্রব্য উৎপাদনে সাহায্য করে তাকে উৎপাদক দ্রব্য বলা হয়। যেমন, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ইত্যাদি।

৪. ব্যক্তিগত দ্রব্য ও সরকারি দ্রব্য : মালিকানার ভিত্তিতে দ্রব্যকে ব্যক্তিগত দ্রব্য ও সরকারি দ্রব্য এ দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যে সমস্ত দ্রব্য ব্যক্তির মালিকানায় থাকে তাকে ব্যক্তিগত দ্রব্য বলে। যথা, নিজস্ব ঘর-বাড়ি, জামা-কাপড় ইত্যাদি। আর যে সমস্ত দ্রব্য সরকারের মালিকানাধীন থাকে এবং যা সমাজের সবাই ভোগ করতে পারে তাকে সরকারি দ্রব্য বলে। যেমন, রাস্তা-ঘাট, পার্ক, রেলপথ ইত্যাদি। এই দ্রব্য গুলোর জন্য আমাদের চাহিদার উপস্থিতি ঘটে। তাই চাহিদা কাকে বলে বোঝার জন্য এই দ্রব্য গুলো নিয়ে জানাটা অনেক জরুরি।